প্রাণের বান্ধব

প্রাণের বান্ধব

প্রাণের বান্ধব হয়ে এসো
সময়ের দূত হয়ে এসো না গো-
কেন-না সময় করেছে অচল
হৃদয় নদীর স্রোত।
শুকিয়ে গেছে হৃদয়, চোখ-
কালে কালে তাই হৃদয়ে পাথর,
অক্ষিকোটরে যে পাথরের চোখ।

দেওয়া-নেওয়া বন্ধ আজ তাই হৃদয় অক্ষম,
পাথরের মত কঠিন নির্দয় কাজে দেখাই যত উদ্যম।
যান্ত্রিকতা তাই ছুটছে কেতন হাতে,
সলিলের দেখা নেই আর সমবেদনা-প্রপাতে।

চোখ দৃষ্টি হারিয়েছে কবে
অশ্রুবারি জন্মায় না আজ,
প্রতিবেশীর কষ্ট দেখেও
আমার কপালে পড়ে না ভাঁজ।
ভালোমন্দের বিচার ঘরে কে মেরেছে তালা?
বেঠিক পথের হাতছানি ঝরায় লোভের লালা।
ভালোবাসা আজ পাথর চাপা
দেখেও কাঁদে না চোখ,
এসো বন্ধু এবার এসো বাঁচাও তোমার ভুলোক।

আমায় জড়িয়ে ধরুক-না তোমার উষ্ণ আশ্লেষ-
গলিয়ে দিক তা হৃদয় পাথর
কৃত্রিম দৃষ্টির করুক বিনাশ,
সমব্যথায় হোক সজল চোখ।

ভালো মানুষ

ভালো মানুষ
ভালো মানুষ বড্ড একা
আপদবিপদ বানায় বোকা খুব সহজে,
মন্দ মানুষ সংঘবদ্ধ
অপদবিপদ ঘটায় তারা অনায়াসে।

সমীকরণ এমন তাইতো
অন্ধকার খুব ঘন হয়,
পাতলা আলোর বানানো তির
কেমন করে ছিন্ন করে ঘন আঁধার ?

বাড়বাড়ন্ত শয়তান আঁধার
দেশের বৃদ্ধি আটকে রাখে,
স্বাধীন দেশের বয়স বাড়ে
তবু কেন হয়নি বড় ভাবনা চিন্তায়?

বড় ভাবনার জন্য চাই বড় হৃদয়
বড় হৃদয় হাজার প্রদীপ-
জ্বালতে পারে অনায়াসে ভাবনা শিখা।
এমন প্রদীপ সৃষ্টি করা দেশের দায়,
এতে আছে সৃষ্টি কর্তার বড় সায়।

সঠিক শিক্ষা সঠিক পুস্তক দিক-না গড়ে
লক্ষ শৈশব বিদ্যালয়ে, হোক-না তারা
লক্ষ প্রদীপ জ্বালুক ত্বরা লক্ষ শিখা,
ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারা আঁধার পর্দা দিক-না ছিঁড়ে।
সংঘবদ্ধ হবে আবার ভালো মানুষ।

চার দেয়াল

চার দেয়াল
ঋজুরেখায় শিরদাঁড়া তোদের
কাঁধে রাখিস ছাদের ভার,
শুধু দিনরাত পাহারা বেষ্টনী
বৃষ্টি রোদের মুখটা ভার।

চার দেয়াল, তোদের মাঝে
পরিবার তার স্বপ্ন বোনে,
সাক্ষ্য রাখে তোদের শরীর
সকল ছবি ছাদটা গোনে।

সম্পর্কের আলপনা আঁকা
মেঝের বুকটা ওঠে ফুলে,
রঙিন ঘরের ছবিখানা
তোদের গলায় যেন ঝোলে।

তোরা শুধু বাঁচিয়ে রাখিস
ঘরের ভেতর কৃষ্টি সৃষ্টি,
সুখ-দুঃখ কামড় দিলেও
কেমন করে হাসিস মিষ্টি?

তোরা আছিস তাইতো ঘর
থাকার খাওয়ার আশ্রয়,
বিচারবুদ্ধি সঠিক থাক
পরিবেশ শান্তিময়।

আমি শৌখিন সভ্যতা

আমি শৌখিন সভ্যতা
প্রথম যখন হাঁটা শুরু
দুচোখে বুনেছিলাম স্বপ্নজাল।
প্রশান্তির স্রোত ছিল রক্তে,
চোখের মুখের কোণ থেকে
হাসি ঝরে পড়ত অজান্তে।
সমুদ্রের তরঙ্গ দেখলে আমার মনটা গাঙচিল হয়ে উড়ত পাখনা মেলে।
ছেড়েছিলাম কখন গুহার আবাস,
ছেড়েছিলাম কখন গহিন বনজঙ্গল-
স্মৃতি থেকে গেছে আজ মুছে।
হেঁটেছি অজস্র পথ,
অবিরাম হাঁটছি এখনো নাগরিক পথে-
পায়ের পেশি শক্ত হয়েছে।
সময়ের সুসজ্জিত আয়নাতে
যখন দেখি নিজেকে, মুখে দেখি আঁকা
গাম্ভীর্যের কারুকার্য, গেল কোথায় নিষ্পাপ ভাব!
অনিদ্রা চোখের কোলে সাক্ষর করেছে,
ক্লান্ত চোখ রাতের আঁধারে ব্যস্ত ঘুমের আরাধনায়।
মুখমন্ডল এখন ধূসর পাথর
হৃদয়ে হৃদ্যতা নেই নেই ভালোবাসা,
চারদিকে ছড়ানো যন্ত্রণা ক্ষত-
যত হাঁটছি তত ঝরছে রক্ত।
আমি শৌখিন সভ্যতা – ক্লান্ত অবশ পা।

বন্ধু আমি

বন্ধু আমি

বন্ধু আমি কালের স্রোতে
উৎসাহহীন হয়েছি আজ,
বিষাদ আগে জ্বলে গেছে
অনুপ্রেরণার সকল সাজ।

শ্রমের প্রহার খেয়ে খেয়ে
কালশিটে দাগ দেহে মনে,
প্রেরণা-বাম ক্ষতে দিয়ো
চাঙা করো মনে প্রাণে।

পাহাড় থেকে ঝরনার উদ্যম
এনো বন্ধু আমার তরে,
বন্ধু এমন সিক্ত করো
নিরাশ ধুলো ভিজেই মরে।

আকাশগঙ্গা থেকে আনা
জলে আমায় করো সিক্ত,
সেই সলিলের স্পর্শ করুক
অনুপ্রেরণায় সম্পৃক্ত।

চোখের মনের চোখ বদলাবে
দেখবে পৃথ্বী প্রেরণাময়,
মঙ্গলজনক কর্ম আনবে
বসুন্ধরায় সেই সুসময়।

মৌচাক

মৌচাক
মৌচাক – মধুর সংরক্ষণ,
মধু-সৃষ্টির কর্মে ব্যস্ত
কর্মী মৌমাছি, সারাটা জীবন
সঁপে দেওয়াতে অভ্যস্ত।

কিলোমিটারের হিসেব রাখলে
হবেই ব্যর্থ মধু আহরণ,
মধুগ্রন্থির মধুরস দিতে
কুসুম সকল করে কি বারণ?

শতেক ফুলের অবদান আর
মধুকরদের পরিশ্রমটা-
উপেক্ষা আর মধু চুরি করে
অমানবিকতা বাজায় ঘণ্টা।

খাদ্য মজুত মধুচক্রেই
খারাপ সময়ে আশিস আনছে,
নিজের স্বার্থ চরিতার্থেই
অপরের ঘর মানুষ ভাঙছে।

এমন মন্দ কাজের ফল তো
পাচ্ছে মানুষ হাতেনাতেই
হাজার দুখের মধুকরগুলো
হুল ফোটাচ্ছে প্রতি পলেতেই।

শৈবালের ফাঁদ

শৈবালের ফাঁদ

শৈবালের ফাঁদ পাতা থাকে
চোখ পথভ্রষ্ট পদক্ষেপে,
অসতর্ক অস্থিরতা হোক
ফাঁদ কি তখন হাসি চাপে?

পদস্খলন শব্দ করলে
হাসির ফোয়ারা যাবে খুলে,
শৈবালসম মানুষরাও
লুকিয়ে আছে সমাজ তলে।

তাদের সাথে সখ্যতা মানে
পিছল আঙিনায় পা-রাখা,
অসাবধানি দৃষ্টিভঙ্গিতে
কপাল শরীর ধুলোমাখা।

এমন শৈবাল দেশজুড়ে
রয়েছে আজ সকল স্তরে,
সাফ না করলে প্রতিক্ষণে
বিপদ যে সাথে সাথে ঘোরে।

বিপদের সঙ্গে সহবাস
প্রত্যেক দিনের অভিজ্ঞতা-
ঢাক বাজিয়ে জানায় যেন
বদল আনার অক্ষমতা।

ঘরে অতিথি

ঘরে অতিথি
প্রবাস বাস লাগেই ভালো
যদি তা হয় সাময়িক
কে চায় ঘরে প্রবাসী সুখ,
ঘরে অতিথি আবাসিক?

সেই অতিথি কর্তা কথায়
কাজের বেলা মেহমান,
বাকিরা নিক দায়ের ভার
ভাগের বেলা অসমান।

এমন প্রথা বর্তমানে
কার্যকরী হলে ঘরে,
ঘর যে আর ঘর থাকে না
সদ্ভাবটা দূরে সরে।

ঘনিষ্ঠতা প্রবাসে যায়
খিটিমিটির বড় ফাঁস,
কেউ কাউকে মানে না তাই
অরাজকতা বারোমাস।

কথার মারে আঘাত পেয়ে
সংসারটা শুধু কাঁদে,
দায়িত্বটা কাঁধে নিলেই
ঘরটা নিজ প্রচ্ছদে।

প্রেমিক পিকের শুধু

প্রেমিক পিকের শুধু
অবিরাম কুহুতানে কোকিল কাহিল
কোথা গেল তার পিকী প্রেম অনাবিল-
যায় চলে ঋতুরাজ যায় মরশুম
অকালে কি ঝরে যাবে প্রেমের কুসুম?

যখন সময় ছিল ছিলে তুমি যুবা
অবহেলা দান করে হয়েছিলে বোবা।
ভেবেছিলে পিকী যেন শুধুই তোমার
অধিকার দেখিয়েছ মাননি গ্রামার।

সময় থাকে না থেমে মানে না যে হেলা
এখন কি লাভ হবে ডেকে দুই বেলা?
সময়ের কাজ ফেলে করেছ আরাম
ঘণ্টী বাজিয়ে কখন চলে গেছে ট্রাম।

অধিকার নয় পিক থাক শুধু প্রেম
নীরব কাজেতে থাক মনোযোগ হেম।
মুখে শুধু রব নয় থাক প্রেম চিঠি
প্রেমিক পিকের শুধু থাক মিঠা দিঠি।

এসো বৃষ্টি

এসো বৃষ্টি

এতদিন গ্রীষ্মের ক্রোধাগ্নি
পুড়িয়েছিল বাতাস-
পোড়া পোড়া গন্ধ ভরা পরিবেশে
আবাসন উৎকর্ণ ছিল,
শোনেনি কোনো কূজন উচ্ছ্বাস।
সামান্য বৃষ্টি ঝরায়
সমীর-শরীরে জ্বালা উপশম।
উদ্বাস্তু পাখিরা খুঁজে পায়
কারণ খুশি দেখাবার,
আবাসন খোঁজে ছন্দ
দিনের কোলাহলে আবার।
অলিন্দেরa অলস শরীর
উপোষ ভাঙে ঠান্ডা পানীয়ে,
গ্রীষ্মের অরাজকতা শেষ করে
বর্ষা ধীরে আসে কি জানিয়ে?

তবু চাষির অদৃষ্ট কাঁদে
কাঁদে খেতের জমিন
জীবনের রস নেই
কল্পনার, ফসলের মূলে ।
এসো বৃষ্টি – সরস সৃষ্টির বীজ দাও পুঁতে, প্রকৃতির প্রসাধন হোক প্রকৃত ফসলে।