সময়ের বিচারক

সময়ের বিচারক

সময়ের বিচারক বসা বর্তমানের চেয়ারে।
বেড়াল পুষলে বেড়াল ছানা
আর গরু পুষলে বাছুর পাবো
এই রীতির বেদিমুলে রাখা
তার বিচার ব্যবস্থা।
নিখুঁত বিচার দেখে মনে হয়
সিসিটিভির ফুটেজে রাখা বিচারক দৃষ্টি।

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কর্মফল হাতেনাতে
পেয়ে পুনরায় ভুল কাজ করা
এ যেন এযুগের ফ্যাশন।
এতে শুধু মহুয়ার গন্ধ
লাস্যময়ী নারীর আহ্বান
এড়াতে পারে না কেউ।

“পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে”
প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর এখনকার জীবন।

পায়রা দিই উড়িয়ে

পায়রা দিই উড়িয়ে
একটা পায়রা দিই উড়িয়ে
ডানায় লিখে এক ঠিকানা,
মাস পেরিয়ে বছর এল
তবুও সে যে এল না।

আরেক পায়রা দিই উড়িয়ে
আরেক ঠেকের পিনকোড লেখা,
মাস পেরিয়ে বছর এল
কোথায় পেলাম তারই দেখা?

অন্য নতুন ঠিকানাটা
নিয়ে গেল পায়রা অন্য,
বছর শেষে সে এল কই
কোথায় করল আমায় ধন্য?

বাঞ্ছা আমার হয়নি পূরণ
ঠিকানাগুলো হয়নি জানা,
বিবেকবুদ্ধি চেতনা প্রেম
খুঁজতে খুঁজতে পায়রা কানা?

অন্বেষণের ব্যর্থতাতে
নাকাল হলাম আমি বুঝি,
হারানো ওই মানবতা
সময় পথে হাতড়ে খুঁজি।

মডার্ণ সময়

মডার্ণ সময়

সময় এখন মডার্ণ অনেক
মডার্ণ জীবনযাপন,
পলক ফেলতে খাদ্য ঘরে-
অতি দ্রুত ভ্রমণ।

পলক ফেলতে বাজারহাট তাই
ড্রয়িং রুমটা হাসে,
ওষুধ দোকান ওষুধ নিয়ে
নিমেষে যে আসে।

পায়ের নেশা হোক না বন্ধ
নাই বা হল হাঁটা,
কলিংবেলে ডেলিভারি
বয় দেয় শুধু চাঁটা।

আবার যাদের পান্তা ফুরোয়
লবণ আনতে আনতে,
মডার্ণ সময় পায় না সময়
তাদের কথা ভাবতে।

মডার্ণ সময় মানুষ বাছে
দেখে না লাল রক্ত,
প্রান্তিক জীবন কেঁদে মরে
সময় তাদের তিক্ত।

মতদানটা পবিত্র থাক

মতদানটা পবিত্র থাক

টিভি-পর্দা ভেদ করে বেরিয়ে আসছে ভোটের এগজিট পোল-
ফোকাস করা টর্চের আলো ছড়িয়ে পড়ছে
দিকে দিকে,
হিংসা ও ঘৃণার ডালপালা জড়ো করে
কে বা কারা করছে অগ্নিসংযোগ।
অধিকারের প্রয়োগ শেষ, পেশিশক্তির
শুরু প্রয়োগ।
দোষারোপের আগুন এত, কোথাও ছ্যাঁকার দাগ নেই?
শালীনতা নগ্ন এত নেই প্রয়োজন আতশিকাচের,
মুখ-মুখোশের লড়াইতে মুখটা মুখ লুকিয়ে বাঁচে।
ভোটের সময় বিপৎকাল সব মানুষকে দেয় চিনিয়ে,
ভোট ফুরোলে অন্য মুখোশ, মুখের ভাষা যায় বদলে।
মতদানটা পবিত্র থাক নিক-না সকলে দায়,
হিংসা ঘৃণার প্রতিযোগিতায় কি গণতন্ত্র মুখটি লুকায়?

বিষয়াভাবে

বিষয়াভাবে
সকাল থেকে মাথা খারাপ
খুঁজে চলেছি কলমখানা,
কলম পেয়ে অন্য স্থানে
হারিয়ে ফেলি বিষয়খানা।

বিষয়াভাবে বড়ই দুখি
নয়ন ভরা লবণ জল,
চোখও মন অন্ধ হল
পায় না খুঁজে বিষয় কল।

কেউ বা বলে বই পড়তে
কেউ বলে যে যাও ভ্রমণে,
কেউ বা বলে আড্ডা দিতে
কেউ বলে যে বস-না ধ্যানে।

মুরাকামি যে ছুটত জোরে
বিষয়গুলো ধরত হাত,
মগজ হতে সৃষ্টিধারা
চিনিয়ে দিত তারই জাত।

বিষয়গুলো দূর থেকে যে
আমায় যেন দেখতে থাকে,
বই পড়াতে মন বসালে
আদর মাখা কন্ঠে ডাকে।

সেই ডাকেতে না দিলে সাড়া
তারা আবার হারিয়ে যায়,
পেনের কালি যায় শুকিয়ে
লেখে না তাই পাতার গায়।

ফুল অকালে পড়ছে ঝরে

ফুল অকালে পড়ছে ঝরে
আপ্তবাক্য পড়তে শুনতে
নেই আগ্রহ সময় ধৈর্য,
তবে আগ্রহ-জোৎস্না ঝরে পড়ে হোয়াটসঅ্যাপের প্রান্তরে সোশ্যাল মিডিয়ার খরস্রোতা নদীতে।

কানে হেডফোন ব্যস্ততা সবসময়-
নিত্যদিনের বাজার করা থলেটা হাতেই এলে, মেজাজটা হয়ে যায় খাপ্পা
হাজার দোহাইয়ের বৃষ্টিপাত-
তাতে ভিজে বৃদ্ধ বাবা ছুটছে বাজারে আনাজপাতি কিনতে।

দায়িত্ব কতটা ভারী
সে-বুদ্ধি টনটনে, এড়িয়ে চলাই একমাত্র লক্ষ্য। হাজার বাহানা থাকে রেডি।

নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির আবহ পেয়ে
বেড়ে ওঠা শৈশব যৌবন হারিয়ে ফেলেছে
দেখার দৃষ্টি শোনার কান অনুভূতির ইন্দ্রিয়।
তাদের অফুরন্ত বুদ্ধি-সাহসের ফুল অকালে পড়ছে ঝরে, দেবতারা তাই অর্ঘ্যই পাচ্ছে না।

তুমি যখন হাসপাতালে ছিলে

তুমি যখন হাসপাতালে ছিলে

তুমি যখন হাসপাতালে ছিলে-
স্টিফেন জনসন সিনড্রোম করেছিল কাহিল
খুঁজছিলে জীবনটাকে হাতড়ে হাতড়ে,
বসে ছিলাম তখন আমি নিরাশ নদীর পাড়ে।
লেডি ডাক্তার বন্ডটা যেই দিল আমায় সই করতে,
সামনের নদীর উত্তাল ঢেউ আসছিল যেন মারতে।
তোমার ফোলা শরীরটা যখন ধীরে ধীরে
ওষুধ ও ইনজেকশনে সাড়া দিতে শুরু করে,
ঢেউগুলো যেন যেত দূরে সরে।
তুমি লড়ছিলে হাসপাতালে অক্লান্ত,
আমি লড়ছিলাম ঘরেতে অনভ্যস্ত
ছিল না হাতে অস্ত্র।
মফস্‌সলের ডাক্তারের ভুলে প্রাণের আশঙ্কা
শহুরে ডাক্তার দিল তোমায় সারিয়ে।
দুজনের প্রাণ হাঁফ ছেড়েই বাঁচল।
রাখে হরি মারে কে?

খাপ খাওয়ানো

খাপ খাওয়ানো
মনের মতন হয় না কিছুই
জীবন মানিয়ে নেওয়া,
ভারসাম্যেই মনোযোগ দিয়ে
সামনে এগিয়ে যাওয়া।
ভাল্লাগেনার লিস্টি থাকলে
হোক-না ত্বরায় ছিন্ন,
মানিয়ে-নেওয়া-বাস না পরলে
শত খেদ করে ক্লিন্ন।
পোশাকটা তাই ভীষণ জরুরি
জরুরি নিজের বদল,
খাপ খাওয়াতে ব্যর্থতা মানে
শুরু হয় শুধু কোঁদল।
কোঁদলের ভয় পরিবার মাঝে
ঢোকেও পাড়ায় সমাজে,
খাপ খাওয়ানো হোক না মুখ্য
শিরদাঁড়া থাক মেজাজে।
মেরুদণ্ডের থাক ঋজু রেখা
থাক না পোশাক প্রণালী,
জীবন ভাসুক জোছনার বানে
আকাশে চন্দ্র চৈতালি।

রাগ

রাগ করে কেউ কেঁদে ফেলে
গলাবাজি কেউ বা করে,
মুখটা কারোর কয় না কথা
মনের মাঝে আগুন ঝরে।
কারোর আবার রাগ হলে যে
হৃদয় ঘরে মারে তালা,
তাদের চোখে অগ্নিশিখা
সবার দেহে বহ্নিজ্বালা।
হতেই পারে এক দাবানল
অগ্নিশিখা জল না পেলে,
মনের সবুজ পুড়েই যাবে
কার্তুজ ভরা কি রাইফেলে?
লোডেড রাইফেল বিপজ্জনক
শান্তি ভাঙা হিংসা ঘৃণা,
ছোবল মারতে উদ্যত কি
মহা নাগের মহা ফণা ?
অগ্নিশিখার নির্বাপণে
থাক না জলের শীতলতা,
ঠান্ডা চিন্তা চিত্রকল্প
নিক না শুষে অস্থিরতা।

ক্ষতি করলে

ক্ষতি করলে

পরের ক্ষতি করলে শুধু
অন্য জনে আঘাত পায়,
ভুল যে তোমার ভাবনাখানা
বুঝবে যত সময় যায়।

মন্দ বীজে মন্দ ফসল
মানতে তুমি পারনা,
কালের স্রোতে বদলে যাবে
তোমার মনের ধারণা।

থাকলে মনে মন্দ চিন্তা
মন্দ মতির স্থায়ী বাস,
পরের ক্ষতি করতে যাবে
লাগবে তোমার গলায় ফাঁস।

শুরুতে সে ফাঁসের ব্যথার
অনুভূতি পায় না গল,
ধীরে ধীরে কালের স্রোতে
দুঃখ বাড়ে হরেক পল।

ভেবেছিলে ভুল টিকিটে
পৌঁছাবে সুখ স্টেশনে?
যাত্রা শেষে দুখের দাগটি
লাগে জীবন বসনে।