যতই

যতই

যতই মোরে আঘাত করো
স্বপ্ন আমি দেখবো তবু,
উত্তর মেরু অঞ্চল আমি
বরফহীন কি হই কভু?

যতই মোরে আঘাত করো
আশার ভুত তো যাবে না,
আশাবাদী রইবো মনে
মনের হদিস পাবে না।

যতই মনে গরল ঢোকাও
পাবে না যে হিংসা দ্বেষ,
আমি গভীর সমুদ্র এক
প্রেমের বারি হয় না শেষ।

যতই মোরে খন্ড করো
অখণ্ড তো আমার মন,
বদলাতে কি সফল হবে
আমার মনের গহীন বন?

যতই তুমি পাঁচিল তোল
করোই শুধু ভেদাভেদ,
ভাঙতে হবে ভাঙতে হবে
ভেবেই বাড়ে আমার জেদ।

কেড়ে নিতে পারো তুমি
যত আছে সম্পদ মোর,
স্বপ্ন আশা প্রেম লুকানো
বন্ধ আছে মনের দোর।

স্বপ্ন আশা প্রেম যে আছে
প্রাণের ধারা চলছে তাই,
আগ জ্বালাতে পাথর ঘষছো?
লাভ হবে না কোন ভাই।

হতাম যদি

হতাম যদি

আকাশ পথে চলছে যেন মেঘের গাড়ি সকল,
ট্রাফিক জ্যামের চিন্তা বিনা রহে সদাই সচল।
টোল প্লাজাতে ট্যাক্স লাগে না দারুন মজায় রয়,
দেশের সীমানা বাধা নয়, তাদের নেইকো ভয়?
সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ায় এমনি করেই তারা,
পরিচয়ের কাগজ ছাড়া ঘোরে বসুন্ধরা সারা।
এমনতরো অবাধ হতে পারতাম প্রভু যদি,
মনের সকল বেড়ি খুলে হতাম দুর্বার নদী।
খর স্রোতে ভাসিয়ে দিতাম দুর্নীতির ঐ গরল,
তখন সেথা উঠত গড়ে সমাজ এক বিরল।
সাম্প্রদায়িকতার আগাছা ভাসিয়ে দিতাম বানে,
সম্প্রীতি আর প্রেমের ধারা বইতো পরে সেখানে।
অনৈতিকতার বেড়াজাল পেতে রাখে যদি কেউ,
ফালাফালা করে ছিঁড়ে দেবে আমার প্রবল ঢেউ।
নীচতা শঠতা নৌকাগুলো ভাসতে ভাসতে এলে,
ঘূর্ণি স্রোতে ডুবিয়ে দেবই আমার বুকের জলে।
সমাজের যত পাপ আছে ধুয়ে মুছে দেব আজ,
তারপরেতে সমাপ্ত হবে আমার সকল কাজ।
কাজের শেষে তোমার টানে যাবই তোমার বুকে,
প্রভু তুমি আমার সাগর থাকব যেথায় সুখে।

ছন্নছাড়া

পথের টানে ঘুরে বেড়াই
ছন্নছাড়া আমি,
ঘরের মাঝে মন টেকে না
বাহির আমার দামি।

আমার সদা পা দুখানি
পথের উপর চলে,
সাগর আমায় হাতছানি দেয়
প্রতি পলে পলে।

নদীর জলে মনের নৌকো
সযতনে ভাসাই,
ঝর্না আমায় ডাকে যেন
আয় না মোরা পালাই।

পাহাড় চূড়ার সূয্যিমামা
আমায় যেন বলে,
আর কতকাল রইবি ঘরে
আয় না হেথা চলে।

বন বনানী সবুজ কেতন
উড়ায় আমার জন্য,
ঘরেতে মন রয় না যে গো
হবই এবার বন্য।

সবুজ পাতার গন্ধ শুঁকে
যাব নদীর তীরে,
শুনব সেথা মাঝির গান যে
ভাটিয়ালি সুরে।

এমনি করে আনন্দ যে
আসবে প্রতি পলে,
জীবনটা মোর কাটবে মজায়
লোকে ক্ষ্যাপা বলে।

ছন্নছাড়া

 

চাঁদ তুমি কার

চাঁদ তুমি কার

চাঁদ তুমি কার বলতে পারো ?
তুমি খোকার -যার কপালে টিপ পরাবে তুমি ?
মনের মত কোন সে কপাল,- টিপ পরাবে চুমি?
যার কপালে নরম সজ্জা অট্টালিকায় পাতা,
বা যার কপালে আদর ছড়ায় ফুটপাতের ওই মাতা ?

চাঁদ তুমি কার ? তুমি রাতের ওই তারাদের?
পুরুষ নারী প্রেম পূজারী, তুমি তাদের?
কাব্য লেখা ওই কবিদের? সাহিত্যিকদের?
এদের চোখের ক্যামেরা বুঝি তোমার হাসি ধরতে পারে ?
ঘরের ছাউনি নেই গো যাদের
তারা কি আর তোমায় দেখে আনন্দেতে ভাসতে পারে?

চাঁদ তুমি কি নদীর বুকের, নীল সমুদ্রের ,-জোয়ার ভাঁটা চলছে যেথায়?
তুমি ছাড়া নদী হারায় নাব্যতা, লিখে যেত বালুচরে বিলীনতা ।

চাঁদ তুমি কার বলতে পার?
তুমি কি ওই রাতে ঘোরা সব প্রাণীদের ?
তুমি ছাড়া রাতে তাদের বিচরণ যে বন্ধ হত I
তাই কি তারা ধীরে ধীরে এই পৃথিবী থেকে বিলীন হত?

বৈজ্ঞানিকরা করছে যারা তোমায় নিয়ে গবেষণা,
তুমি তাদের কাছের অতি, সেই কথাটা বলতে মানা?

চাঁদ তুমি যে সকলের তাই।
তোমার আশিস স্নিগ্ধ হাসি পাক না সবাই,
পাক না সকল প্রাণীজগৎ।

রস

রস

পাশাপাশি দুটো পাত্রে, ফুটন্ত রস আগুন জ্বালে;
ঠান্ডা হলে ঢালা হবে, বনের সকল বৃক্ষমূলে।

হিংসা ঘৃণা আর দ্বেষ, প্রথম পাত্রে ফুটছে জোরে;
প্রেম প্রীতি ভালোবাসা, দ্বিতীয়টিতে ফুটছে ধীরে।

অভিন্ন জ্বালানি জ্বলে, তবে কেন এমন প্রভেদ?
কমবেশি স্ফুটনাঙ্ক, ফোটায় নির্যাস জোরে ধীরে?

বনে যত বৃক্ষ আছে, তার অর্ধেক চিহ্নিত করে,
প্রথম পাত্রের রস, ঢেলে দিলাম তাদের মূলে।

অবশিষ্ট বৃক্ষমূলে, দ্বিতীয় পাত্রের ঢালি রস ।
বনের কেমন হাল, গিয়ে দেখি সপ্তম দিবস।

বিস্মিত হলাম দেখে, গাছগুলোর হাল এমন
অচিহ্নিত বৃক্ষ হাসে, অবশিষ্ট মৃতপ্রায় যেন।

অপেক্ষাতে বসে রই, প্রেমে মানুষ কবে হাসবে
প্রেমরসে সিক্ত তারা ধন্য করবে ভুবন কবে?

আটা সাফ

আটা

আটা ফেলেছে ঘরের স্টোর রুমে কে বা কারা।
চুপ করে আছে। কিছু তো বললো না তারা।
দোষ করলে চুপ করে থাকা এটাই কি রীতি এটাই কি ধারা?
উল্টোও দেখা যায়। যেমন, চোরের মায়ের বড় গলা। বড় গলা বড় বুলি। কে বা তাদের ঘাঁটায়।

এখনি আটা সাফ না করলে পায়ে পায়ে ছড়িয়ে যাবে পুরো ঘরে।
পরিস্থিতি জটিল হবে।
সব ঘর দেখি সাদা পায়ের ছাপে গেছে ভরে। পায়ের ছাপ কি মেঝেতে পড়েছে, না বুকে এসে পড়েছে? তবেই না ঘর সাফ হবে। কেউ কি দায়িত্ব নেবে? কে করবে সাফ?
যে ফেলেছে সে, না যার বুকে লেগেছে?
এরকম একটা অবস্থা দেশজুড়ে। দায় যেন ঝেড়ে ফেলতে চায়।

সূর্য কি পৃথিবীকে আলো দেওয়ার দায়িত্ব এড়াতে চায়? অবশ্যই না।
কারণ সূর্যরা দায় এড়ায় না, দায় নেয়।
সেই সূর্যরা আসবে কখন?

ভালোবাসা

ভালোবাসা

ভালোবাসা অর্জন করায়
লক্ষ টাকার কামাই হারে,
ক্রেতা গ্রাহক ভালোবাসলে
তরতরিয়ে ব্যবসা বাড়ে।

ভালবাসা অর্জন করায়
সবার হৃদয় জুড়ে রবে,
প্রিয়জন তো বাসবে ভালো
সংসার তখন সুখের হবে।

বুকে যখন ভালোবাসা
সন্দেহ যায় নির্বাসনে,
আত্মবিশ্বাস জ্যোতি ছড়ায়
রবির লজ্জা প্রতি ক্ষণে।

ভালোবাসার অগ্নিশিখা
জ্বালিয়ে দেয় ঘৃণা বিদ্বেষ,
পুণ্য মন্দির হয়ে ওঠে
তোমার প্রিয় হৃদয় স্বদেশ।

পুণ্য যখন হৃদয় ভূমি
তীর্থ করতে আস্থা আসে,
থাকে সাহস হাতটি ধরে,
সফলতা ভাগ্যাকাশে।

ভালোবাসায় পাথর হৃদয়
গলে গিয়ে হয় যে তরল,
কৃষ্ণ খেল কলার খোসা
বিদুর পত্নীর ভক্তি বিহ্বল।

ভালোবাসা ভালোবাসা
আবার এসো সবার বক্ষে,
চিত্তশুদ্ধি করে সেথা
সুন্দর ধরা করো রক্ষে।

চিত্ত প্রদীপ

Prodip (প্রদীপ)

সবার মনেতে প্রদীপ রয়েছে
দেখতে পাই না মোরা,
গুপ্ত চাদরে গচ্ছিত ধন
খুঁজতে না পারে চোরা।

খুঁজতে খুঁজতে নাকাল নাবিক
দৃষ্টি এড়ায় দ্বীপ,
দিন চলে যায় বিপথে কুপথে
ভুলে যাই বুকে দীপ।

চেতনা তবুও জাগে না মোদের
মন্দ কাজেতে টান,
তোমার নিকটে প্রার্থনা প্রভু
খুলে দাও আলো বান।

এমনি করেই প্রভু তুমি যদি
চিত্ত প্রদীপ জ্বালো,
খুলে যাবে সব রুদ্ধ দুয়ার
ঘুচে যাবে সব কালো।

সকল চিত্ত আলোকিত হলে
দীপাবলি প্রতি পল,
অবচেতনার বিদায় তখন
দেশের প্রগতি ফল।

অন্ধকার রাত

অন্ধকার ঘরে.......

দীর্ঘতম রাত –অমাবস্যার রাত; এর কি শেষ নেই?

একেক প্রহরে একেক অন্ধকার
কখনো দেখি অশিক্ষার অন্ধকার,
মাথায় উপরে ডিগ্রির মুকুট।
কখনো দেখি নৈরাজ্যের অন্ধকার,
নামকরা শাসকের তকমা লাগানো।
কখনো দেখি হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ভুয়ো দেশপ্রেম,
যার মধ্যে লুকিয়ে আছে ঘৃণা আর স্বার্থের অন্ধকার।
কখনো হই নকলে নাকাল।
নকল খাদ্য, নকল ঔষধ – নকলের ছড়াছড়ি;
শুধুই নিকষ কালো কৃত্রিমতার অন্ধকার।
এই রাতের হবে কবে অবসান?

কোন এক শুভ মুহূর্তে কোন এক ঋষির আবির্ভাব হবে। তিনি এসে এক চুমুকে
এই অন্ধকারকে পান করবেন।
নতুন ঊষার নতুন সূর্যের উদয় হবে তখন।

মনটাই বেয়াড়া

বর্তমানে অবগাহন

একনাগাড়ে হেঁটেছি অনেকটা পথ ,
রোদের প্রকোপ সহ্য করে ।
বড়ই ক্লান্ত আমার দেহ। বিশাল দিঘি নিকটে ।
স্নান করতেই পারতাম। শীতল করতে পারতাম শরীরটা।
তবু কেন মন চলে যায় ফেলে আসা পথে -কত উন্মুখ দিঘির পাড়ে;
কিংবা চলে যায় সম্মুখের পরবর্তী পথে,
ভাবে এর চেয়ে ভালো দিঘির খোঁজ পাওয়া যাবে।
সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়? মনটাই আসলে বেয়াড়া
করতে চায় না বর্তমান সময়ে অবগাহন।
উপভোগ করব কি করে জীবনটা?
সে সর্বদা হাওয়ায় ভেসে কখনো পেছনের অতীতে চলে যায়-
যেখানে মজা করার আর উপাদান নেই,
কখনো কল্পনার ভেলায় ভেসে ভবিষ্যতে চলে যায়, তাতেই কষ্ট বাড়ে।
উপভোগ করা যায় না। জীবন হয়ে যায় নীরস।
তাই এসো হাতের নাগালে বর্তমানের দিঘিতে অবগাহন করি।