তুমি যখন হাসপাতালে ছিলে-
স্টিফেন জনসন সিনড্রোম করেছিল কাহিল
খুঁজছিলে জীবনটাকে হাতড়ে হাতড়ে,
বসে ছিলাম তখন আমি নিরাশ নদীর পাড়ে।
লেডি ডাক্তার বন্ডটা যেই দিল আমায় সই করতে,
সামনের নদীর উত্তাল ঢেউ আসছিল যেন মারতে।
তোমার ফোলা শরীরটা যখন ধীরে ধীরে
ওষুধ ও ইনজেকশনে সাড়া দিতে শুরু করে,
ঢেউগুলো যেন যেত দূরে সরে।
তুমি লড়ছিলে হাসপাতালে অক্লান্ত,
আমি লড়ছিলাম ঘরেতে অনভ্যস্ত
ছিল না হাতে অস্ত্র।
মফস্সলের ডাক্তারের ভুলে প্রাণের আশঙ্কা
শহুরে ডাক্তার দিল তোমায় সারিয়ে।
দুজনের প্রাণ হাঁফ ছেড়েই বাঁচল।
রাখে হরি মারে কে?
Category: কবিতা
খাপ খাওয়ানো

রাগ

বন্ধু দিয়ো

বন্ধু একটা সকাল দিয়ো
দিয়ো একটা দিন,
দিনের শেষে রাত দিয়ো গো
শ্বাসটা অমলিন।
বন্ধু দিঘল দিঘি দিয়ো
আশায় ভরা থাক,
প্রতিদিনের পুণ্যস্নানে
হতাশা ধুয়ে যাক।
বন্ধু দিয়ো আকাশসম
বুকে ভরা চিৎ,
পাখির মেঘের তারার সাথে
গাইব আমার গীত।
বন্ধু দিয়ো একটা চারা
প্রণয় যারই নাম,
জল দেব তার মূলে মূলে
গড়ব প্রেমের ধাম।
বন্ধু দিয়ো স্বপ্ন দেখা
হাজার স্নিগ্ধ ভোর,
সফলতা নাড়বে কড়া
সজাগ থাকবে দোর।
বন্ধু একটা জীবন দিয়ো
দিয়ো কর্ম দায়,
ক্লান্ত শরীর যেন শেষে
একটু শান্তি পায়।
এমন মনোভাবে
ধরে যজ্ঞের ঘোড়া
এমন সাহস বুকে রাখে
ছোট্ট লব কুশ তারা?
রঘুবংশের খ্যাতি
কিশোর হাতে নষ্ট হবে?
কাদের চওড়া ছাতি?
দেখে ছাতির বহর
রামের ভ্রাতা হারল যেন
সাগর হারায় লহর।
রামের দেখা স্বপ্ন
পূরণ হবে সোজা পথে?
ছুঁড়ে দিল প্রশ্ন।
তুচ্ছ করা এমন
মনোভাবের অধিকারী
হারে যখন তখন।
হোক না উচ্চ বংশ
এমন মনোভাবে শুধু
জয়ের আশা ধ্বংস।
কাউকে ছোট ভাবা-
গলদ চালে দাবা খেলা
হারবে তুমি দাবা।

জুতো খুলে
প্রাতঃভ্রমণ করতে গিয়ে
সবুজ ঘাসের মাঠে হাঁটি,
জুতো পায়ে বুকে ইগো
আমি কি আর তেমন খাঁটি?
অনেক সুজন জুতো খুলে
হাঁটছে যেন ভালোবাসায়,
সবুজ তৃণের কোমল স্পর্শে
তাদের ইগো যেন পালায়।
প্রকৃতিতে ইগো ছাড়া
আমরা যদি চলতে পারি,
জীবন পথে ইগোয় ডুবে
ফেলি কেন অশ্রুবারি?
ঘাসের ‘পরে ইগো ফেলে
হাঁটতে পারি অনায়াসে,
ভেদাভেদের জুতো খুলে
সুজন হাঁটে সবুজ ঘাসে?
জুতো খুলে হাঁটুক সবাই
বক্ষ হোক না ইগো ছাড়া,
এমন দিনের অপেক্ষাতে
রইতে পারি নেই যে তাড়া।

মুক্তোর মালা
মুক্তোর মালা পরতে
কে না ভালোবাসে?
মুক্তো খুঁজতে তারা কি
সিন্ধু বক্ষ চষে?
ক’টি শুক্তি মেলে ধরে
মুক্তোর সন্ধান?
মোদের সমাজে থাকে
কজন বিদ্বান?
কত তাপ শুক্তি বুকে
মুক্তো সৃষ্টি করে,
জানতে পারে না গলা
যেটি মালা ধরে।
নকল মুক্তোর মালা
কাড়ে কেন মন?
আসল মুক্তোর খোঁজ
করে কত জন?
ডুবুরি শুক্তির খোঁজে
যায় সিন্ধু তলে,
কজনে সলিলে নামে
কজনে বা স্থলে?
ষোলো আনা শখে ভরা
পরি মুক্তো মালা,
ভুলি গেছি কেষ্ট পেতে
প্রাপ্তি কষ্ট জ্বালা।
কষ্ট করে মুক্তো খোঁজা
লোকজন চাই,
গুমোট বাতাস কাঁদে
নাই নাই নাই।

কথা রাখা

হৃদয় জেতার মন্ত্র হলো
কথা দিয়ে কথা রাখা,
কথা রাখা প্লেনটি হলে
দায় নেওয়াটা তারি পাখা।
দায়টি নিয়ে কথা দিলে
কথা রাখতে মোরা বাধ্য,
সকল বাধা থাক না পথে
মোদের রোধার নেই যে সাধ্য?
কথা দিয়ে না রাখাটায়
মোদের মানের হয় যে হানি
ডিপোজিট ফর্ম ভরে শুধু
ব্যাংকে টাকা জমা মানি।
সুদের আশা হৃদয় জেতা
মোদের ভাগ্যে নেই কো জোটে,
হতাশাতে মন ভরে যায়
যাত্রী মোরা দুঃখ বোটে।
কথা রাখার শপথ নিলে
মূল্য মোদের হবেই দিতে,
বাড়তি কষ্ট বাড়তি উদ্যোগ
বাড়তি খরচ হবে নিতে।
বদলে সুখ অনুভূতি-
অমূল্য যা যায় না কেনা,
মোদের জীবন বদলে যাবে
যাবে না আর তখন চেনা।
বারে বারে কথা রাখার
অভ্যাস যদি করতে পারি,
গণতন্ত্র বদলাবে রূপ
ছুটবে দেশের বিকাশ গাড়ি।
ও মেঘ

ও মেঘ তুমি যাচ্ছো কোথায়?
দাঁড়াও একটুখানি।
তোমার সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে বাকি।
ও মেঘ একটু দাঁড়াও,
তোমার সঙ্গে আমার অনেক চুক্তি করা বাকি ।
সেই চুক্তিতে করতে হবে অনেক মহান কাজ।
তুমি জানো কোন কোন মেঘ বৃষ্টি ঝরায়।
তুমি জানো কাদের হৃদয় হিংসা বিদ্বেষ ঘৃণা ছড়ায়,
ভালোবাসা থাকে বহুদূরে – নির্বাসনে।
তুমি জানো কার চোখ মুখ ক্রোধ বর্ষণ করে,
স্বাভাবিক হার্টবিট যার হয়েছে ইতিহাস।
তুমি জানো কারা সমাজে দুর্নীতি ছড়ায়,
সততা কেন ঘরছাড়া?
তুমি জানো কাদের মনে
উপচে পড়ছে কুসংস্কার আর কুশিক্ষা,
পালিয়ে গেছে ভালো সংস্কার আর সুশিক্ষা।
তুমি জানো কাদের মনের আকাশে আছে দূষণের কালো মেঘ।
ও মেঘ তুমি একটু দাঁড়াও
শেষবারের মতো দাঁড়াও।
শেষবারের মতো এমন শক্তিশালী বর্ষণ কর,-
ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাক-
হৃদয় মনের হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, ক্রোধ,
দুর্নীতি মনোভাব, কুসংস্কার, কুশিক্ষা আর মনের দূষণ।
সাফ হয়ে যাক যত মলিনতা আর কালিমা,
তারপরেতে স্থাপন করো সেথা এক বৈদূর্যমণি।
ধরার ক্ষেত্রে আবার ফলুক উত্তম মানবিক বৃত্তির ফসল।
ও মেঘ আমি তোমার অপেক্ষায়।
সাক্ষাৎ

দুটি মানুষের সাক্ষাৎ হোক
স্মরণীয় আর অনন্য,
অনন্য হোক আন্তরিকতা
হোক না নেহাত সৌজন্য।
আদান প্রদানে কথার মালিকা
আনুক প্রেরণা সুগন্ধ,
প্রাণিত হোক না দুটি অন্তর
লেখা হোক সেরা নিবন্ধ।
প্রতিটি শব্দ বহন করুক
আত্মিক টান ভালো লাগা,
সাক্ষাৎ পরে দুজনেই খুশি
ভাবে না যে তারা হতভাগা।
মানসিক স্তর উন্নীত তাই
ভাবে পেয়ে গেছে কত কিছু,
উভয়ের লাভ তাই হরষিত
আসুক দুঃখ পিছুপিছু।
প্রতি সাক্ষাৎ এমনি হলেই
আপনজন যে সবখানে,
ভেদাভেদ দানো উধাও হবেই
মিলনের মেলা প্রতি স্থানে।
