খেজুরিতে বেলাভূমির

খেজুরিতে বেলাভূমির
বুনো বুনো গন্ধ মেখে
হাতছানি দেয় রাস্তা,
ডাকছে জোরে সাগরবেলা
আদিম তারই বার্তা।

খেজুরিতে বেলাভূমির
মৌলিকতা আস্ত,
সাগর ভাঙে ঢেউয়ের পাহাড়
বেলাভূমি ব্যস্ত।

সমুদ্রটা তটের সঙ্গে
ভাব বিনিময় করে,
অন্তরঙ্গ তারা কত
চোখে ধরা পড়ে।

মাঝখানেতে পর্দা টানে
ঘন ঝাউয়ের সারি,
সাগরের রাশ দেখে লাগে
একটু বেশি ভারি।

ঝাউ গাছেদের ডাল কাটা নেই
সবুজ পাতায় ভরা,
এই সৈকতে পা রাখলে যে
মিটবে মনের খরা।

অভিধান লুকোনো

অভিধান লুকোনো
এক মস্ত অভিধান লুকোনো প্রত্যেক মনে,
বারবার ব্যবহারে শব্দেরা চিত্র আঁকে জীবনে।
বেশি প্রয়োগে স্পষ্ট ছবির প্রান্তরেখা,
তাতে যেন গড়ে ওঠে এক অক্ষরেখা।
সে–রেখার চারদিকে ঘোরে যে জীবনখানা–
নিচে ব্যস্ত চিন্তা-কাজ, ঊর্ধ্বে শব্দ-সামিয়ানা।
সেই শব্দ অর্থ হলে শয়নে স্বপনে অর্থ,
অর্থের জন্য খারাপ পথে হেঁটেই জীবন ব্যর্থ।
শব্দ যদি মানবতা হয় জীবনের সার্থকতা,
থাক-না সেখানে টাকাপয়সার অপ্রতুলতা।
শব্দ বাছাইয়ের মাপকাঠিতে মানবতা থাক,
সবার জীবন থেকে মন্দ শব্দ চলে যাক।
ক্রমে ক্রমে মন থেকে তাড়িত হোক খুনি আসামি,
এই পৃথিবী সুন্দর হোক সুন্দর হোক আগামী।

নিয়ে গেলে শুধু

নিয়ে গেলে শুধু
বেলাভূমিতে ঢেউ পাঠিয়ে
সাগর কি কিছু জানাতে চায়?
দুই তীরের জমিকে শস্যে ভরে
নদী কি কিছু জানাতে চায়?

আকাশ কি কিছু শেখাতে চায়
গ্রহ–তারার ছড়িয়ে আলো?
মেঘ কি কিছু শেখাতে চায়
ধরার বুকে বৃষ্টি পাঠিয়ে?

ভূপৃষ্ঠকে সবুজতা–ফল–ফুল–পশুপাখি দান করে,
পৃথিবী কি কিছু শেখাতে চায়?
তুমি শিখলে না এলে কাছে,
নিজের কথা বলেই গেলে শুধু।

আমার সাগর-নদী-আকাশের আর
নক্ষত্র-তারা-মেঘ-পৃথিবীর কথা
জানতে চাইলে না,
আমার কথা শুনতে চাইলে না
তাদের মতো দিতে শিখলে না,
নিয়ে গেলে শুধু আমার কাছ থেকে।

আমিত্ব-নাশের উপলব্ধি

আমিত্ব-নাশের উপলব্ধি
ছেলেবেলায় যারা নিজের ছিল
তারা কোথায় হারিয়ে গেল!
পছন্দের খেলার উপকরণ, মাঠ
যেন কোথায় হারিয়ে গেল।
যারা ছিল খেলার বন্ধুবান্ধব
তারাও কোথায় গেল চলে।

স্কুলকলেজে যাদের ছাড়া
সময় কাটবে না ভেবেছিলাম–
যাদের একান্ত আপন মনে হত
তারাও কোথায় যেন সরে গেল।

কর্মস্থলে যাদের ছাড়া
এক–পা এগোতে পারতাম না–
তারা যেন হঠাৎ হারিয়ে গেল।
মাঝেমধ্যে শুধু এখন
দু–একটা ফোন আসে।

এ–বয়সে উপলব্ধি:
চোখ মেলে যা দেখি মনে হয় সব আমার।
যা–কাছে আসে যেন চলে যাবার জন্যে।
ছেলেবেলা আসে চলে যাবার জন্যে
ছাত্রজীবন আসে চলে যাবার জন্যে,
কর্মজীবন আসে চলে যাবার জন্যে
জন্ম হয় মৃত্যুর দিকে এগোবার জন্যে।
এখন মনে হচ্ছে সব কিছু আসে যায়
আমিত্ব-নাশের উপলব্ধি দিতে।
তবু নাশ হল কই?
কতবার জন্মাতে হবে কে জানে।

মাটির সোঁদা গন্ধ

মাটির সোঁদা গন্ধ
হঠাৎ করে দেশের বাড়ি
মাটির সোঁদা গন্ধ,
নাকে যেতেই সিটির ছবি
লাগছে কেন মন্দ?

হঠাৎ করে উধাও হল
সেই ছবিটা নিমেষে,
ভালো লাগার রামধণুটা
উঠলো জেগে আকাশে।

হঠাৎ করে আলো মেঘেতে
রঙের তুলি আঁকছে,
দিগন্তটা ধনুক টেনে
তিরটা যেন ছুঁড়ছে।

ইমারতের উত্তাপেতে
মনের বীণা বাজে না,
সরস মাটি সবুজ পাতা
করে সুরের সূচনা।

গাইছে গান বাউল বায়
পাখি বজায় দোতারা,
কাঠবেড়ালি মনটা খায়
মিঠা কাব্য পেয়ারা।

এই ভাইরাস

এই ভাইরাস
এই সংক্রামক ভাইরাস আগে ছিল
এখনও আছে ভবিষ্যতেও থাকবে।
এই ভাইরাস অসিকে বারণ করে খাপ থেকে বের হতে,
নিমেষে হারিয়ে দিতে পারে যুদ্ধে,
এ–ভাইরাসের আক্রমণে দুপা কাঁপে মঞ্চে,
মুখও কথা বলে না –
কর্মবিমুখ মনটা বসে থাকে চুপ।
কল্পনা মিথ্যে ছবি আঁকে,
তাই কখনও চোখ ভূত দেখে রাতে
রজ্জুকে ভুজঙ্গ বলে ভ্রম করে
মিথ্যাটাকে সত্য দেখে।

এই ভাইরাস মাঝে মাঝে হিংসাও ছড়ায়,
সমাজে সম্প্রীতি নষ্ট করে।
এ–ভাইরাস মানুষের ভালো গুণগুলোর
প্রকাশে বিকাশে বাধা দেয়।
এই ভাইরাস মনের ভেতর দুর্গ বানিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।
সেই দুর্গ সাহস করে ভাঙলে
মানবসত্তার পূর্ণবিকাশ ঘটে।
এই ভাইরাস মনের ভয়।

প্রেমের পথের যাত্রী

প্রেমের পথের যাত্রী
আকাশ যদি সোহাগ করতে
আসে নেমে পাহাড় চূড়োয়
অলক যদি আসে খেলতে
পাহাড়ের ওই পথের মাঝে,
তুমি কেন আসন ছেড়ে
আসো না গো ভালোবাসতে?

তুমি বললে পাহাড় হব
এক নিমেষে অনায়াসে,
তুমি বললে নদী হব
নাইতে এসো ভালোবেসে।

ভালোবাসলে নামাই যায় গো
আকাশ থেকে প্রেমিক বুকে–
জানো না কি তোমায় ছেড়ে
থাকি আমি কেমন সুখে!

ভালোবেসে আমি যদি
ছাড়তে পারি এত কিছু,
এবার না হয় একটু নামো
এসো না হয় আমার পিছু।

আকাশের চাঁদ হতেই পারো
দিতেই পারো জ্যোৎস্না রাত্রি,
আমি পাহাড় তুমি যে চাঁদ
আমরা প্রেমের পথের যাত্রী

আসল প্রেম

আসল প্রেম
তোর রূপের আলোক মেখে
দিলাম ডুব সাগরজলে,
চিলেরা ওড়ে ওপরে, মোতি
খুঁজতে যাই তোর অতলে।

এ-সন্ধানে সাগরতলে
যা–কিছু আছে হয়েছে জানা
মুক্তাসম সমান দামি
তবুও আজ কত অজানা।

ক্লান্তি এসে চেপে ধরে না
এ-সন্ধানে রয়েছে মজা,
মোতি খুঁজতে খুঁজতে যেন
পাই হস্তে প্রেমের ধ্বজা।

আসল মোতি কোন ঝিনুকে?
উৎসাহটা জিইয়ে রাখা-
আলোর টানে প্রেম-বৃক্ষ
তোর আকাশে মেলছে শাখা।

এই আকাশ আমার তোর
আসল প্রেম পাখির মতো,
একসঙ্গে গাওয়া গানে
সারিয়ে তুলি জীবন–ক্ষত।

মনন বৃক্ষ

মনন বৃক্ষ
এ-কেমন বঙ্গ সমাজ
যে-বাঙালি মননে চালাত রাজ
তার আজ এ-কেমন হাল?
মনন সত্তার যে-বৃক্ষের গোড়ায়
জল ঢেলেছিল রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ বিদ্যাসাগর রামমোহন রায়
রবীন্দ্রনাথ নজরুল সুভাষচন্দ্র,
সেই বৃক্ষের পাতারা সবুজতা হারিয়েছে।
গোড়ায় জল না দিলে এই হবে পরিণাম।
আগে রাস্তায় হাঁটতে গেলে
মোড়ে বটের পান্থশালা থাকত-
বিশ্রাম নিত সকলে।
বিপদের গন্ধে সখ্য সংবেদনশীল মন নিয়ে এগিয়ে আসত।
এখন দেখি যুবক বন্ধুত্বের বুক পাথরে নির্মিত-
ভাবাবেগ বন্ধ আর পাকস্থলীতে দেখি
মাদক দ্রব্যের কারুকাজ,
মাথায় দেখি বিকৃত নিউরোন।
তাহলে কি এই শীতে পাতাগুলো ঝরে যাবে?
নদীমাতৃক দেশটা মরুভূমি হবে মননে?
মনে হয় তা সত্যি হবে না।
কারণ সাধারণ মানুষ আজ
জেগে উঠেছে, হেঁটে চলেছে
সেই মহীরুহের দিকে মিছিল করে, প্রত্যেকের হাতে চেতনার মন্ত্রপূত জলের পাত্র।
এগিয়ে চলেছে, এক এক করে জল ঢালছে গোড়ায়। মনন বৃক্ষ বাড়ল বলে।

জয় আসবেই

জয় আসবেই
তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী-
তোমার ভাবনার ব্রেন রয়েছে
সংবেদনশীল হৃদয় রয়েছে,
বিজ্ঞান রয়েছে সাথে।
যেতে পারো মুহূর্তে দূরের দেশে
তুমি চাইলেই উড়তে পারো আকাশে
ভাসতে পারো বাতাসে
যেতে পারো চাঁদে
যেতে পারো সাগরের অতলে,
পাতালেও প্রবেশ করতে পারো।
বিভিন্ন বিষয়ে অবিরাম চর্চা
করেছে তোমাকে দক্ষ।
দক্ষতা দেখিয়েছ সাহিত্যে শিল্পকলায় বিজ্ঞানে,
কখনো ভূগোলে ইতিহাসে অঙ্কে।
তোমার বিজয়রথ পৌঁছে গেছে সর্বস্তরে।
তবু কেন যুদ্ধ লড়াই চলছে,
কাকে হারাবার জন্যে?
তবু কেন খুন রক্তপাত-
তোমার উদ্দেশ্য কোন অভিমুখে?
ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে কেন?
বিকৃত মানসিকতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছ?
তুমি এতে নিজে নিজেকে পরাজিত করছ।
জিততে যদি চাও তুমি
মানবিক হওয়ার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলো-
চেতনার চর্চা হোক বেশি করে।
মন্দ কিছু ঘটবে না।
জয় আসবেই একদিন।