সভ্যতা ভব্যতার সখ্যতা

সভ্যতা ভব্যতার সখ্যতা
শখের চিমনি ধোঁয়া ছাড়ে
চাকা যে উড়োয় ধুলো,
অসভ্যতা বিদায় দিতেই
দিচ্ছে বাতাস কুলোর।

গড়ানো চাকা উঁচু চিমনি
দেয় ছড়িয়ে সভ্যতা,
ধোঁয়া-ধুলোর তিলক পরে
মানুষ ভাবে যোগ্যতা।

শ্রেষ্ঠ প্রাণীর যোগ্যতাতেই
অবাসযোগ্য এই ভুবন,
বাসযোগ্য করার উদ্দেশ্যে
চাঁদে চলে কত অভিযান।

তালুবন্দি ভবের ভাবনা
হারিয়ে গেছে কংক্রিট বনে,
সভ্যতা এগোয় চক্র বাসে-
ভব্যতা পিছোয় সংগোপনে।

সভ্যতা ভব্যতার সখ্যতা হোক
আগামীদিন তাকিয়ে থাক,
চক্র বাসে দুজন চাপুক
উধাও হোক ধরার দুর্বিপাক।

সাহস জাহাজ

সাহস জাহাজ

এত ভয়ের ঠান্ডা এখানে
হাত পা বুঝি তুষার,
সাহস জাহাজ চলবে কি
সেটাই শুধু দেখার!

তুষারে ফাঁসা জাহাজ যেন
হরিণ বাঘের মুখে-
চলার শক্তি হারিয়ে গেছে
মুখটা কাতর দুখে।

কাতর মুখে আনত চোখে
অপেক্ষা কেন কে জানে?
আগুন জ্বালা মনোভাবটা
গেছে বুঝি নির্বাসনে?

সে-মনোভাব আসুক ফিরে
চোখে জ্বালাক অনল,
শিরদাঁড়াটা রাখুক সোজা
সাহসের দাবানল।

দাবানলের আগুন তেজে
বরফ হোক-না পানি,
চলুক জাহাজ সাহসিক
ভয়ের শুরু ফোঁপানি।

মুখের চোখের মনের ভাষা

মুখের চোখের মনের ভাষা
অক্ষরের কাঁধে চেপে যে-ভাষা সামনে আসে
সে-ভাষা সবার চেনা কত আপনার,
তবু কেন কবিতা দুর্বোধ্য?

মুখের কথার ভাষা যখন বেরিয়ে আসে
সে-ভাষা সবার চেনা,
তবু কেন সে-মুখ লাগে অচেনা?

কিছু কিছু আঁখির অক্ষর পড়া বড়ই সহজ,
সে-ভাষা নীরব তবু সকলেই বোঝে,
কারণ মনের দরজা তাদের অবারিত দিনে রাতে সাঁঝে।

কিছু কিছু চোখের ভাষা বোঝা বড় কঠিন-
অণুবীক্ষণ যন্ত্রও পড়তে পারে না,
কারণ রুদ্ধ দোরের ওপারে লুকিয়ে থাকে আরেক মানুষ বড়ই অচেনা।

মুখের চোখের মনের ভাষা একে অপরকে বলছে কাছে আয় হাত মেলাই-
তা দেখে বিশ্বাসযোগ্যতা নামক প্রজাপতি বলছে এবার বাগানে উড়ে বেড়াই।

কারোর তৃপ্তি

কারোর তৃপ্তি
পাখি ওড়ে আকাশটাতে উড়ালে তার তৃপ্তি,
খাঁচার মধ্যে থাকলে বসে আসবে কি সেই প্রাপ্তি?
খিদেয় জ্বলা উদর ফোলা রুটি দেখে চাঁদে,
তেমন তৃপ্তি আসে না যে মনটা শুধু কাঁদে।
রুটি পেলে খিদে মিটলে আসল তৃপ্তি আসে,
স্বর্গীয় সুখ হার মানে তায় মুখটা মৃদু হাসে।
খুঁত ধরাটা কারোর তৃপ্তি না করলে মুড মন্দ,
সারাটা দিন গুমোট মেঘলা থাকে না তার ছন্দ।
কেউ বা আবার তৃপ্তি খোঁজে গুণকীর্তন করে,
আরেক জনে তাতেই যেন জ্বলে পুড়ে মরে।
বইয়ের সাথে মিত্রতাতে কারোর কাটে সুখে,
সঙ্গ ছেড়ে যায় না বন্ধু বিরক্তি নেই মুখে।
সোজা পথে হাঁটার তৃপ্তি দামি কারোর কাছে,
কারোর তৃপ্তি মাংস ভাতে কারোর ভাতে মাছে।
কারোর তৃপ্তি সৃজন কাজে কারোর ধ্বংস কর্মে,
কেউ বা খোঁজে ভ্রমণে সুখ কেউ বা খোঁজে ধর্মে।
যে-সব তৃপ্তি মূল্যবোধে বড়ই আঘাত হানে,
তেমন তৃপ্তি হোক-না উধাও জীবন খুঁজুক মানে।

শূন্য আমার আবাসন

শূন্য আমার আবাসন
আজ সকালের বৃষ্টিপাতে
ভিজেই গেল মনাঞ্চল,
ভিজেই গেল আবেগগুলো-
কেমন যেন আজ চঞ্চল।

চঞ্চলতার তুলি চলে
তোমার রাখা ছবিতে,
আবছা রেখা স্পষ্ট হলে
তুমি এলে ভঙ্গিতে।

ইতিহাসের পাতায় রাখা
প্রেমের হলুদ পাতাটা
পড়ুক খসে, প্রেম-মানচিত্রে
ওঠে জেগে রাস্তাটা।

চেনা রাস্তা চেনা ভঙ্গি
বুকে আঁকে কাহিনি,
দৃশ্যপটে রঙিন তুমি
মনোলোভা মোহিনী।

ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি ছিল
ছিল একটি আতপত্র,
সিক্ত হল দুটি মাথা
বৃষ্টি যেন প্রেমপত্র।

প্রেমের চিঠি ছিঁড়ে হঠাৎ
কেড়ে নিলে সিংহাসন,
স্মৃতি নামক আসবাবেও
শূন্য আমার আবাসন

দীঘা উপকূল

দীঘা উপকূল

একটা দিন একটা রাত দীঘা উপকূল
রবার হয়ে মুছে প্রহর যত প্রতিকূল।

ছবি আঁকার উৎসাহে যে পেনসিলটা দ্রুত
দেয় ভরিয়ে খাতার পাতা হয় না যে ক্লান্ত।

আঁকা ছবি জ্যান্ত বুঝি স্পর্শে শিহরন,
পাপড়ি খোলা ফুলে অলির মধু আহরণ।

অবাধ্য ঢেউ আছড়ে পড়ে বেলাভূমি বুকে,
রক্ত প্রবাহে তরঙ্গ ওঠে পাতা হাসে সুখে।

কুড়িয়ে আনা সুখ ঝিনুকে আছে মায়াবল-
শুষে নিল দুঃখ-বিষ, সুখ নিমেষে ডাবল।

সাগর জলের গন্ধমাখা অন্তরের দেহ-
রঙিন হয়ে দেয় ছড়িয়ে ভালোবাসা স্নেহ।

তারই রেশে প্রদীপ জ্বলে কতক্ষণ থাকে?
কংক্রিটের নিঃশ্বাস এখন নেভাবে কি তাকে?

প্রশ্নগুলো

প্রশ্নগুলো
হাড় কাঁপানো ঠান্ডা আসে
টাক ফাটানো রোদ ও আসে-
মন ভেজানো বৃষ্টি কই?
কোথায় গেছে সে কোন দেশে?

আমগাছেরা ফল ও ছায়া এখনো দ্যায়
ফুল ও ছায়া বকুল বৃক্ষ এখনো দ্যায়-
বট অশ্বত্থ কোথায় গেল ভাই?
সেই অচিনপুর আছে কোথায়?

ময়ূর নাচার দৃশ্য দেখি বেশি
টুনটুনির ও কিচিরমিচির শুনি বেশি,
পায়রার সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত-
চড়ুইরা কি হচ্ছে অবলুপ্ত?

ঘরে ঘরে স্নানের ঘর আজ
স্নানটা সারে সবাই সেথা,
কজন সারে পুকুরে স্নান?
অব্যবহার মজায় পুকুর
মজায় দিঘি বাড়ছে দূষণ
পরিযায়ী পাখিরা কি ক্ষুণ্ণ এখন?

কোথায় পেলাম প্রশ্নগুলো? ঢুকল কানে?
উত্তর শুনব না আর- তুলো কানে।

চাঁদ-তারা হয়েছে নিখোঁজ

চাঁদ-তারা হয়েছে নিখোঁজ
ওয়াশিং মেশিনের বাড়ে কদর
উল্কা গতিতে ছুটছে দর,
দেহের মনের জামায় ময়লা
সাফ করবে এটি সত্বর।

এই মেশিনে কাচিয়ে নিলে
সময় বাঁচে বাঁচে না দাগ,
দৈহিক শ্রমের নেই প্রয়োজন
গ্যারান্টি তার একশোভাগ।

বিজ্ঞাপনের কেরামতিতে
দোকানগুলোয় ভিড় বেশ,
ক্লেদমুক্তি আশু প্রয়োজন
প্রয়োজন সাফ অঙ্গ-বেশ।

উপরিভাগের দাগ মেটাতে
সাধারণ মেশিন সক্ষম আজ,
অন্তরে ক্লেদ, সাফা করতে
কোন মেশিন করবে কাজ?

হিল্লিদিল্লি বিদেশবিভুঁই
সেই মেশিনের নেই যে খোঁজ
ক্লেদ-মেঘে আকাশে তাই
চাঁদ-তারা হয়েছে নিখোঁজ

কাব্য তুমি

কাব্য তুমি
একলা থাকি তোমার সাথে
সংগোপনে ঘরের কোণে,
বন্ধ থাকুক ঘরের কপাট
স্বর্গ নামে সন্তর্পণে।

খুনশুটিতে সময় গড়ায়
নততলে গড়ায় দিবস,
ভাঙ্গি গড়ি তোমার দেহ
সৃষ্টির নেশা করে বিবশ।

বউয়ের সঙ্গে হয় না কথা
চা-টিফিনে সময় দেওয়া,
ঝরনা গড়ে কাব্য-নদী
সৃষ্টিসুখের বহে হাওয়া।

শব্দরাজি বড়ই পাজি
দেয় না ধরা অনায়াসে,
উপাদানের বড়ই অভাব
হাতড়ে খুঁজি মনাকাশে।

সারাদিনভর এমন চললে
ব্যথা এসে মারে টোকা,
কাব্য তুমি দাও না ধরা
ব্যর্থ আমি বুড়ো খোকা।

এমন একদিন আসে আবার
সব উপাদান কড়া নাড়ে-
কলম চলে তরতরিয়ে
তোমার দেহের বৃদ্ধি বাড়ে।

তোমার আমার হৃদ্যতাতে
আকাশ ভরে সুখের অলক,
তোমার চোখের সাগর টানে
হাজার জন্ম হই অপলক।

আমি জীবন

আমি জীবন
তোমার আশ্লেষ উষ্ণ হলে
ছড়াই স্নিগ্ধ উত্তাপ,
ভালোবাসলে আমায় তুমি
দেব লোহিত গোলাপ।

পাথর ভাবলে পাথর বনি
প্রতিক্রিয়া আমি-
প্রতি ধাপে সঠিক ক্রিয়া
আমার কাছে দামি।

যেমন রূপে চাইবে আমায়
তেমন সাজতে পারি,
হরেক স্বাদের জন্যে বানাই
হরেক রকম কারি।

ইতিবাচক ভাবনা কাজে
আমার জেল্লা বাড়ে,
সফলতার মুকুট তোমার
সবার নজর কাড়ে।

উলটো ভাবনা উলটো কাজে
ভরাও যদি ঝোলা,
আমি তখন বন্দুক হাতে
ছুঁড়ি দুঃখের গোলা।

আমি জীবন তোমার কর্মে
গড়ায় আমার চাকা,
সঠিক ক্রিয়াকাণ্ড হলে
দিই না তেমন ধোঁকা।