তোর চপল চোখে

তোর চপল চোখে
তোর চপল চোখে অক্ষর পড়ি
দৈনিক দীনতা ঝেড়ে ফেলে,
পড়তে পড়তে নেশার নীলিমা
লেখে কত কথা হৃদ-নভোনীলে।

পাঠের পাখিটা ভোরের আলোয়
ভৈরব রাগের গান গায় শাখে,
তোর প্রেমের প্রেরণা এনে
পুবালী পবন সামনেই রাখে।

সে-প্রেরণায় উপোসি দেহ
অক্ষরের সাক্ষরে খিদে মেটায়,
ভাষার ভীষণ প্রেমিক প্রকাশ
ফুটছে আমার আকাশের গায়।

চাঁদ-তারারা হাসলে ঝরে
সহস্র কাব্যের উপাদান,
কুড়িয়ে কুড়িয়ে আমার কলম
করে কবিতার জন্মদান।

তোর প্রেরণার রূপগন্ধে
জেগে ওঠে যেন শুকতারা,
পথ দেখানো দিশায় হাঁটি
আমি ও আমার কবিতারা।

ফুল বলে

ফুল বলে
ফুলের কুঁড়ির স্বপ্ন যেখানে
ঘুমের আবেশে থাকে,
শিশিরবিন্দু শিশু স্বপ্নের
মুখটা ধুইয়ে ডাকে।

শিশুর এখন আলসেমি শুধু
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হাসি-
ফুল বলে কবে চোখ মেলে তুই
দেখবি পূর্ণশশী?

কবে তোর চোখ মাখবে রবির
নরম আলোক ভোরে,
শীতল হাওয়া, আমি উৎসুক
দেখব কখন তোরে!

তোর বিকাশেই আমার জীবন
সফলতা খুঁজে পায়,
সঁপেছি জীবন দেবতার পায়ে-
নিজের মুক্তি তায়।

মধুপ নিকটে আসুক আমার
শোষণ করুক রেণু,
আমার স্বপ্ন- সফল কানুর
বাজানো মধুর বেণু।

সময় কখনো নিষ্ঠুর হয়ে
ভেঙেছে স্বপ্ন, ঘর-
উদ্দাম নদী হারিয়েছে বেগ
বুকেতে বালুর চর।

নতুন প্রয়াসে ফুটিয়েছে কুঁড়ি
আমার আদর স্নেহ,
প্রতিকূলতার ঝড়েতে নষ্ট
হবে না স্বপ্ন দেহ।

পথের কিশোর

পথের কিশোর
আস্ত একটা চিত্রকল্প
আসুক কিশোর মনে,
কল্পনা কি সশরীরে
হাজির হল সামনে?

চোখটা বন্ধ নাকে গন্ধ
যখন এসে লাগে,
আঁখি খোলে ভাতের থালা
কোথায় যায় যে ভেগে?

স্বপ্ন দেখা দৃষ্টি তারই
দেখে ফুটপাত মেপে,
ভাতের ছবি উধাও করে
বৃষ্টি এল ঝেঁপে।

কিশোর চোখে স্বপ্ন দেখা
এদের বুঝি বারণ,
পথের কিশোর ছোট্ট মনে
পায় না খুঁজে কারণ।

কারণ খুঁজতে অনেক জলে
নামতে হবে তলে,
দায়দায়িত্ব যাদের তারা
কোথায় গেছে চলে?

অবহেলায় কিশোরবেলা
আগামীটা আঁধার,
আলো জ্বেলে আসবে কি কেউ
উত্তর দিতে ধাঁধার?

মিথ্যা প্রতিশ্রুতি

মিথ্যা প্রতিশ্রুতি
অঙ্গীকারের অঙ্গবৈকল্য যায় ঢাকা প্রসাধনে?
সম্পর্কের সন্দিগ্ধ জোনাকি আঁধারে সত্যসন্ধানে।
এই সন্ধানে হারিয়ে যায় মনোহর মুহূর্ত-মণিকা,
জোছনা-লোভী জীবনে পড়ে আঁধার রাতের যবনিকা।
মিথ্যা প্রতিশ্রুতি রং ছড়ানো, বানায় সুবর্ণ জাল-
আশ্লেষে আবদ্ধ হয়ে জীবনের কাটে ছন্দ তাল।
ছন্দ মানে কবিতার ছন্দ তাল মানে-
বাজে যে-তাল প্রাণের গানে,
মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ওষুধে জীবন বনে ছন্নছাড়া ঘাড়েগর্দানে।
শ্রীহীন জীবন কাব্যহীন, গান-সুর-তাল ছাড়া
কথা রাখার দায়টা নিতে নেইকো মনের সাড়া।
আগামীর অঙ্গীকারে থাক আন্তরিক দায়ের কিংখাব,
সম্পর্কে প্রেম-প্রীতি-স্নেহের হোক-না সওয়ালজবাব।

তুমুল জীবন

তুমুল জীবন
তুমুল জীবন বাঁচব বলেই
ভাসিয়েছিলেম জীবনতরী,
প্রতিকূলতার উদ্দাম স্রোত
হয়েছে বড়ই অনিষ্টকারী।

ঝরনা ধারার প্রবল বেগটা
ঢুকিয়েছিলেম লোহিত শোনিতে,
অশুভ স্রোতের উচ্ছ্বাস বলে-
প্রবেশ করব তোমার খনিতে।

খনির প্রতিটি প্রবেশপথেই
মজবুত বাঁধ তাইতো গড়েছি,
অশুভ শক্তি ফিরে গেছে তাই
দামি আকরিক যত্নে রেখেছি।

তুমুল জীবন কেমন দেখতে
ক্যানভাস তুলি ছবি আঁকে তার,
জল রং ভেবে পাশবিক বল
সলিল ঢেলেছে তাতে বারবার।

তেল রং তাই হয়নি নষ্ট
এখনো লড়াই চলছে তুমুল-
জিতলে বিনাশ আসুরিক ভাব
ফুটবে শরতে সাদা কাশফুল?

আমার বালুকাবেলা শেখে

আমার বালুকাবেলা শেখে
আমার বালুকাবেলা দেখে
অনেকটা কাছ থেকে দেখে
ঢেউয়ের উৎসাহ দেখে-
দেখে তার ভেঙে পড়া
ভাঙার পরেও তারা কত উৎসাহী
দেখে শুধু দেখে।
আমার বালুকাবেলা শেখে
উৎসাহ বলে কাকে।

আমার বালুকাবেলা তাই
আনন্দে পুলকে ভেজে
সাগর সলিলে ভেজে-
কখনো বা পা ভেজায় কখনো শরীর,
ভেজার আনন্দ নিতে ভেজে শুধু ভেজে।
আমার বালুকাবেলা শেখে
কী করে সর্বদা আনন্দে থাকতে হয়।

আমার বালুকাবেলা প্রেমের কাঙাল
সাগরের প্রেম পেতে নড়ে না কোথাও-
প্রেমের জলে সিক্ত হওয়া একমাত্র লক্ষ্য।
আমার বালুকাবেলা শেখে
প্রেম পেতে কী করে লেগে থাকতে হয়।

তুমি যখন

তুমি যখন

কখনও চোখ গোলাপ দেখে
কখনও বা বকুল,
তুমি যখন সামনে আস
গঙ্গা ভাঙে দুকূল।

কখনও চোখ বিপদ দেখে
অধীর তবু হয় না,
নিমেষে এক বন্ধু হয়ে
এসে কথা কও-না।

কান্না ভেজা দৃষ্টি আমার
কানটা করে সজাগ,
পদশব্দ তোমার যেন
ছড়ায় আশার পরাগ।

মন খারাপের বেহালাটা
খোঁপার বকুল শুঁকে,
ভুল করেও বাজায় না সুর
ছড়টা রাখে তাকে।

সুখের আগে তুমি ঘৃত
দুঃখের আগে বারি,
প্রিয়া তুমি যখন পাশে
সবই করতে পারি।

আবদ্ধ মন

আবদ্ধ মন
দিগন্ত হরিণ অনন্তে পালায়
পাই না ছুঁতে তাকে,
অশনিসম্পাত শিংয়ের বাহার
বোঝায় তার দৌড়-
দেহের লোমরাজি কেঁপে কেঁপে ওঠায়
স্পর্শ ইচ্ছেটা বাতিল।
নেইতো বনরাজি আকাশের উঠোনে
শিং তাই ফাঁসে না
হরিন দৌড়ে চলে,
অসীমের স্বাদটা আবদ্ধ মনটা
কী করে পায় বল ?

আঁচল

আঁচল
মায়ের শাড়ির আঁচলটা যেন
আশাভরসার থাম,
ছুঁয়ে থাকলেই ভয়টা উধাও
হাতে নেই কোনো ঘাম।

দিদির আঁচল স্নেহাশিষ মাখা
প্রহরায় সদা রয়,
যমরাজ তাই এদিকে আসে না
সর্বদা মনে ভয়।

প্রিয়ার আঁচলে লজ্জা লুকোনো
মনেতে প্রেমের গান,
আপদবিপদ শক্তি হারিয়ে
রাখছে প্রিয়ার মান।

কত গল্পের কথা বলে ওঠে
ওই আঁচলের ভাঁজ,
হাসিকান্নায় ভেজা চোখদুটো
মোছা আঁচলের কাজ।

সেই আঁচলের মান না রাখলে
এই সমাজের হার,
সভ্যতা যাবে রসাতলে ত্বরা
কে নেবে পাপের ভার?

ঢেউ-তৈরি-করা কারখানা

ঢেউ-তৈরি-করা কারখানা
পুরীতে দেখে এলাম ঢেউ-তৈরি-করা কারখানা
চালু দিনের চব্বিশ ঘন্টা।
উঁচুনীচু ঢেউ মাথায় জলের বোঝা সামলাতে পারে না আছড়ে পড়ে
ভেঙে দেয় স্যান্ডআর্ট, ভরে দেয় জল চোখে।
কারখানার চিমনি ছড়ায় বাতাসে নানা গন্ধ-
সেই ঘ্রাণে শঙ্খচিলেরা মাতাল হয়ে ওড়ে।
প্রতিনিয়ত উৎপাদন অবিশ্রান্ত শ্রম
ছুটির ঘন্টাটা দেখতে কেমন, কেমন বা স্বাদেগন্ধে-
হতভাগ্য শ্রমিকরা জানে না মোটেই।
নির্বাক শ্রমেও জল ঝরে
সহস্র মেশিন ও গর্জন করে
দর্শনে রুপোলি, ঘ্রাণে গন্ধযুক্ত
অক্লান্ত উৎপাদন দেখে ক্লান্ত হয় না
পর্যটকের মন।