অন্তর দিয়ে

অন্তর দিয়ে
অন্তর থেকে বেরোয় যে-কথা
অবাধে তারা ঢোকে মনে,
কথা বলার উদ্দেশ্যটা
সফল হবেই সেই ক্ষণে।

অন্তর দিয়ে শাসন চালালে
সুশাসন আসে চিরদিন,
অন্যথা হলে জনসাধারণ
অচিরেই দেখে দুর্দিন।

শব্দেরা যদি জন্মায় হৃদে
পাঠকের মন লেখা কাড়ে,
সেই লেখকের লেখাগুলো বুঝি
সকল মানুষে বেশি পড়ে।

প্রেম যদি আসে অন্তর থেকে
প্রেমিক হৃদয়ে দোলা লাগে,
হৃদয় পদ্ম সেই দোলাতেই
গাঢ় ঘুম থেকে যেন জাগে।

সব কাজ হোক অন্তর দিয়ে
গলিগুলো হোক রাজপথ,
ধরা হোক আজ সুন্দরতর
সেথা চলুক-না মানবতা রথ।

ঝমঝমিয়ে বর্ষা এসো

ঝমঝমিয়ে বর্ষা এসো
বিশ্রামে আজ সকল ঋতু
দাপট দেখায় খরা,
ঝমঝমিয়ে বর্ষা এসো
বাঁচাও মনের ধরা।

মেঘকে বলো আনতে ধরে
হারানো সব সংবেদ,
মরু বুকে বৃষ্টি ঝরাক
দয়া মায়ার উদ্ভেদ।

মরা নদী কাঁদছে বসে
বর্ষা এসো তুমি,
দাও না এনে তপ্ত বক্ষে
সমব্যথার ঊর্মি।

এমন খরায় বুকের বকুল
ঝরায় না আর কুসুম,
ঝরা–বকুল বৃষ্টি এনো
এনো বর্ষা মরসুম।

শুভবোধের বৃষ্টি এনো
এনো বকুল গন্ধ,
দুঃসময়ে এনো বৃষ্টি–
ভরসা করার কন্ধ।

নতুন পথ ডাকছে

নতুন পথ ডাকছে
নতুন পথ ডাকছে ওই
দেখার চোখে বদল হোক,
আপাত ভাঙা পথের বুকে
লুকিয়ে আছে আগামী শ্লোক।

শ্লোকের ভাষা ন্যায়ের ভাষা
ন্যায়ের তরে জীবনপাত,
গর্জে ওঠা হৃদয় রোখে
অবাঞ্ছিত অশ্রুপাত।

যাত্রা শুরুর দিনগুলোতে
পদক্ষেপে সতর্কতা,
আচরণের কেন্দ্রে থাক
প্রাচীন সেই মানবিকতা।

এমন রীতি সকল স্তরে
থাকুক লাগু চিরটা কাল,
ন্যায্য কাজে সমাজ সাজে
সব পাপের অন্তকাল।

নতুন পথ ডাকছে ওই
পথের ধারে ন্যায়-কেতন,
মানবতার নিয়ন্ত্রণে
চলছে শুভ আবর্তন।

ভোরের আলো

ভোরের আলো
বন্ধুরতার দেখা পেলাম পথে
মসৃণতা আসার শুধু বাকি,
থেমে গেলে বাতাস মুচকি হাসে
ক্লান্তি বলে কেন নিচ্ছ ঝুঁকি।

একটু গেলেই মসৃণতার মজা
চলার রসদ সেথায় রাখা আছে,
স্বাদটা পেলে উৎসাহ যায় বেড়ে
উদাস বাউল মনটা তখন নাচে।

পথের মাঝে রাতের আঁধার দেখে
ভয়টা যখন শূন্যে ছড়ায় শাখা,
সামনে যাওয়া বন্ধ করলে ভুলি
প্রভাত আলোর সাজি সামনে রাখা।

খর রোদে কষ্ট যখন বাড়ে
বুঝি সামনে বারিদ আকাশ বুকে,
না এগোলে বনি মস্ত বোকা
পথ চলাটা হয় নাগো আর সুখে।

তাই এখন আর ভবি নাগো বেশি
আসুক দুঃখ ফোটাক কাঁটা পায়ে,
ভোরের আলো ছড়ায় পথে কুসুম
আরাম দিতে পায়ের পাতার ঘায়ে।

মিথ্যে ভূগোল

মিথ্যে ভূগোল
মিথ্যে ভূগোল পড়ে কী লাভ?
মিথ্যে জলবায়ু বিস্বাদ লাগে,
মিথ্যে সম্পর্কে জড়াব না আর, কেন-না
মুখোশের আড়ালে সত্তা অজানা।

ভুল পথে চলে গেছি আজ
নাজেহাল হয়েছি যে কত,
দিঘি-জল মিষ্টি হবে ভেবে
নোনা জলে হয়েছি বিব্রত।

সম্পর্কটা মাকড়সার জাল ছিল যে
পারিনি আগে বুঝতে,
প্রেমের ছলে ছোবল খেয়েছি,
নাকাল হলাম যখন গেলাম
আসল মুখ খুঁজতে।

তোমার ভালবাসা আমায়

তোমার ভালবাসা আমায়
গেঁয়ো জেনেও তোমার গঙ্গা
টানল আমায় কাছে,
মলিনতা সব শুষে নিল-
আমার আমি নতুন করে বাঁচে।

ক্লান্ত জেনে তোমার বিটপী
বিছিয়েছিল নরম ছায়া,
বিশ্রামেতে উৎসাহ পেল
আমার অন্তর কায়া।

মানসিকতায় বন্দি দেখে
আকাশ মেললে ধরে,
তাইতো আমার মনের পাখি
মুক্তির নেশায় ওড়ে।

আমার বাগের আগাছারা
তোমার ভয়ে দিল যে প্রাণ,
তোমার প্রয়াস ভালবাসা
গড়ল এ–গোলাপ বাগান।

তোমার ভালবাসা আমায়
বদলেই দিল মন্ত্রবলে,
আমার দিঘি সারাবছর
ভরা থাকে প্রেম–জলে।

নতুন প্রভাত

নতুন প্রভাত
এক সমুদ্র আবেগ নিয়ে
আসছে ধেয়ে নয়া সকাল,
আছড়ে পড়ার অপেক্ষাতে
আসীন জীবন এতকাল।

তার তরঙ্গে প্রবল বল–
প্রাচীন আঁধার শুষে নেবে,
জলোচ্ছ্বাসে খড়কুটো পাপ
সাগর তলে ডুবিয়ে দেবে।

বেলাভূমির ক্লেদের মুক্তি
ফিরিয়ে দেবে পুরোনো জেল্লা,
নতুন প্রভাত প্রেমিক স্পর্শ
গড়ে তুলবে স্বপ্নের কেল্লা।

হতাশা সেথা লুকায় মুখ
স্বপ্ন দেখার নেইকো মানা,
আলোর পাখিরা নিত্য ওড়ে
নিয়ে শত সাফল্য ঠিকানা।

সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ভালোবাসা
সেই গড়েতে নিশ্চিন্তে থাকে,
দ্বার রক্ষায় চেতনা জেগে–
হিংসা ঘৃণা বড় দুর্বিপাকে।

মুখোশগুলোর ঢোকা মানা
অবাধ শুদ্ধ আলো–হাওয়া,
গড়ের বাগে সহস্র ফল
মিটিয়ে দেবে সব চাওয়া।

আর কবে তুই

আর কবে তুই
উৎসবেতে উৎসাহ নেই
আগমনি বেসুর,
কাশ দোলে না মন দোলে না
প্রফুল্ল তাই অসুর?
বানের তোড়ে বাঁধ ভেঙেছে
গেছে খুশি ভেসে,
ডাক্তাররা আজ নিগৃহীত
মা আজ তুই কোন দেশে?
অভয়ারা নির্যাতিত
তবুও তুই পাথর,
প্রতিবাদের মন্ত্র শত
পাথর তবু নিথর?
বানভাসিদের আর্তি বুঝি
পৌঁছোয় নি তোর কানে,
নারী–সম্মান লুণ্ঠিত আজ
বুঝিস না কি মানে?
আর কবে তুই ধরবি আয়ুধ
করবি অসুর বিনাশ,
আর কবে তোর ন্যায়–পাখিটা
দেখবে মুক্তির আকাশ?

প্রেমের অংশীদার

প্রেমের অংশীদার
সম্পর্কের অর্থ বুঝতে গিয়ে
অর্থের সঙ্গে সর্ম্পক পাতালে,
তাই আমি ভয় পাই আজ
কেউ আমায় ভালোবাসলে।

চেয়েছিলাম তোমার সঙ্গে
বৃক্ষ–মাটির সম্পর্ক–
লেনদেনহীন গভীরতা,
দেখলাম তুমি শুধুই কষলে অঙ্ক।

চেয়েছিলাম তোমার সঙ্গে
সম্পর্ক সমতল–নদীর
সবুজ হল না দুই পাড়
স্বার্থের জলে ভাসালে দুই তীর।

অঙ্ক কষায় হবে যে আজ কাঁচা
শর্ত স্বার্থ ছলনা নেই যার–
তাকেই খুঁজছি সারাদিনরাত,
সে হবে আমার প্রেমের অংশীদার

স্বার্থ শুধু খুঁজি

স্বার্থ শুধু খুঁজি
মেয়ের কথা ফুলের কথা যাচ্ছি কেন ভুলে?
মায়ের কথা নদীর কথা যাচ্ছি বুঝি ভুলে।
দায়ের কথা সেবার কথা কথার কথা বুঝি?
লক্ষ্য আমার স্থির আছে ঠিক স্বার্থ শুধু খুঁজি
দেওয়া কথা রাখতে ভুলি বন্ধু তবু বলি,
অপছন্দের দৃশ্য দেখে চোখে বাঁধি ঠুলি।
মানবতা ফ্রাইং প্যানে সমব্যথা মুখে–
ব্যবসায়ী মন অর্থ খোঁজে মরুক না কেউ দুঃখে।
অহংকারের কলম আমার দুরন্ত তার গতি–
থামাবে কে থামাবে কে দেবে কে আজ যতি?
দিয়েছি পাশ কত শত তাইতো বুঝি মর্ম,
বেকারত্ব ভিক্ষা করে আমি পরি বর্ম।
অশ্রুজলের কারণ খুঁজতে নেই যে হাতে সময়,
অবাক করা ক্ষোভের বন্যা হল কখন উদয়?