ভাবনা দোলায় দুলছে

ভাবনা দোলায় দুলছে

যুদ্ধ চলছে দুদেশে
শান্তি হুইলচেয়ারে,
আমার ভাবনা দোলায় দুলছে

পূর্ণচন্দ্র দেখে চোখ
খিদেয় জ্বলে উদর,
আমার ভাবনা দোলায় দুলছে।

স্বর্ণপদক ঝোলায় রাখা
দুঃস্থ খেলোয়াড় আর তার পরিবার,
আমার ভাবনা দোলায় দুলছে

ধর্ষণ-খুন-জখম নিত্যদিনের ঘটনা
চেতনা হুইলচেয়ারে,
আমার ভাবনা দোলায় দুলছে

শিক্ষা-স্বাস্থ্য-চাকরি বিক্রি
দুর্নীতি বসে সিংহাসনে,
আমার ভাবনা দোলায় দুলছে।

বিবস্ত্র প্রকৃতি কাঁদে
বহুতল আবাসনে এসির হাওয়া,
আমার ভাবনা দোলায় দুলছে

মানবতা মুমূর্ষু

মানবতা মুমূর্ষু
নির্জন বাড়িটা অসহায় আজ-
কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীটাকে নিয়ে।
বাঁচার আশা রয়েছে কি না
বলতে পারে ভবিষ্য!
কাছের সুজন ছিল যারা
চলে গেছে দূরে তারা।
এখনও কিছু খাবার ওষুধ পড়ে আছে
প্রাণবায়ু হয়নি নিঃশেষ।
স্বচ্ছ কাচের জানালা দেখে
যারা ছিল রোগীর দেখাশোনায়
ফেলে গেছে তারা তাদের মনের বর্জ্য
জানালার পাশে- যেখানে আকাশ এসে কথা বলে যেত, চাঁদের টুকরো হাসি
শোনা যেত জানালার কোণে কোণে।
আর এখন প্রতিটি রাতে
বনের পশুরা এসে সেই বর্জ্য চেটে তাদের পুষ্টি বাড়ায়। রোগীর ভয়ার্ত চোখ দেখে
তার স্বপ্নের বিনাশ। মানবতা মুমূর্ষু

ফিঙের নাচের কীর্তি

ফিঙের নাচের কীর্তি
গাছের পাতারা আলোকের জালে
খেলে যায় শুধু এমন প্রভাতে,
দূর আকাশের সূর্যটা খুশি
গাছের খুশিও উপচায় তাতে?

খুশির আবেশে বাতাস বাজায়
একতারা থাকা পল্লব ঘরে,
টুনটুনি আর দোয়েল ময়না
কণ্ঠ মেলায় তার সুরে সুরে।

কোত্থেকে এক ফিঙ্গক আসে
তালে তাল রেখে নৃত্য দেখায়,
ঘাসের গালিচা ধন্য হয়েই
নম্র রৌদ্রে স্নান করে যায়।

সহস্রবার জন্মাতে পারি
মেলবন্ধন এমন দেখতে,
প্রেরণা দায়ক চিত্রকল্প
পারিও জীবনে আঁকতে।

সেই ছবিটির শরীর রাঙানো
গলায় গানের স্ফূর্তি-
পারলাম কই রাখতে জীবনে
ফিঙের নাচের কীর্তি?

দাও-না এনে দুঃসাহস

দাও-না এনে দুঃসাহস
গতানুগতিক জীবনটা হারিয়েছে গতি,
বৈচিত্র্যহীন পথেই হাঁটা মনটা অস্থিরমতি।
দিচ্ছে বাধা পথের ঘর্ষণ বেহায়া বড়ই,
প্রভাবটা তার কাটাতে চাই কাটাতে চাই।

না কাটালে চোখে পর্দা, যায় না দেখা চাঁদের হাসি-
আবদ্ধ প্রাণ বাঁচাতে ভাঙছি,
ভাঙছি জানালা-শার্সি।

এমন বাধা কাটাতে চাই-
না কাটালে- বহাল যেন টানাগাড়ি টানতে।
সব ঋতু বিরক্তির পাউডার মেখে করছে যে জ্বালাতন,
বসন্ত আজ কোথায় গেল?
আসে না করতে আলাপন।

বাধাটা তাই কাটাতে চাই টানাগাড়ি চাই না টানতে,
দুঃসাহসের বলটা চাই ঘর্ষণের দুহাত ভাঙতে।
তাইতো প্রভু দাও-না এনে দুঃসাহস মনে-
পথের মুখে ঝামা ঘষেই পথের কাঁটা সরাই ।
জীবনটা হোক গতিশীল মজাদার,
হোক সুস্বাদু মালাই।

দেউলিয়া মনেপ্রাণে

দেউলিয়া মনেপ্রাণে

সাগরের ঢেউ ওঠে
দৃষ্টিটা আমার ছোটে-
তরঙ্গের খেলা দেখতে দেখতে
সেই সৌন্দর্যে আসক্তি বেড়ে গেল।
আকাশের চাঁদ দেখতে দেখতে
চন্দ্রাসক্তি বেড়ে গেল।
অবিরাম বৃষ্টিধারা দেখতে দেখতে
বৃষ্টির আসক্তি বেড়ে গেল।
টিভিতে নেতিবাচক দৃশ্য দেখতে দেখতে,
খবরকাগজে খুন-জখম-ধর্ষণ-দুর্নীতির কথা পড়তে পড়তে,
নাবাচক কাজের আসক্তি বেড়ে গেল।
টিভির টিআরপি বেড়েই গেল
খবরকাগজের বিক্রিও বেড়ে গেল।
খালি আমি আর দেশ দেউলিয়া মনেপ্রাণে
কারোর কি কিছু এসে গেল?

ডানা মেলা ভাবনারা

ডানা মেলা ভাবনারা
ভোরের আলোয় মনটা
আমার দরজা দিল খুলে,
জামাজুতো ব্যাগটা কাঁধে
যায় যে তারা স্কুলে।

ঘরটা তখন এক তপোবন
শান্তি করে বিরাজ,
হালকা হয়ে ধ্যানে বসে
শান্ত মনের স্বরাজ।

স্কুলটা তাদের দেয় গো পুস্তক
অনেক পড়ে তারা,
দিনের শেষে বাড়ি ফেরে
দেখে পাড়া সারা।

নিত্যদিনের এমন রুটিন
ছাত্রগুলো মানে,
ফিসফিসিয়ে কাব্যকথা
শোনায় তারা কানে।

রাতের বেলা আকাশ যখন
লক্ষ দিয়া জ্বালে,
কাব্যরেণু ভরা কুসুম
ফোটে গাছের ডালে।

কলম তখন লিখে চলে
কাব্য রাতের বেলা,
ডানা মেলা ভাবনারা যায়
আকাশগঙ্গার মেলা।

দাও পাঠিয়ে

দাও পাঠিয়ে
দাও পাঠিয়ে রোদের আগুন সূর্যদেবের হাতে-
শুদ্ধ করার শক্তি থাকুক সেই আগুনের গাতে।

দাও পাঠিয়ে রসাল ফল পরিশুদ্ধ খাদ্য,
পরম শুদ্ধির মুকুট পরে গ্রীষ্ম বাজাক বাদ্য।

বাজনা বাজে শুদ্ধি নাচে অশুদ্ধি যাক ছেড়ে,
মুক্তি পেয়ে শুদ্ধ সত্তা উঠুক হাত-পা ঝেড়ে।

দাও পাঠিয়ে বৃষ্টিধারা ভেজাক পাথর বুকের,
যাক-না গলে কঠিন মনন দিনটা আসুক সুখের।

সবুজ ফসল ফলুক আবার বৃষ্টিধারার কালে,
ইতিবাচক জোয়ার আসুক আবার মনন খালে।

শুচি শুভ্র শরৎ আনুক শুচিতা সব মনে,
আগমনি উঠুক বেজে হৃদয় কোণে কোণে।

উৎসবে সব উঠুক মেতে উৎসাহ থাক কাজে,
নেতিবাচক অসুর হারুক পালাক ভীষণ লাজে।

হেমন্তকাল দাও পাঠিয়ে সোনার ফসল ফলুক,
মনের ঘরে আশার আলো নবান্ন আজ জ্বালুক।

দাও পাঠিয়ে শীতের ঠান্ডা সবজি সবুজ করা-
সতেজতা আঁকুক ছবি দেখুক মনের ধরা।

ঋতুরাজকে দাও পাঠিয়ে মনে বাঁধুক বাসা-
মনের যৌবন থাক চিরকাল জীবনটা হোক খাসা।

মেঘের গতিপথে

মেঘের গতিপথে
আমার বাড়ির চাঁদোয়া-আকাশে
সুখের শুভ্র মেঘ উড়ে বেড়ায়-
মতিগতি তার অস্থির বড়ই
কখন কার বাড়ি পালায়।

পাখা মেলে সে ঘুরে বেড়ালে
পরিবারটা তার ছায়াতে-
হাসে ভালোবাসে আনন্দ ছড়ায়
আত্মীয়রা আসে অজুহাতে।

মাঝে মাঝে দেখি হঠাৎ আকাশে
চিহ্ন রাখে না কোথা সে যায় চলে,
জাদু কে দেখাল? দুঃখের অলক
পলকে এল সেথায় ইন্দ্রজালে?

কালো মেঘগুলো কত যেন কাছে
আঁধার পাঠিয়ে করে পরিহাস,
বিচলিত মন বিভ্রান্তির পথে-
হোঁচটে হারায় আত্মবিশ্বাস।

আঁধার-আশ্রয়ে নেই আলো জ্বালা
শাসনে শোষণে ব্যস্ত দুঃখ-রাজ,
সোফা খালি পরিজন বসে নেই
বিষাদের সুর বাজায় এসরাজ।

বিষন্ন প্রহরে বিষাদের সুরে
মাথাগুলো হয় একজোট-
মেপে নেয় তারা নিজেদের শক্তি
কারা বন্ধু কারা বা সাপোর্ট।

মেঘের সাদা বুক চেরা আলোতে
সুখের কপোত খুঁটে খায় দানা,
কালো মেঘে আকাশ ভরলে
কারা বন্ধু কারা বা স্বজন যায় জানা।

সাদা অথবা কালো মেঘের
গতিপথে জীবনটা ঘোরে,
সুখে-দুঃখ নাড়ুক-না কড়া
জীবন-প্রীতি যাবে না মরে।

এই শৃঙ্খল

এই শৃঙ্খল
এই শৃঙ্খল প্রকৃত অর্থে বাঁধেই না
দেয় খোঁজ এক অদৃশ্য মুক্তির-
যে-মুক্তি গচ্ছিত রাখে বিশেষ ঠিকানা
মেনে চলে যেন বয়ান চুক্তির।

চুক্তিটা বানানো নিজের সঙ্গে নিজের,
থাকে না ঝোলানো কারোর নির্দেশ।
মুক্তির আকাশ থেকে যায় তারা পাড়া
সোজা শিরদাঁড়া, নেই ছদ্মবেশ।

লুকিয়ে রাখার নেই কোন প্রয়োজন
অনায়াসে ঠিক পথ আসে চলে,
দুর্নীতির অবসর গড়ে সুন্দর সমাজ-
যা মানবতার কথা শুধু বলে।

চেতনার আংটা দিয়ে তৈরি এ-শৃঙ্খল
বেঁধে দিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সকল,
আচারবিচার কাজ মেনেই চলুক
এক সুস্থ জীবনের প্রোটোকল।

আনবে কোন সে বিমা

আনবে কোন সে বিমা
জীবনিবমা স্বাস্থ্যবিমা ঘরের বিমা
সুরক্ষার দেয়াল গড়েছে চারদিকে-
বিমা কোম্পানিরা এমনই বলে।
চোখগুলো তবু আপদেবিপদে
তাকায় কেন উপরদিকে?

বিমার দেয়াল গজিয়ে উঠেছে
সভ্যতার বেড়েছে বিস্তার,
তবু সুরক্ষা উধাও কেন
কেন ধর্ণায় লক্ষ বেকার?

বাজারে শিক্ষার বেচা-কেনা কেন
স্বাস্থ্য-পরিষেবায় কেন ব্যবসা,
পথে শৈশব ক্ষুধার্ত কেন
কেন প্রাণ মারে এত হিংসা?

বৃদ্ধাশ্রমগুলো ভরে ওঠে কেন
কেন বাকস্বাধীনতার মস্তক নত,
প্রকৃতি মাতা বিবস্ত্র কেন
কেন মানব-চেতনা নির্বাসিত?

মনের দূষণ সীমাহীন কেন
দুর্নীতি কেন সকল স্তরে,
ভীতি ও তার আত্মীয় স্বজন
কেন ঘাঁটি গেড়েছে মনের ঘরে?

আসবে কোন বিমাকোম্পানি
আনবে কোন সে বিমা
তোমার আমার স্বপ্নের সুরক্ষা দিতে?