সুখের সৌরভ

সুখের সৌরভ
অনেক সোনা অনেক অর্থ ছুঁয়েছি শুঁকেছি
অনেক যশের দেহ বেঁধেছি আশ্লেষে,
সুখের সৌরভ পাইনি মোটেই অবশেষে।

প্রেমের মিষ্টি ফিসফিসানি
উষার নরম আলো,
প্রেমিকার উষ্ণ আলিঙ্গন
লাগেনি তখন ভালো।

ফোটা গোলাপে শিশিরের আদর
দিঘির পাড়ে দখিনা বাতাসের নাচ,
শিশুর হাসির প্রতিধ্বনি দেয়নি দোলা হৃদয়ে।
সকলের সঙ্গে আনন্দ তখন ভাগ করে নিতে পারিনি আয়েশে।
ছোট ছোট সুখের মুহূর্ত অবহেলা পেয়ে
চলে গেছে দূরে হেঁটে হেঁটে।
সুখের সৌরভ পাইনি মোটেই।
জীবন নদীতে তখন বইত নোনাজল,
কারণ নিজের সুখ চেয়েছি
অপরকে চাইনি সুখী করতে।

জীবন নদীতে চাই বয়ে যাক মিঠাজল
প্লাবন আসুক উর্বর করুক দুপাড়ের সমতল।
সব ঋতুতেই সাজুক উপবন-
স্বর্গের সুগন্ধি ফুল ফুটুক-না অনুক্ষণ।
সুখের সৌরভ প্রবাহিত হোক দিকে দিকে।

মলিন অতীত

মলিন অতীত
বাছবিচার না করে শুধু
খারাপ কাজে দিয়েছি হাত,
আপন লাভে দোষ দেখিনি
অপরাধেও জীবনপাত।

অনেক ময়লায় মলিন
জীবন নেব ধুয়ে এবার,
সব দাগ তাতে মুছে যাবে
খুলে যাবে কি সুখের দ্বার?

দাগ মেটানো বিশেষ জল
খুঁজে চলেছি আজও আমি,
কেউ আমাকে ভালোবাসলে
পাই সে-জল ভীষণ দামি।

একগুঁয়ে দাগ ধুয়ে নেব
বাঁচতে চাই নতুন করে,
মন্দ কাজের দলিল ছিঁড়ে
থাকব সুখে প্রেমের গড়ে।

মলিন অতীত দেখে ভীত
কেউ আসে না প্রেম বিলাতে,
সুখের দ্বার বন্ধ এখনো
কাঁটা যেন আমার গলাতে।

চোরেরা হবেই দেশছাড়া

চোরেরা হবেই দেশছাড়া
দোষ আমাদের, দুর্গের দরজা
অরক্ষিত রেখেছি অনেকদিন।
সাদা বেশে সাধু সেজে
চতুর চোরেরা ফতুর করেছে,
মাথার ঘিলু সোনার খনি ছিনিয়ে নিয়েছে।

প্রথমে তাদের মন্ত্র পড়া শুনে
বুঝতে পারিনি সন্দেহের বীজ ছিল,
বাতাসে মিথ্যের ঘ্রাণ ছিল
চোখে ছিল মায়াকান্না।

আমরা হয়েছি মন্ত্রমুগ্ধ,
ঝাঁপ দিয়েছি মথের মতো
তাদের জ্বালা আগুনে।
সুযোগ বুঝে মাথার ঘিলু
তারা নিয়েছে হাতিয়ে।

একসময়ে মনটা ছিল সুনীল আকাশ
এখন ঢেকেছে অচেতন মেঘে,
চোখগুলো তাই দেখতে পায় না তারাদের,
দেখতে পায় না গোলকধাঁধার পথ।

তবুও এখনো আমাদের নাক
শুঁকতে সক্ষম আশার ভরতনাট্যম,
সকল বিশ্বাস জড়ো হলে
পোড়াতে পারে ভয়ের পুতুল।
সকল ছায়া হটবে তবে
চেতনা আবার উড়বে আকাশে।
সব চোরেরা হবেই দেশছাড়া

এ-বাতাস

এ-বাতাস
এ-বাতাস শ্বাস রোধ করে
হতাশার কান্না বয়ে আনে,
বয়ে আনে দুঃখের দুর্গন্ধ,
সহস্র শোকের কলরব।

আত্মার গায়ে ছায়ার কালি
কষ্ট বাড়ায় মুষ্টির রোষ,
ভীরু আশা লড়তে পারে না
বাস্তবের কঠিন সংগ্রাম।

প্রতিটি নিঃশ্বাস যেন বোঝা,
বহন করা বড় কঠিন,
দুর্দশার রং এত ধূসর
ক্যানভাসটা হয় মলিন;
আনন্দ-হাসির উজ্জ্বলতা
সেখানে হয়েছে ক্ষীণ।

গভীর বেদনার গহ্বরে
আঁধারের লুকোনো প্রদীপ,
বুক চিরে অচিরে দেখাবে
বিষাদ-মুক্তির সেই পথ।

আশা শঙ্খ বাজাবে তখন
বাতাস নাচবে কথাকলি,
জাগবে আবার ইচ্ছাশক্তি
সুবাস ছড়াবে কুসুমকলি।

প্রেমিক মনে যুক্তি

প্রেমিক মনে যুক্তি
আগে যুক্তি সুন্দর ছিল
রেশমী সুতোর মতো,
জীবনটাতে প্রেম ও ছিল
স্রোতস্বিনীর মতো।

সেই সুতোতে পাকানো জট
খোলে না আর কেন,
যুক্তিতর্ক নুড়ি ছুঁড়ছে
দর্প-দুর্গে যেন।

প্রেমিক মনে যুক্তি তখন
কুয়োর স্বচ্ছ বারি,
আজ সেখানে ময়লা কাদা
অভিযোগের সারি।

আমার তোমার স্বপ্নের জীবন
এমনটা হোক চাই কি?
টোস্টের মাঝে প্রেমের মাখন
চাই না দিক আজ ফাঁকি।

তর্ক থামুক ঝড়টা থামুক
হোক সমুদ্র শান্ত,
জীবন জাহাজ যাক এগিয়ে
প্রেম হবে না ক্লান্ত।

বাঁচার সুধা

বাঁচার সুধা
মনের চোখে কী যে লেন্স
দেখে আঁধার খালি,
আত্মা যদি বন্দি হয়
পেন হারায় কালি।

তখন যেন বসুন্ধরা
কুরূপা চোখে লাগে,
দেবীর সাজে ত্রুটি খুঁজি
নেই দৃষ্টি বাগে।

মন্দ খুঁজে ছোবল মারা
দৃষ্টি যেন সাপ,
ভাঙা মুকুরে পৃথিবী দেখা
মনে বিকৃত ছাপ।

বিকৃত ভাব সবসময়
এগোতে দেয় বাধা,
ত্রুটি খুঁজেই দিনটা কাটে
পাই না খুঁজে সুধা।

বাঁচার সুধা মেলে যখন
সুন্দরতা দেখি,
প্রশংসার বচন শুনে
অপরে হয় সুখী।

অপর জনে সুখী হলেই
মন হর্ষে নাচে,
জীবনখানা তখন যেন
বাঁচার মতো বাঁচে।

বাঁচার ইচ্ছে

বাঁচার ইচ্ছে

শিরায় শিরায় বাঁচার ইচ্ছে
সারাদিন বয়ে যায়,
ইচ্ছে পূরণ সবার কি হয়
সবাই কি সুখ পায়?

শিরায় শিরায় বাঁচার ইচ্ছে
বলে কৃষকের পেশি,
তবু তারা কেন অনাহারে মরে
ফলিয়ে ফসল বেশি?

শিরায় শিরায় বাঁচার ইচ্ছে
পথে বাস করে যারা,
পেটের খিদেটা মেটাতে যে কেন
ডাস্টবিন খোঁজে তারা?

বাঁচার তাগিদে তৃতীয় লিঙ্গ
কেন গো সড়কে নামে,
কেন তারা বলো বাড়িছাড়া আজ
শহর হোক বা গ্রামে?

দুর্গম স্থানে সভ্যতা চাকা
ফেলেনি যেখানে ছাপ,
বাঁচার রসদ খুঁজে খুঁজে আনা
সেখানে প্রথম ধাপ।

অন্যায় পথে রসদ জোগাড়ে
যাদের নেইকো ভয়,
ভাঁড়ার পূর্ণ তবু কেন তারা
করে এত নয়ছয়?

নৈতিক ফারাক নির্ণয় করে
কে কেমন নেবে মজা,
জীবন কারোর শুষ্ক মরু
কারোর সরস তাজা।

বাঁচার মতন বাঁচতে যে চাই
মুহূর্ত-ঘোড়া চড়া,
লাগামটা হাতে জীবন থাকুক
ভরুক সুখের ঘড়া।

হাতে লাগাম বাঁচার ইচ্ছে
করাবে সঠিক কাজ,
ইচ্ছে পূরণ অনায়াস হবে
জীবন খুলবে ভাঁজ।

কেন

কেন
পার্কের বেঞ্চে কত ভালোবাসা আঁকা
কবিতায় ছড়ানো কত–না ভালোবাসা,
তবু জীবনটা কেন আজ ফাঁকা?

ভাষণে কেতনে পড়ে গণতন্ত্র-বৃষ্টি
সকলে ছড়ায় বুক সেই বৃষ্টি পেতে–
সব জীবন হয়নি কেন সিক্ত মিষ্টি?

মনীষীদের বচন লেখা স্কুলের দেয়ালে
বদলে দিতেই পারে জীবনের দৃষ্টি,
বেচাকেনা তবু কেন চলে আবডালে?

সততাই সর্বোত্তম নীতি লেখা প্রতিষ্ঠানে
বদলে দিতে পারত সকল পরিকাঠামো–
তবু দেশ দুর্নীতিতে কেন ৯৩ নম্বর স্থানে?

স্বাধীন হয়েছি, স্বাধীনতা দিবস পালন
করেছি পতাকা উত্তোলনে ভাষণে ভাষণে
ক্ষুধার্ত দেখবে কেন ঝুলন্ত বাগান ব্যাবিলনে?

চিনলাম না নিজেকে

চিনলাম না নিজেকে
আহ্নিক গতিতে জীবনের কত দিন চলে গেল পুব থেকে পশ্চিমে,
নদীর জলধারা মিলে গেল সমুদ্রে।
বার্ষিক গতিতে কত বছর সাগরের ঢেউয়ের মতো জীবনের বেলাভূমিতে ভেঙে গেল,
তুমি শেখাতে চাইলে নতুন দিন মাস বছর আসবে
পুরোনো আর আসবে না ফিরে।
শেখাতে চাইলে এখন যা আছে থাকবে না ভবিষ্যতে।
জীবনে নানান অভিজ্ঞতার নাগরদোলায় চাপিয়ে শেখাতে চাইলে এই মুহূর্তে যা উপরে পরমুহূর্তে তা নিচে,
সুখের পাহাড় আগামীদিনে দুঃখের সাগর হতে পারে,
তবু শিখলাম না কিছুই।
কত সম্পদ আহরণ করলাম
দর্পের চূড়ায় বসে আস্ফালন করলাম।
বুঝলাম না চূড়া ভাঙতে পারে
চোখে পরলাম ঘষা কাচের চশমা।
তাই ভালোবাসাতে ঘৃণা দেখি
আশাতে নিরাশা দেখি
দেখি না সম্ভাবনা,
মিথ্যা দেখে ভাবি সত্যি সত্যি সত্যি।
সত্যি শেখাতে চাইলে চেনাতে চাইলে নীরবে নিজেকে।
মিথ্যে শিখলাম, চিনলাম না নিজেকে

কখন কলম নেবে

কখন কলম নেবে
সংখ্যায় অনেক তারা
পরনে বসন ছেঁড়া,
সকাল হলেই এই শীতে
রোদের উত্তাপ নিতে
যায় বেরিয়ে উঠোনে।
আমি মাথার চুল ছিঁড়ি গোপনে,
খাতার পাতায় দাগ কাটে না কলম
ভালোলাগা অনুভূতি রোগী
লাগানো চাই তার ক্ষতে মলম।
কলম ছুঁড়ে খাতা ছুঁড়ে বসে আছি আধ-শোওয়া,
কখন আসবে ফিরে
শতছিন্ন বস্ত্র পরা
আমার ভাবনারা সুখী আমেজ নিয়ে?
কখন কলম নেবে তারা
হৃদয় খুঁড়ে উপলব্ধির সঠিক রূপের
চিত্র আঁকবে খাতায়?
কখন আমার ভালো লাগবে আবার?