আসবে কবে

আসবে কবে
তুমি যদি আসতে নেমে এই মাটিতে,
শুভবোধের নির্যাস ভরা পাত্র হাতে-
এক এক ফোঁটা দিতে তুমি প্রতি মুখে,
এক নিমেষে বদলে যেত এই রুক্ষ ধরা –
কত কারুকাজ চোখে পড়ত তার শাড়িতে।
বদলেই যেত আমার সবার কাজের পৃথিবী,
বদলে যেত আমার সবার আঁধার আকাশ-
সেখানে উঠত হাস্যরতা চৈতালি চন্দ্রিমা।
সেরে উঠত মনের দুরারোগ্য ক্ষত,
বিকৃত মানসিকতা জ্বলে হত ছাই।
হৃদয়ের বাগানটা আবার সেজে উঠত-
শরতের শিউলিতে আর রাঙা গোলাপে।
সুগন্ধি সহৃদয় বাতাসে ঘুরে বেড়াতে পারত নির্ভয়ারা অশেষ নির্ভয়ে।
এই অন্তিম চাওয়া পূর্ণ করতে আসবে কবে?

শুধু ভালবাসতে চাই

শুধু ভালবাসতে চাই
তোমাকে চাই এ-দুঃসময়ে-
কারণ তুমি যে সুসময় পাওয়ার পথটা বাতলে দাও।
বিফল হলে তোমাকে চাই-
কারণ তুমি যে উৎসাহ দাও সফলতা-চুড়োয় পৌঁছোতে।
তোমাকে চাই ক্লান্তিতে-
কারণ তুমি শিখিয়ে দাও প্রাণবন্ত থাকার মূলমন্ত্রটা।
তোমাকে চাই দুঃখে-
কারণ তুমি খুঁজে দাও সুখ দুঃখের মাঝে।
তোমাকে চাই অসুস্থ হলে-
কারন তোমার হাত ধাত্রীবিদ্যার জাদু দিয়ে নিমেষে আমাকে সুস্থ করে তোলে।
তুমি কাছে এলে পরাজয়ের গ্লানি ভুলে যাই-
কারণ তুমি আমাকে পরের বারে জয়ের জন্য তৈরি করে দাও।
আমি আকাশের চাঁদ চাই না,
তোমাকে ছুঁয়ে বেঁচে থাকতে চাই।
আমি সুইজারল্যান্ড যেতে চাই না,
আমি দেশের মাটিতে ভালোবাসার স্বর্গ বানাতে চাই।
তোমাকে শুধু ভালবাসতে চাই

জেলে ভরে দিয়ো

জেলে ভরে দিয়ো
যেদিন রঙিন প্রজাপতি, রঙিন কুসুম শত্রু হবে,
যেদিন গান-গাওয়া পাখি রজনিগন্ধা ভালো লাগবে না-
সেদিন আমাকে জেলে ভরে দিয়ো
যেদিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি নারীকে ঘৃণা ছুঁড়ে মারব,
যেদিন ঝরনার উচ্ছ্বাস আর রাতজাগা চাঁদ দেখে হিংস্র হয়ে উঠব-
সেদিন আমাকে জেলে ভরে দিয়ো
যেদিন শিশুর আদর মায়ের স্নেহ আমার চোখে জ্বালা ধরাবে,
ভালোবাসা আর শুভবোধকে যেদিন সাগরে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেব-
সেদিন আমাকে জেলে ভরে দিয়ো
উষার নরম আলো যেদিন দেবে না উৎসাহ ,
যেদিন আঁধার রাজ্যে প্রবেশ করব,
যেদিন মানবতার পরাজয় দেখে উল্লাস করব-
সেদিন আমাকে জেলে ভরে দিয়ো
আমার মাথাটা যেদিন দম্ভ বিগড়ে দেবে,
সত্যিকারের বন্ধুকে শত্রু ভেবে নেব,
হৃদয়ে শুভ আবেগের জোয়ার ভাটা বন্ধ হয়ে যাবে,
সৌন্দর্য শিল্পকলার পায়ে বেড়ি পরাব-
সেদিন আমাকে জেলে ভরে দিয়ো

আমি বানভাসি

আমি বানভাসি
বন্যার কারণ লেখা দড়িটাকে টানাটানি চলছে-
মনে হয় যেন টাগ অফ ওয়ার চলছে।
আমার ঘর থেকেও ঘর নেই,
চতুর্দিক জলময় তবু পেয় জল নেই,
পেট ভরাবার খাদ্য নেই।
ভোটের অধিকার তো আছে,
জল-খাদ্য-আশ্রয়ের অধিকার নেই।
কেউ আবার জলে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলছে,
কেউ আমার দুচোখের করুণ আর্তি দেখেও আমায় কিছু বলতে বলছে।
তোমরা যা করবে করো কোনো অসুবিধে নেই, শুধু একটাই আমার চাওয়া যা আমি চিৎকার করে বলছি-
খাবার জল দাও, খাদ্য দাও,আশ্রয় দাও।
জানি না কখন কার কানে এই চিৎকার প্রবেশ করবে,
জানি না কবে এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পাব চিরতরে?
আমি বানভাসি

 

হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকছে

হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকছে
মনের দেয়ালে শত ছিদ্র-
আদিম যুগ তাই ঢুকে পড়েছে।
ভাবনার গায়ে পোস্টার লাগানো
তাতে আদিমতা সাক্ষর করেছে।
সভ্যতার চাকায় লেগেছে ধর্ষণ-খুন-হিংসার রক্ত।
তির ছুঁড়ে- চলছে শিকার,
হরেক তিরের ফলায় হরেক বিষ।
এই বিদ্যায় পারদর্শিতা বেড়েই চলেছে
পোশাক পরা সভ্যতার হরেক কাজে।
আসল বিদ্যা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে দেয়ালে
মাথা ঠুকেই মরছে,
কখনো রাস্তায় বসে অনশন করছে চাকরির আশায়,
ডেলিভারি বয় হয়ে কখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে,
কখনো প্রতিবাদী মিছিলে হাঁটছে রাস্তায়।
কখনো হতাশ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে।
আদিম বিদ্যায় পারদর্শিতা হঠাৎ যেন শিরদাঁড়াকে মাটির সমান্তরাল করে দিয়েছে।
তাই কি টাই পরা মানুষগুলো আজ হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকছে আবার প্রাচীন গুহায়?

বানভাসি লোকগুলো  

বানভাসি লোকগুলো  

শরতের উপাখ্যান গেল জলে ডুবে
বিচারের আশা-দীপ এই বুঝি নেভে!
ঘর ভাসে পথ ভাসে আর ভাসে মন
দোষের তির নিক্ষেপে ভীত ত্রাণ-ক্ষণ।
বেশি বকা কম কাজ সময়ের রীতি
বানে ভেসে ভুলে প্রাণ সব পরিমিতি।
প্রাণ ভোলে উৎসব, বলে ত্রাণ চাই
জল খাদ্য ও আশ্রয় কোথা থেকে পাই।
ফিবছর দোষারোপ ফিবছর ভাসা,
বেনোজলে ভেসে গেছে কাশ দেখা আশা।
ঢেউ তোলা কাশ বন ঢেউ দেখে জলে,
বলে মাগো এত দুঃখ মানুষকে দিলে?
বানভাসি লোকগুলো কেন পড়ে ফাঁদে,
তার দায় কে বা নেবে কার প্রাণ কাঁদে?
কে বানাল চক্রব্যূহ কারা ফেঁসে মরে,
সমব্যথী কে আছে গো এসে হাত ধরে?

আশা করেছিলাম

আশা করেছিলাম
আমি তোমার কাছ থেকে আর একটু সাহস একটু ভালবাসা আশা করেছিলাম,
এই শুষ্ক মরু-বুকে একটু বৃষ্টিধারা আশা করেছিলাম,
এই বিধ্বংসী প্লাবনে ভরসার তরণী আশা করেছিলাম
কিন্তু তুমি ভয়ানক ভয় পেলে
দোষারোপ করতে শুরু করলে।
ভেবেছিলাম আশার শুকতারা দেখতে পাব,
ভেবেছিলাম ভালোবাসার গোলাপ হাতে পাব,
ভেবেছিলাম সবুজ সতেজ পৃথিবী পাব,
ভেবেছিলাম পাশে থাকা বন্ধুত্ব পাব,
পরিবর্তে পেলাম দোষারোপ করার ঘন কালো মেঘ-
সেখানে শুধু বিদ্যুৎ চমকানি,
বৃষ্টির ছিটেফোঁটা নেই।

খাতার সন্ধান চলছে

খাতার সন্ধান চলছে
ছলনার ছায়াতে কালের পিঠে চেপে
কত-না অভিনয় দেখালে,
মোহ আর মায়ায় বুঝতে পারিনি তা
ছিলে যে পর্দার আড়ালে।

মুখ থেকে বেরোনো মধুমাখা কথারা
হৃদয়ের বচন ছিল না,
অন্যায় বায়না মেটাতে ছুটে গেছি
সিঙ্গাপুর থেকে চায়না।

তোমার প্রয়োজনে এসেছিলে নিকটে
এখন তো পেরেছি বুঝতে,
দানা খাওয়া শেষে উড়ে গেলে কোথায়
আরেক আবাস খুঁজতে?

তুমি আমার কাছে ছিলে তৃষার বারি
খোলা বারান্দার আলোক,
তোমার বদলানো নিমেষে ভেঙে দিল
আমার নিজস্ব ভূলোক।

কাড়লে অন্তর আর স্বপ্ন-খাতা
খাতার সন্ধান চলছে
কোথায় সেই খাতা? খুজতে খুঁজতেই
স্মৃতির পাহাড়ও গলছে।

স্মৃতির বিষণ্ণ দালান

স্মৃতির বিষন্ন দালান
আমি যখন ভালো ছিলাম তোমার চোখে
তুমি যখন ভালো ছিলে আমার চোখে,
উষ্ণ আশ্লেস ফুটিয়ে দিত হৃদয় কলি,
পদ্মের সুবাস ভরাত যে মনের অলিগলি।

তখন একটু ভরসা দিলে
বুকটা যেন উঠত ফুলে,
সাহস নিয়ে ব্রহ্মপুত্র সাঁতার দিয়ে পেরিয়ে যেতাম,
তোমার জন্য মন্দির থেকে পুষ্প এনে দিতাম।

নদীর জলে সময় কখন গেল ভেসে-
কী এক ইঙ্গিত দিয়ে গেল হেসে,
কালের হাওয়ায় কাঁপছে প্রদীপ শিখা-
সম্পর্ক আজ গৌণ হল মুখ্য আকাঙ্ক্ষা।
এবার বুঝি আঁধারের হাত ধরছে চেপে গলা,
তোমার দৃষ্টি নির্বিকার আমার অবহেলা।
তাই হৃদয় পদ্ম শুকিয়ে হল ম্লান-
শুকনো মুখে দন্ডায়মান স্মৃতির বিষণ্ণ দালান

তুই কি আমার বন্ধু হবি

তুই কি আমার বন্ধু হবি
তুই কি আমার বন্ধু হবি?
সিন্দুকে যা আছে আমার
তোকে যে সব দিতেই পারি।
সব আছে নেই অর্থ সম্পদ,
তবুও কি তুই বন্ধু হবি?
তবে গর্ব করে বলতে পারি-
আছে সুখ নামের মুহূর্ত
দুঃখ নামের শিক্ষা,
ইচ্ছে নামক ডানা
কল্পনা নামের পাখি,
স্বপ্নময় নক্ষত্রপুঞ্জ
ভালোবাসা নামক আকাশ,
আর মানবতা-চাষের জমি।
আয়-না তুই হাতটা ধর-
যা আছে সব ভাগ করে নিই
দুহাত ধরে যাই এগিয়ে
শিরদাঁড়াটা সোজা রেখে,
লক্ষ্যের দিকে চোখ রেখে।
দেখ-না বন্ধু পৃথিবীটা
আবার হবে সুন্দর।