প্রাণের কাব্য

প্রাণের কাব্য
তোমার কথা বুঝতে বুঝতে
বাড়ে রাতের গভীরতা,
মনাকাশে তারার মতো
ফুটে ওঠে কিছু কথা।

কিছু কথার মানে ধরতে
কত–না ঢেউ সাগরে বয়,
বুদ্ধসম ধ্যান করেও
কিছুর অর্থ অধরা রয়।

তোমার কিছু মিষ্টি কথায়
সব ইন্দ্রিয় হয় জাগ্রত,
চিত্র থেকে স্পর্শ গন্ধ
শব্দ পেয়ে হই বিব্রত।

তোমার চোখের ভাষা পড়লে
আমি যেন হই গো ধন্য,
নতুন রূপের সন্ধান পেয়ে
বাঁচি আমি তোমার জন্য।

তোমার প্রেমে মজে দেখি
তোমার মুখটা সকল স্থানে,
তুমি আমার প্রাণের কাব্য
তুমি মলম ক্ষতস্থানে।

দায়িত্ব কর্তব্য বোঝা

দায়িত্ব কর্তব্য বোঝা
রাস্তা যখন পেরোতে হবে
ক্রসিং পেরোনো সুবিধে
কেন ধরব নিচের সাবওয়ে
কেন চড়ব ওভারব্রিজ ?
এমন শর্টকাটে মজা আছে
অ্যাডভেঞ্চারের টান আছে
বাড়তি দায়ের নেই ঘ্রাণ
অল্প খরচে অনেক প্রাপ্তি
অল্পে যেন বাজিমাত।
দুর্ঘটনা হতে পারে–
এই বোধ ঘুমিয়ে পড়েছে।
দায়িত্ব কর্তব্য বোঝা
নিয়ে হাঁটে সব বোকা–
এই মানসিকতা জেগে উঠছে ধীরে
সকল ঘরে সকল মনে।
দায়ের লাগাম না থাকলে
উন্নতির সিঁড়ি কাছে আসে না,
সাফল্য পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
যখন দেখি সময় নেই।

সে সময়

সে সময়
ক্যালেন্ডারের পাতা বদলে দেয় এর হাত-
বদলের গতিবেগ মন্থর হয় না পথ অমসৃণ বলে।
আসলে সে যেন মাটিতে নয় ওপরে চলে।
লেনদেন নেই তার কারো সঙ্গে
কচি পাতা কচি কলি দেখার সময় নেই
কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর দেখতে থামে না সে,
ঝরনার রুপোলি রূপ টানে না তাকে।
পিঠে তার নির্দিষ্ট গতির দায়ের বোঝা
অঙ্গীকারবদ্ধ চোখে তার যেন ঠুলি বাঁধা
মাটিতে হাঁটে না, তাই সে উড়ন্ত।
ইতিহাসের সব পাতা পড়া
দাসপ্রথার নির্যাতনের সাক্ষী–
বর্তমানের রোজনামচা তার জানা
পথশিশুর খিদের সাক্ষী সে
তার চোখে ঠুলি বাঁধা-
অশ্রুপাতের প্রমাণ নেই।
সে সময়

তুমি আমার প্রিয়

তুমি আমার প্রিয়

তুমি আমার প্রিয় কারণ
তোমার মনে বিশেষ দোর-
অটোমেটিক ব্যবস্থাতে
বেজায় খুশি আপনজন।

সেন্সরটা খুব সহজে
ধরতে পারে কুজন কারা,
দোর বন্ধ তাদের তরে
কড়া হাতেই নিয়ন্ত্রণ।

তুমি আমার প্রিয় কারণ
তোমার মনে বিশেষ সেতু-
সব বন্ধু আপনজন
চিনতে পারে অনায়াসেই।

যখন তারা সাঁকোয় চাপে
বরণ করা গানটা বাজে,
আদর করা আপ্যায়ন
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে।

মায়া-মমতা-ভালোবাসার
আবাস যেন তোমার মন-
ক্লোন করে তা বিলিয়ে দেব
গড়ে উঠুক শুদ্ধ ধরা।

আমার কবিতা

আমার কবিতা
করোনা কালে বিরক্তি তাই তোমার নিকটে আসা,
চুম্বকের আকর্ষণে তোমার অথই জলে ভাসা।
হাবুডুবু খেতে খেতে কতবার আমি যে ভেবেছি-
আলাদা পথে চলেই যাব তবুও কি তা পেরেছি?
দূর দেশে পাড়ি দিতে ধরি নতুন দিকের রাস্তা,
ভেবেছিলাম থাকব সুখে দেব না তোমায় পাত্তা।
দূরে গিয়ে মনে পড়ে তোমার রূপের কারুকাজ,
পারি না ভুলতে কেন তোমার অলংকারের সাজ!
চলার রাস্তাটা ঘুরে-ফিরে পৌঁছোয় তোমার কাছে,
মনে হয় তোমার নিকটে এক চুম্বকই আছে।
নানাবিধ পথ নানান উদ্দেশে গেছি বহুবার,
ভুলভুলাইয়া পথটা দেখায় ঠিকানা তোমার।

সারাদিনের প্রেম তুমি যে – আমার কবিতা,
দিনরাত্রি তোমার সাথেই আলাপচারিতা।

আমি পৃথিবী তুমি আকাশ

আমি পৃথিবী তুমি আকাশ
প্রতিদিনের আলাপচারিতা
আমার বাঁচার রসদ,
তোমার কুশল বিনিময়ে
আমি যে শস্যশ্যামল।
তোমার চোখের ভাব-বিনিময়ে
নদীতে জোয়ার ভাটা,
আমার নদী তাইতো ছোটে
সাগরের অভিমুখে।
তোমার কলম মাটির খাতায়
লেখে আমার আখ্যান,
তোমার কুশল বিনিময়
ভোলায় শতেক শোক,
ভুলি নির্বান্ধব আমি, ভুলি
নিমেষে সকল দুঃখ।
সবান্ধবে যখন মাটির বুকে
নেমে আসো রাতে,
হাত বুলিয়ে দাও যে মুছে
আমার ব্যর্থতার গ্লানি।
নিশ্চিন্তে ঘুমাই আর স্বপ্ন
দেখি আগামী ভবিষ্যতের।
মানুষ যতই অসহিষ্ণু হোক
আমরা থাকব পাশে-
সচেতনতার বার্তা দেব,
আমি পৃথিবী তুমি আকাশ

সেই উৎস

সেই উৎস
অজন্তা-ইলোরার স্থাপত্য শৈলী
বিষ্ণুপুরের টেরাকোটার কারুকাজ
শান্তিনিকেতনের শিল্পকলা
রাপ্তি নদীর ধারে শ্রাবস্তীর ভাস্কর্য
সন্ধান দেয়নি আসল শিল্পকলার।
দিশেহারা বিফল যখন তোমার মুখমণ্ডলে খুঁজে পাই শ্রেষ্ঠতম শিল্পকলা।

স্বপ্নের উৎস সন্ধানে ঘুরেছি কত
বিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশ-দেশান্তরে।
দিশেহারা বিফল যখন তোমার দর্শনে পাই সেই স্বপ্নের উৎস।

মন-সিক্ত-করা সঙ্গীতের খোঁজে কত সংগীতের পীঠস্থান গেছি, কত ওস্তাদের গান-না শুনেছি। যখন দিশেহারা বিফল তোমার বলা কথায় পেয়েছি সেই উৎস

কালের স্রোতে যখন আশা–প্রেরণার ভেলা ডুবে গেছে, ঘুরেছি কত–না নদী সাগর পাহাড় তার উৎস খুঁজতে।
দিশেহারা বিফল যখন তখন তোমার হাসি খুঁজে দিয়েছে সেই আশা–প্রেরণার উৎস ।

প্রেমকাহিনী দেখতে

প্রেমকাহিনী দেখতে

কোন শিল্পী গড়েছে চোখ
গড়েছে তোর মুখ,
অপ্সরাও তাকিয়ে দেখে
পায় যে বড় দুখ।

সম্মোহিত আমি হারাই
বাকশক্তি পলে,
স্রোতস্বিনী থামায় গতি
অনড় নৌকো জলে।

অজন্তা ও ইলোরা আজ
তোর সমুখে নত,
পলক ফেলা হয় না আর
দৃষ্টি বাণে হত।

অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে
কখন দিন কাটে,
জান লাগিয়ে কাজ করি না
রবি কখন পাটে।

সর্বনাশা শিল্প দেখে
কাজের গতি থামে,
প্রেমকাহিনী দেখতে চাঁদ
আকাশ থেকে নামে।

তোমার অনন্ত প্রেমধারা

তোমার অনন্ত প্রেমধারা
আমার আবাস আজ
বনভূমি- নিবিড় নির্জন,
স্নেহ–মায়া–মমতা বর্জিত
হিংস্র পশুরা করে গর্জন।

পরস্পর মারামারি হানাহানি
লেগেই আছে তাদের,
আমার সত্তা মন্দ সংস্পর্শে,
চোখে জ্বলে লোভের আগুন।

সেই আগুনের আঁচ
কাড়ছে সবুজ পাতা, নীরস করছে ভূমি।
শুধু তোমার প্রেম আনতে পারে
সেখানে এক প্রবহমান নদী।

সেই নদীর জলধারা আর
তোমার অনন্ত প্রেমধারা
ছড়াতে পারে আমার বুকে সবুজ রং,
পলকে পশুরা হবে নিরুদ্দেশ।

দক্ষতাটা

দক্ষতাটা
পুরোনো জামা পরে আরাম
তাই ফেলি না সহজে,
শুষে নিয়েছে দুঃখ–ঘাম
কষ্ট কম মগজে।

রুমালটার একই হাল
রাখি তাইতো পকেটে
শুষে নিয়েছে চোখের জল
চোখ হয়নি ঘোলাটে।

ঘামের তরে কষ্ট তাই
উদ্যমটা অশেষ,
বিষাদ শুষে রুমালটা যে
বন্ধু এক বিশেষ।

ঝোলানো জামা বহন করে
পথচিহ্ন হাজার,
ইতিহাসটা দেয় না দুখ
জীবন হয় মজার।

জামা রুমাল দুখ শোষণে
দক্ষতাটা শেখায়,
জীবন যেন এগোয় ধীরে
লক্ষ্য আছে যেথায়।