গোলাপ কলি

গোলাপ কলি
গোলাপ বাগে গোলাপ কলি
নিহিত অশেষ সম্ভাবনা,
ফোটার আগে নষ্ট করলে-
আরজিকরের দুর্ঘটনা।

নষ্ট করল গোলাপ কলি
প্রস্ফুটনের আগেই যারা,
তাদের সম্ভাবনার পায়ে
মারছে কুড়ুল যেন তারা।

চোটের ফলে খোঁড়ায় তারা
সবাই তাদের ছোঁড়ে থুতু,
কয়েদখানা আদর করে
রাখছে সেথায় অগ্নিকেতু।

গোলাপ কলি ফুটল না গো
পাপড়ি মেলা হল না তার,
সম্ভাবনার হত্যাকারীর
গর্দান ধরুক সুবিচার।

ভবিষ্যতের গোলাপ ফুল
আলো করে থাক বাগিচায়,
মিষ্টি সুবাসে বাহারি রূপে
মত্ত বায়ু বইবে সেথায়।

যখন ডাকবে

যখন ডাকবে
যখন ডাকবে মুখের কথা মনের কথা এক করে আমি ঠিক চলে আসব তোমার কাছে।
এতে তুমি একা ভালো থাকবে নির্জন সবুজ প্রান্তরে।
তখন ঘাসের শিশির ভিজিয়ে দেবে ভাবাবেগের পায়ের পাতা,
রবির আলো মাখাবে গায়ে কাজের উদ্দীপনা।
গাছের পাতারা বাতাসের সুরে বাজাবে যে একতারা,
রাতের আকাশ আসবে নিকটে।
চাঁদ-তারাদের ভাষা পারবে বুঝতে,
যেদিকে তাকাবে খুঁজে পাবে কবিতার উপাদান।
তুমি কি তখন ঘুমোতে পারবে নিরুদ্বেগে
এই সমাজে জনসমুদ্রে?
বানভাসি মানুষের দুরবস্থা, আরজিকরের
দুর্ঘটনা তোমাকে তো ঘুমোতে দেবে না।
যারা আজ এখনো ঘুমোচ্ছে তারা যদি ওঠে জেগে,
অন্তর দিয়ে ডাকে আমায় তোমার মতন, সূর্য উদয় হবে পুব আকাশে সম্মিলিত শুভবোধের আলো ছড়িয়ে। থাকবে সমাজ সুস্থ।
আমি শুভবোধ।

মানবিক করে দাও

মানবিক করে দাও
ভগবান তুমি দুটো পা দিয়েছ–
সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে,
পেছনে পালাবার জন্যে কি?

ভগবান তুমি শিরদাঁড়া দিয়েছ–
সোজা রেখে হাঁটার জন্যে,
সরীসৃপের মতো হাঁটার জন্যে কি?

ভগবান তুমি হৃদয় দিয়েছ–
সংবেদনশীলতা রাখার জন্যে,
পাথর ভরে রাখার জন্যে কি?

ভগবান তুমি তো মন দিয়েছ–
জাগ্রত রাখার জন্যে, ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্যে নয়।

ভগবান তুমি তো চোখ দিয়েছ–
তোমার সৃষ্টিকে শুদ্ধ দৃষ্টিতে দেখতে,
মন্দ দৃষ্টিতে দেখার জন্যে নয়।

ভগবান তুমি তো মুখ দিয়েছ–
ঠিক সময়ে ঠিক কথা বলতে, কাউকে কটু কথা বলতে নয়।

ভগবান তুমি তো দুটো হাত দিয়েছ–
ভালো কাজের জন্যে, মন্দ কাজের জন্যে নয়।

চারদিকে এই নৃশংসতা রক্তপাত,
খুন–ধর্ষণ দেখিয়ে দিচ্ছে তোমার বানানো মনের কেন্দ্রীয় সফটওয়ার আপডেটেড হয়নি।

এবার তো আপডেট করে একটু মানবিক করে দাও

আমায় জড়িয়ে ধরো

আমায় জড়িয়ে ধরো
আমায় ভালবাসতে এগিয়ে আসে কজনে
আমার গুরুত্ব বোঝেন কত সুজনে?
যা ভালো ঘটেছে ঘটেছে আমার জন্য
যা মন্দ ঘটেছে ঘটেছে তোমার জন্য—
এই ভাবনা কি ভালোবাসা আনে
ভেজা দেশলাই কাঠি জ্বলে ঘর্ষণে?
শাসন ডান্ডা থাকলে আমায় নিয়ে চলতে,
না থাকলে আমার সঙ্গটা এড়িয়ে যে যেতে।
এড়িয়ে চলা এমন ব্যক্তি আছে পরিবারে সমাজে-
মুখের বুলি সর্বস্ব অনীহা সকল কাজে।
এমন অনীহা এসে জীবন কঠিন করে,
যেটা চাই সেটা যেন নীরবেতে দূরে সরে।
কত ফুল ঝরে যায় স্বপ্নের বাগ থেকে,
আমায় জড়িয়ে ধরো দায়িত্ব বলে ডেকে।

আসবে কবে

আসবে কবে
তুমি যদি আসতে নেমে এই মাটিতে,
শুভবোধের নির্যাস ভরা পাত্র হাতে-
এক এক ফোঁটা দিতে তুমি প্রতি মুখে,
এক নিমেষে বদলে যেত এই রুক্ষ ধরা –
কত কারুকাজ চোখে পড়ত তার শাড়িতে।
বদলেই যেত আমার সবার কাজের পৃথিবী,
বদলে যেত আমার সবার আঁধার আকাশ-
সেখানে উঠত হাস্যরতা চৈতালি চন্দ্রিমা।
সেরে উঠত মনের দুরারোগ্য ক্ষত,
বিকৃত মানসিকতা জ্বলে হত ছাই।
হৃদয়ের বাগানটা আবার সেজে উঠত-
শরতের শিউলিতে আর রাঙা গোলাপে।
সুগন্ধি সহৃদয় বাতাসে ঘুরে বেড়াতে পারত নির্ভয়ারা অশেষ নির্ভয়ে।
এই অন্তিম চাওয়া পূর্ণ করতে আসবে কবে?

শুধু ভালবাসতে চাই

শুধু ভালবাসতে চাই
তোমাকে চাই এ-দুঃসময়ে-
কারণ তুমি যে সুসময় পাওয়ার পথটা বাতলে দাও।
বিফল হলে তোমাকে চাই-
কারণ তুমি যে উৎসাহ দাও সফলতা-চুড়োয় পৌঁছোতে।
তোমাকে চাই ক্লান্তিতে-
কারণ তুমি শিখিয়ে দাও প্রাণবন্ত থাকার মূলমন্ত্রটা।
তোমাকে চাই দুঃখে-
কারণ তুমি খুঁজে দাও সুখ দুঃখের মাঝে।
তোমাকে চাই অসুস্থ হলে-
কারন তোমার হাত ধাত্রীবিদ্যার জাদু দিয়ে নিমেষে আমাকে সুস্থ করে তোলে।
তুমি কাছে এলে পরাজয়ের গ্লানি ভুলে যাই-
কারণ তুমি আমাকে পরের বারে জয়ের জন্য তৈরি করে দাও।
আমি আকাশের চাঁদ চাই না,
তোমাকে ছুঁয়ে বেঁচে থাকতে চাই।
আমি সুইজারল্যান্ড যেতে চাই না,
আমি দেশের মাটিতে ভালোবাসার স্বর্গ বানাতে চাই।
তোমাকে শুধু ভালবাসতে চাই

জেলে ভরে দিয়ো

জেলে ভরে দিয়ো
যেদিন রঙিন প্রজাপতি, রঙিন কুসুম শত্রু হবে,
যেদিন গান-গাওয়া পাখি রজনিগন্ধা ভালো লাগবে না-
সেদিন আমাকে জেলে ভরে দিয়ো
যেদিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি নারীকে ঘৃণা ছুঁড়ে মারব,
যেদিন ঝরনার উচ্ছ্বাস আর রাতজাগা চাঁদ দেখে হিংস্র হয়ে উঠব-
সেদিন আমাকে জেলে ভরে দিয়ো
যেদিন শিশুর আদর মায়ের স্নেহ আমার চোখে জ্বালা ধরাবে,
ভালোবাসা আর শুভবোধকে যেদিন সাগরে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেব-
সেদিন আমাকে জেলে ভরে দিয়ো
উষার নরম আলো যেদিন দেবে না উৎসাহ ,
যেদিন আঁধার রাজ্যে প্রবেশ করব,
যেদিন মানবতার পরাজয় দেখে উল্লাস করব-
সেদিন আমাকে জেলে ভরে দিয়ো
আমার মাথাটা যেদিন দম্ভ বিগড়ে দেবে,
সত্যিকারের বন্ধুকে শত্রু ভেবে নেব,
হৃদয়ে শুভ আবেগের জোয়ার ভাটা বন্ধ হয়ে যাবে,
সৌন্দর্য শিল্পকলার পায়ে বেড়ি পরাব-
সেদিন আমাকে জেলে ভরে দিয়ো

আমি বানভাসি

আমি বানভাসি
বন্যার কারণ লেখা দড়িটাকে টানাটানি চলছে-
মনে হয় যেন টাগ অফ ওয়ার চলছে।
আমার ঘর থেকেও ঘর নেই,
চতুর্দিক জলময় তবু পেয় জল নেই,
পেট ভরাবার খাদ্য নেই।
ভোটের অধিকার তো আছে,
জল-খাদ্য-আশ্রয়ের অধিকার নেই।
কেউ আবার জলে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলছে,
কেউ আমার দুচোখের করুণ আর্তি দেখেও আমায় কিছু বলতে বলছে।
তোমরা যা করবে করো কোনো অসুবিধে নেই, শুধু একটাই আমার চাওয়া যা আমি চিৎকার করে বলছি-
খাবার জল দাও, খাদ্য দাও,আশ্রয় দাও।
জানি না কখন কার কানে এই চিৎকার প্রবেশ করবে,
জানি না কবে এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পাব চিরতরে?
আমি বানভাসি

 

হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকছে

হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকছে
মনের দেয়ালে শত ছিদ্র-
আদিম যুগ তাই ঢুকে পড়েছে।
ভাবনার গায়ে পোস্টার লাগানো
তাতে আদিমতা সাক্ষর করেছে।
সভ্যতার চাকায় লেগেছে ধর্ষণ-খুন-হিংসার রক্ত।
তির ছুঁড়ে- চলছে শিকার,
হরেক তিরের ফলায় হরেক বিষ।
এই বিদ্যায় পারদর্শিতা বেড়েই চলেছে
পোশাক পরা সভ্যতার হরেক কাজে।
আসল বিদ্যা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে দেয়ালে
মাথা ঠুকেই মরছে,
কখনো রাস্তায় বসে অনশন করছে চাকরির আশায়,
ডেলিভারি বয় হয়ে কখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে,
কখনো প্রতিবাদী মিছিলে হাঁটছে রাস্তায়।
কখনো হতাশ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে।
আদিম বিদ্যায় পারদর্শিতা হঠাৎ যেন শিরদাঁড়াকে মাটির সমান্তরাল করে দিয়েছে।
তাই কি টাই পরা মানুষগুলো আজ হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকছে আবার প্রাচীন গুহায়?

বানভাসি লোকগুলো  

বানভাসি লোকগুলো  

শরতের উপাখ্যান গেল জলে ডুবে
বিচারের আশা-দীপ এই বুঝি নেভে!
ঘর ভাসে পথ ভাসে আর ভাসে মন
দোষের তির নিক্ষেপে ভীত ত্রাণ-ক্ষণ।
বেশি বকা কম কাজ সময়ের রীতি
বানে ভেসে ভুলে প্রাণ সব পরিমিতি।
প্রাণ ভোলে উৎসব, বলে ত্রাণ চাই
জল খাদ্য ও আশ্রয় কোথা থেকে পাই।
ফিবছর দোষারোপ ফিবছর ভাসা,
বেনোজলে ভেসে গেছে কাশ দেখা আশা।
ঢেউ তোলা কাশ বন ঢেউ দেখে জলে,
বলে মাগো এত দুঃখ মানুষকে দিলে?
বানভাসি লোকগুলো কেন পড়ে ফাঁদে,
তার দায় কে বা নেবে কার প্রাণ কাঁদে?
কে বানাল চক্রব্যূহ কারা ফেঁসে মরে,
সমব্যথী কে আছে গো এসে হাত ধরে?