পথ চেয়ে চেয়ে

পথ চেয়ে চেয়ে
তোমার আসার পথ চেয়ে চেয়ে
সুখের পায়ের জলছাপ অশ্রুবারি
শুকিয়ে গেল আকাশে-
বেদনার আঙুল কাটছে বিলি
আমার মাথার চুলে, রাত বড়ই ভারী বাতাসে।

এখনো ভুলিনি আমি চায়ের কাপেতে বেজে ওঠা হাসি,
স্মৃতিরা আজও কান পেতে শোনে
হারিয়ে যাওয়া বাঁশি।

অভিমান তির ছুঁড়েছিলে বুকে
ভাঙল বাঁধ জোর আঘাতে,
অথই সলিলে দুকুল ভাসল
এক বুক জল সম্পর্কের খেতে।

হাঁটতে হাঁটতে হই ক্লান্ত
অক্লান্ত স্মৃতির চোখ
তবুও হয়েছে দীর্ঘায়ত।

বেঁচে থাক আমার স্মৃতি-আকাশ
বেঁচে থাক প্রাণ আর দৃষ্টি,
জ্বলো না ফানুস হয়ে
জ্বলো তুমি চাঁদ হয়ে।
এসো তুমি মেঘ হয়ে
একটু না হয় অসময়ে হোক বৃষ্টি।

একেকটা পল

একেকটা পল
একেকটা পল একেকটা ফুল
রূপেগন্ধে তৃপ্তি পাক সকল ইন্দ্রিয়।
সে বলে সুন্দর তুমি বল আহা
আমি বলি আছে এতই বাহার?

একেকটা পল আকাশের নীল
অপলক দৃষ্টি কুড়োক নীলিমা,
নীল মেখে বাঁচি তুমি বল সেও বলে
আমি বলি আছে কই রসদ বাঁচার?

একেকটা পল কচিকাঁচা মুখ
সরল হাসিটা দিক তৃপ্তি সুধা,
সে বলে কী মিষ্টি তুমি বল মধুমাখা
আমি বলি ভালো লাগে না আমার।

একেকটা পল রং কি বদলায়
আমার তোমার তার কাছে?
দৃষ্টিপথ ধরে অনুভূতি বেরোলেই
মুহুর্তের মানে যায় জলদি বদলে।

সুন্দর অনুভূতিতে দৃষ্টিটা গভীর-
উপভোগের মুহূর্ত বানায় জীবন।

বিপদের আঁকা

বিপদের আঁকা
হঠাৎ দেখি নির্জন দ্বীপ জলে ঘেরা
আমি একা,
মাথার ওপরের আকাশে
ফন্দি আঁটা দৈত্যকায় বাজ-
চোখে তার বড় খিদে
আমার অস্থিরতা চিল্লায়
কে আছো বাঁচাও?
কাছের দূরের কেউ নিকটে আসে না।
চেনা ঘর চেনা জন চেনা পথ গেল বা কোথায়?
বুঝলাম আমি নির্বাসিত।
আঁশটে গন্ধ মনের দোরে দেয় ধাক্কা-
বুঝলাম এই দ্বীপ এই বাজপাখি চারদিকের সাগর বিপদের আঁকা

হৃদয়ের টানে

হৃদয়ের টানে
আমরা দুজনে হৃদয়ের টানে
কত কাছাকাছি আজ এসেছি,
প্রেমের পুষ্প ফোটাবার ক্ষণে
কত ফুলরেণু দেহে মেখেছি।
প্রেমের ছবির অর্ধেক এঁকে
তোমাকে দিয়েছি ক্যানভাসটা,
পূর্ণ ছবির মাধুরী দেখেই
লজ্জা পেয়েছে স্বয়ং স্রষ্টা।
হোক আমাদের পর্ণ কুটির
চারদিকে বেড়া ভালোবাসার,
হিংসা ঘৃণার বদমাস চোর-
পলায়ন করা কৃষ্ণসার।
বাগিচায় কত রোপণ করেছি
হরেক রকম বিটপীর চারা,
হৃদয় নিংড়ে তাদের মূলেতে
দিয়েছি মিষ্টি জলের ধারা।
আদর যত্ন সোহাগ শ্রদ্ধা
বৃদ্ধি করেছে তরুর হাসি,
তাদের যৌবনে স্পর্ধা এনেই
করেছে তাদের প্রেম পিয়াসি।
প্রেমের স্নেহের আবহে জন্ম
নিয়েছে বৃক্ষে ফল ও ফুল,
জীবনটা তাই হোক মনোরম
প্রণয় ফোটাক কদমফুল।

অসহিষ্ণু জাঁতা

অসহিষ্ণু জাঁতা
মেঘের নামটা অসহিষ্ণুতা
লিখছে যেথায় সেথায়,
কখনও তা মনের পাতায়
বা নৈসর্গিক খাতায়।

কোনো পাতা নেই খালি আর
লেখার নেইকো বাকি,
পড়তে পড়তে হচ্ছে সৃষ্টি
নানান ঠোকাঠুকি।

তারই ফলে বৃষ্টি রোদ আর
ঝড়ের বেশি দাপট,
মনটা ছেড়ে সহিষ্ণুতা
দিচ্ছে জলদি চম্পট।

তাইতো আঘাত-প্রত্যাঘাতের
হচ্ছে চিত্র আঁকা,
ভালোবাসা স্নেহের ঝুলি
রয়ে গেল ফাঁকা।

ভালোবাসা স্নেহ কাঁদছে
কাঁদছে সহিষ্ণুতা,
সময়টাকে দিচ্ছে পিষে
অসহিষ্ণু জাঁতা

সময়ের বিচারক

সময়ের বিচারক

সময়ের বিচারক বসা বর্তমানের চেয়ারে।
বেড়াল পুষলে বেড়াল ছানা
আর গরু পুষলে বাছুর পাবো
এই রীতির বেদিমুলে রাখা
তার বিচার ব্যবস্থা।
নিখুঁত বিচার দেখে মনে হয়
সিসিটিভির ফুটেজে রাখা বিচারক দৃষ্টি।

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কর্মফল হাতেনাতে
পেয়ে পুনরায় ভুল কাজ করা
এ যেন এযুগের ফ্যাশন।
এতে শুধু মহুয়ার গন্ধ
লাস্যময়ী নারীর আহ্বান
এড়াতে পারে না কেউ।

“পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে”
প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর এখনকার জীবন।

পায়রা দিই উড়িয়ে

পায়রা দিই উড়িয়ে
একটা পায়রা দিই উড়িয়ে
ডানায় লিখে এক ঠিকানা,
মাস পেরিয়ে বছর এল
তবুও সে যে এল না।

আরেক পায়রা দিই উড়িয়ে
আরেক ঠেকের পিনকোড লেখা,
মাস পেরিয়ে বছর এল
কোথায় পেলাম তারই দেখা?

অন্য নতুন ঠিকানাটা
নিয়ে গেল পায়রা অন্য,
বছর শেষে সে এল কই
কোথায় করল আমায় ধন্য?

বাঞ্ছা আমার হয়নি পূরণ
ঠিকানাগুলো হয়নি জানা,
বিবেকবুদ্ধি চেতনা প্রেম
খুঁজতে খুঁজতে পায়রা কানা?

অন্বেষণের ব্যর্থতাতে
নাকাল হলাম আমি বুঝি,
হারানো ওই মানবতা
সময় পথে হাতড়ে খুঁজি।

মডার্ণ সময়

মডার্ণ সময়

সময় এখন মডার্ণ অনেক
মডার্ণ জীবনযাপন,
পলক ফেলতে খাদ্য ঘরে-
অতি দ্রুত ভ্রমণ।

পলক ফেলতে বাজারহাট তাই
ড্রয়িং রুমটা হাসে,
ওষুধ দোকান ওষুধ নিয়ে
নিমেষে যে আসে।

পায়ের নেশা হোক না বন্ধ
নাই বা হল হাঁটা,
কলিংবেলে ডেলিভারি
বয় দেয় শুধু চাঁটা।

আবার যাদের পান্তা ফুরোয়
লবণ আনতে আনতে,
মডার্ণ সময় পায় না সময়
তাদের কথা ভাবতে।

মডার্ণ সময় মানুষ বাছে
দেখে না লাল রক্ত,
প্রান্তিক জীবন কেঁদে মরে
সময় তাদের তিক্ত।

মতদানটা পবিত্র থাক

মতদানটা পবিত্র থাক

টিভি-পর্দা ভেদ করে বেরিয়ে আসছে ভোটের এগজিট পোল-
ফোকাস করা টর্চের আলো ছড়িয়ে পড়ছে
দিকে দিকে,
হিংসা ও ঘৃণার ডালপালা জড়ো করে
কে বা কারা করছে অগ্নিসংযোগ।
অধিকারের প্রয়োগ শেষ, পেশিশক্তির
শুরু প্রয়োগ।
দোষারোপের আগুন এত, কোথাও ছ্যাঁকার দাগ নেই?
শালীনতা নগ্ন এত নেই প্রয়োজন আতশিকাচের,
মুখ-মুখোশের লড়াইতে মুখটা মুখ লুকিয়ে বাঁচে।
ভোটের সময় বিপৎকাল সব মানুষকে দেয় চিনিয়ে,
ভোট ফুরোলে অন্য মুখোশ, মুখের ভাষা যায় বদলে।
মতদানটা পবিত্র থাক নিক-না সকলে দায়,
হিংসা ঘৃণার প্রতিযোগিতায় কি গণতন্ত্র মুখটি লুকায়?

বিষয়াভাবে

বিষয়াভাবে
সকাল থেকে মাথা খারাপ
খুঁজে চলেছি কলমখানা,
কলম পেয়ে অন্য স্থানে
হারিয়ে ফেলি বিষয়খানা।

বিষয়াভাবে বড়ই দুখি
নয়ন ভরা লবণ জল,
চোখও মন অন্ধ হল
পায় না খুঁজে বিষয় কল।

কেউ বা বলে বই পড়তে
কেউ বলে যে যাও ভ্রমণে,
কেউ বা বলে আড্ডা দিতে
কেউ বলে যে বস-না ধ্যানে।

মুরাকামি যে ছুটত জোরে
বিষয়গুলো ধরত হাত,
মগজ হতে সৃষ্টিধারা
চিনিয়ে দিত তারই জাত।

বিষয়গুলো দূর থেকে যে
আমায় যেন দেখতে থাকে,
বই পড়াতে মন বসালে
আদর মাখা কন্ঠে ডাকে।

সেই ডাকেতে না দিলে সাড়া
তারা আবার হারিয়ে যায়,
পেনের কালি যায় শুকিয়ে
লেখে না তাই পাতার গায়।