পৃথিবী জুড়ে একটা নিম্নচাপ সৃষ্টি হোক
আসুক প্রবল ঘূর্ণিঝড়-
তছনছ করে দিক অযত্নে গজিয়ে ওঠা
সব বেড়া সব ঘর মনের ভেতর।
ভেঙে যাক বেড়া অবাধে ঢুকুক স্নেহ–দয়া–মায়া,
সমূলে নিশ্চিহ্ন হোক অবাঞ্ছিত হিংসা–ঘৃণা–দ্বেষের আস্তানা।
প্রবল বর্ষণ হোক সিক্ত হোক মৃত্তিকার নীরস শরীর,
ভালবাসায় উর্বর হোক মনের পৃথিবী।
এমন উর্বর হোক শুষ্ক মরুতে থাক মরুদ্যানের আধিপত্য,
কঠিন পাহাড় গলে হোক ঝরনার জল,
গজিয়ে উঠুক সবুজ বনভূমি আর সবুজ জনপদ।
সকলের হৃদয় ভরুক ফুল আর ফলে ।
Category Archives: কবিতা
স্বপ্নেরা চিঠি পাঠায়
স্বপ্নেরা চিঠি পাঠায়
আকাশের ডাকঘরে,
কী বার্তা বহন করে
জানব কেমন করে।
মন-পাখি উড়ে যায়
খোঁজ নিতেই দুবেলা,
ডাকবাক্সের চাবিটা
মেঘ নিয়ে করে খেলা।
মেঘ তুই খেলিস না
দিয়ে দে-না চাবিখানা,
চিঠিগুলো না পেলেই
বিফল জীবনখানা।
দূরে থাকা ডাকবাক্সে
কী-এমন স্বপ্ন ভরা
না দেখলে উচাটন
আমার ধরায় খরা।
এবার তো পাখিটাকে
দিয়ে দে–না স্বপ্ন সব,
পৃথিবীতে আনা হোক
করুক ফল প্রসব।
জীবন জ্যান্ত
পথিক আমি কাঁধে ঝুলি
হাঁটছি নিত্য গ্রন্থমেলায়,
ভালো পুস্তক পেলে ভরি
সঙ্গী আমার ভ্রমণ খেলায়।
এই পথিকের ক্লান্তি উধাও
পছন্দসই বইটা পেলে-
আদ্যপ্রান্ত পড়ার শেষে
পেটের খিদে উঠে জ্বলে।
যাত্রাপথের দুধারেতে
কতশত বই সজ্জিত,
আগ্রহী থাক চক্ষু আমার
পড়ে ফেলুক সব সৃজিত।
বৃক্ষ নদী পাহাড় মানুষ-
মেলে ধরা বইয়ের পাতা,
তথ্য জানার কায়দা জানলে
ভরে যাবে হাজার খাতা।
এই ভ্রমণে শেখার শিখা
দীপ্তি ছড়াক চতুর্দিকে-
সত্যিকারের জীবন জ্যান্ত,
শিরদাঁড়াটা সোজা রাখে।
আনন্দেতে সবাই ভাসুক
শিশিরধৌত মন এনো গো
সাথে এনো ভালবাসা,
দ্রাক্ষালতার প্রেমে সরাও
দেওয়ালের নিরাশা।
নম্র রোদের পরশ এনো
শীতে কাঁপা শিশু–বুকে,
সমবেত গীত এনো আজ
সব মানুষের মুখে।
সাথে এনো হাতকড়ি
মৈত্রী যার উপাদান,
দাও পরিয়ে সকল হাতে
লেখো প্রেম–উপাখ্যান।
তোমার সুখে আমার সুখ
সকলকে দাও ভাগ,
আনন্দেতে সবাই ভাসুক
নেই কোনো শ্রেণীভাগ।
শ্রেণীভাগের প্রাচীর ভেঙে
বিপন্নের হাত হাতে,
মানবশৃঙ্খল গড়ে দিয়ো
বলো আছি একসাথে।
সমস্বরে বলব
আর কত যুদ্ধ-লড়াই-বিবাদ
আর কত ক্ষমতার দম্ভ প্রদর্শন,
আর কত রক্তপাত খুনজখম ধর্ষণ
আর কত হবে নারী নির্যাতন
আর কত চেতনার অবক্ষয়?
দেখতে দেখতে দৃষ্টি কমজোরি
শুনতে শুনতে কানে বধিরতা,
আঘাত আঘাতে হাতে-কলমে কম্পন-
লিখতে অক্ষম তাই বিশেষ শব্দগুচ্ছ,
স্নায়ুরা দুর্বল তাই স্বরযন্ত্র বলতে পারে কই সেই শব্দগুচ্ছ?
আমার সবার মন আজ উৎকর্ণ সেই বিশেষ শব্দগুচ্ছ শুনতে,
দেহের প্রতিটি লোমকূপ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের শিরা-উপশিরা
আজ জেগে আছে সেই বিশেষ শব্দগুচ্ছ শুনতে,
সেটি হল ‘এই পৃথিবী কত সুন্দর’।
কবে দেখব, শুনব, লিখব, সমস্বরে বলব
‘এই পৃথিবী কত সুন্দর’?
ভালবাসবে কি না
তোমায় নিয়ে সুখে-আনন্দে ভালোবাসায় থাকব বলে,
তোমার মনের বাগিচায় ফুলগাছের গোড়ায়
কত-না দিয়েছি সার আর জল।
তবু পারিনি ফোটাতে তোমার আবেগের ফুল।
তোমার জন্য আমার নদীপাড়ে বানিয়েছি ঘাট–
তুমি এসে এখন ও বসলে না।
অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছি,
তোমার মনের নাগাল পেলাম তবু কই?
তুমি তো জানো আনন্দ যেন পাহাড়ি বাংলোর ছাদ
নরম রোদ মাখতে চায়,
হঠাৎ তখন বিষাদের মেঘ এসে বাধা দেয়।
তুমি তো জানো সুখ যেন পদ্মপাতায় জলের ফোঁটা-স্ফটিক
যে আকাশটাকে ধরে রাখতে জানে –
নিমেষে দুঃখের ঢেউ এসে তবু ফেলে দেয়।
তুমি তো জানো ভালোবাসা যেন জিওল মাছ,
জলে রাখলে বেঁচে থাকবে।
তুমি জানো ভালোবাসার জলে বিষাদ দুঃখ দ্রবীভূত হয়,
নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে।
এখন ঠিক করে নাও আমায় ভালবাসবে কি না,
দুজনের পৃথিবীটাকে সুন্দর করে তুলবে কি না।
একমুঠো আলো
যতই শহর আলো ঝলমল
মনের গতিটা যায় থেমে,
অস্থিরতার পরিবেশ দেখে
তার শরীরটা যায় ঘেমে।
এই পরিবেশ এমন আলোয়
এই যাত্রার নেই মানে,
অবক্ষয়ের আকর্ষণটা
নব উদ্যমে যেন টানে।
সেই উদ্যমে ছেদ দিতে পারে
একমুঠো আলো পবিত্র-
দেখিয়ে দেবেই আলোর পথটা
আঁধার হারাবে চরিত্র।
ঘন আঁধারকে হত্যা করতে
অস্ত্র শানায় প্রতিবাদ,
ধ্বনিত হোক-না আকাশে বাতাসে
শুভ চেতনার অনুবাদ।
এই ধ্বনি শুনে সব অন্যায়
নির্বাসনের ধরবেই পথ,
একমুঠো আলো আসে ওই দেখো
চেপে ন্যায়ের আলো-রথ।
অন্তর দিয়ে
অন্তর থেকে বেরোয় যে-কথা
অবাধে তারা ঢোকে মনে,
কথা বলার উদ্দেশ্যটা
সফল হবেই সেই ক্ষণে।
অন্তর দিয়ে শাসন চালালে
সুশাসন আসে চিরদিন,
অন্যথা হলে জনসাধারণ
অচিরেই দেখে দুর্দিন।
শব্দেরা যদি জন্মায় হৃদে
পাঠকের মন লেখা কাড়ে,
সেই লেখকের লেখাগুলো বুঝি
সকল মানুষে বেশি পড়ে।
প্রেম যদি আসে অন্তর থেকে
প্রেমিক হৃদয়ে দোলা লাগে,
হৃদয় পদ্ম সেই দোলাতেই
গাঢ় ঘুম থেকে যেন জাগে।
সব কাজ হোক অন্তর দিয়ে
গলিগুলো হোক রাজপথ,
ধরা হোক আজ সুন্দরতর
সেথা চলুক-না মানবতা রথ।
ঝমঝমিয়ে বর্ষা এসো
বিশ্রামে আজ সকল ঋতু
দাপট দেখায় খরা,
ঝমঝমিয়ে বর্ষা এসো
বাঁচাও মনের ধরা।
মেঘকে বলো আনতে ধরে
হারানো সব সংবেদ,
মরু বুকে বৃষ্টি ঝরাক
দয়া মায়ার উদ্ভেদ।
মরা নদী কাঁদছে বসে
বর্ষা এসো তুমি,
দাও না এনে তপ্ত বক্ষে
সমব্যথার ঊর্মি।
এমন খরায় বুকের বকুল
ঝরায় না আর কুসুম,
ঝরা–বকুল বৃষ্টি এনো
এনো বর্ষা মরসুম।
শুভবোধের বৃষ্টি এনো
এনো বকুল গন্ধ,
দুঃসময়ে এনো বৃষ্টি–
ভরসা করার কন্ধ।
নতুন পথ ডাকছে
নতুন পথ ডাকছে ওই
দেখার চোখে বদল হোক,
আপাত ভাঙা পথের বুকে
লুকিয়ে আছে আগামী শ্লোক।
শ্লোকের ভাষা ন্যায়ের ভাষা
ন্যায়ের তরে জীবনপাত,
গর্জে ওঠা হৃদয় রোখে
অবাঞ্ছিত অশ্রুপাত।
যাত্রা শুরুর দিনগুলোতে
পদক্ষেপে সতর্কতা,
আচরণের কেন্দ্রে থাক
প্রাচীন সেই মানবিকতা।
এমন রীতি সকল স্তরে
থাকুক লাগু চিরটা কাল,
ন্যায্য কাজে সমাজ সাজে
সব পাপের অন্তকাল।
নতুন পথ ডাকছে ওই
পথের ধারে ন্যায়-কেতন,
মানবতার নিয়ন্ত্রণে
চলছে শুভ আবর্তন।