মৌচাক

মৌচাক
মৌচাক – মধুর সংরক্ষণ,
মধু-সৃষ্টির কর্মে ব্যস্ত
কর্মী মৌমাছি, সারাটা জীবন
সঁপে দেওয়াতে অভ্যস্ত।

কিলোমিটারের হিসেব রাখলে
হবেই ব্যর্থ মধু আহরণ,
মধুগ্রন্থির মধুরস দিতে
কুসুম সকল করে কি বারণ?

শতেক ফুলের অবদান আর
মধুকরদের পরিশ্রমটা-
উপেক্ষা আর মধু চুরি করে
অমানবিকতা বাজায় ঘণ্টা।

খাদ্য মজুত মধুচক্রেই
খারাপ সময়ে আশিস আনছে,
নিজের স্বার্থ চরিতার্থেই
অপরের ঘর মানুষ ভাঙছে।

এমন মন্দ কাজের ফল তো
পাচ্ছে মানুষ হাতেনাতেই
হাজার দুখের মধুকরগুলো
হুল ফোটাচ্ছে প্রতি পলেতেই।

শৈবালের ফাঁদ

শৈবালের ফাঁদ

শৈবালের ফাঁদ পাতা থাকে
চোখ পথভ্রষ্ট পদক্ষেপে,
অসতর্ক অস্থিরতা হোক
ফাঁদ কি তখন হাসি চাপে?

পদস্খলন শব্দ করলে
হাসির ফোয়ারা যাবে খুলে,
শৈবালসম মানুষরাও
লুকিয়ে আছে সমাজ তলে।

তাদের সাথে সখ্যতা মানে
পিছল আঙিনায় পা-রাখা,
অসাবধানি দৃষ্টিভঙ্গিতে
কপাল শরীর ধুলোমাখা।

এমন শৈবাল দেশজুড়ে
রয়েছে আজ সকল স্তরে,
সাফ না করলে প্রতিক্ষণে
বিপদ যে সাথে সাথে ঘোরে।

বিপদের সঙ্গে সহবাস
প্রত্যেক দিনের অভিজ্ঞতা-
ঢাক বাজিয়ে জানায় যেন
বদল আনার অক্ষমতা।

ঘরে অতিথি

ঘরে অতিথি
প্রবাস বাস লাগেই ভালো
যদি তা হয় সাময়িক
কে চায় ঘরে প্রবাসী সুখ,
ঘরে অতিথি আবাসিক?

সেই অতিথি কর্তা কথায়
কাজের বেলা মেহমান,
বাকিরা নিক দায়ের ভার
ভাগের বেলা অসমান।

এমন প্রথা বর্তমানে
কার্যকরী হলে ঘরে,
ঘর যে আর ঘর থাকে না
সদ্ভাবটা দূরে সরে।

ঘনিষ্ঠতা প্রবাসে যায়
খিটিমিটির বড় ফাঁস,
কেউ কাউকে মানে না তাই
অরাজকতা বারোমাস।

কথার মারে আঘাত পেয়ে
সংসারটা শুধু কাঁদে,
দায়িত্বটা কাঁধে নিলেই
ঘরটা নিজ প্রচ্ছদে।

প্রেমিক পিকের শুধু

প্রেমিক পিকের শুধু
অবিরাম কুহুতানে কোকিল কাহিল
কোথা গেল তার পিকী প্রেম অনাবিল-
যায় চলে ঋতুরাজ যায় মরশুম
অকালে কি ঝরে যাবে প্রেমের কুসুম?

যখন সময় ছিল ছিলে তুমি যুবা
অবহেলা দান করে হয়েছিলে বোবা।
ভেবেছিলে পিকী যেন শুধুই তোমার
অধিকার দেখিয়েছ মাননি গ্রামার।

সময় থাকে না থেমে মানে না যে হেলা
এখন কি লাভ হবে ডেকে দুই বেলা?
সময়ের কাজ ফেলে করেছ আরাম
ঘণ্টী বাজিয়ে কখন চলে গেছে ট্রাম।

অধিকার নয় পিক থাক শুধু প্রেম
নীরব কাজেতে থাক মনোযোগ হেম।
মুখে শুধু রব নয় থাক প্রেম চিঠি
প্রেমিক পিকের শুধু থাক মিঠা দিঠি।

এসো বৃষ্টি

এসো বৃষ্টি

এতদিন গ্রীষ্মের ক্রোধাগ্নি
পুড়িয়েছিল বাতাস-
পোড়া পোড়া গন্ধ ভরা পরিবেশে
আবাসন উৎকর্ণ ছিল,
শোনেনি কোনো কূজন উচ্ছ্বাস।
সামান্য বৃষ্টি ঝরায়
সমীর-শরীরে জ্বালা উপশম।
উদ্বাস্তু পাখিরা খুঁজে পায়
কারণ খুশি দেখাবার,
আবাসন খোঁজে ছন্দ
দিনের কোলাহলে আবার।
অলিন্দেরa অলস শরীর
উপোষ ভাঙে ঠান্ডা পানীয়ে,
গ্রীষ্মের অরাজকতা শেষ করে
বর্ষা ধীরে আসে কি জানিয়ে?

তবু চাষির অদৃষ্ট কাঁদে
কাঁদে খেতের জমিন
জীবনের রস নেই
কল্পনার, ফসলের মূলে ।
এসো বৃষ্টি – সরস সৃষ্টির বীজ দাও পুঁতে, প্রকৃতির প্রসাধন হোক প্রকৃত ফসলে।

তোমাকে দিলাম জীবনটা

তোমাকে দিলাম জীবনটা

তোমাকে দিলাম জীবনটা খুলে
সাথে দিলাম চামচ,
মেপে নাও ক’ চামচ আছে শ্রদ্ধা-বিশ্বাস আর উজাড় করা ভালোবাসা।

তোমাকে দিলাম জীবনটা খুলে
সাথে দিলাম একটা হাতা,
মেপে নাও কয়েক হাতা রয়েছে অশ্রদ্ধা
অবিশ্বাস ও ঘৃণা ?

তোমাকে দিলাম সম্পূর্ণ জীবন খুলে
দিলাম এবার একটা বালতি,
মেপে নিয়ে দ্যাখো কয়েক বালতি সততা মিথ্যাচার মানবতা পেলে।

তারপরেই তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ো
আমার পৃথিবীতে আসবে কী না
আমায় ভালোবাসবে কী না?

ধুলো ঝড়ে

ধুলো ঝড়ে

বাতাস এখন ধুলোয় ভরা
প্রমাণপত্রে নেই শুদ্ধতা,
চোখ কান মুখ মন
বয়ে বেড়ায় তাই কি তাদের অসুস্থতা?

প্রকৃতিতে ধুলো ঝড়ে
সঙ্গে সবার পরিচিতি-
চোখে-মুখে নাকে-কানে
আনছে ক্ষতির পরিস্থিতি।

এখন আবার টিভির পর্দা
ছিন্ন করা ধুলোর ঝঞ্ঝা-
দর্শক মনটি দেয় বিষিয়ে
বিষ নামাতে ব্যর্থ ওঝা।

মিডিয়ার ওই মুখের ভাষায়
ধুলো ঝড়ের রাগ যায় দেখা,
সংবাদপত্রের পাতা জুড়ে
নেতিবাচক ঝড়ের লেখা।

এমন সকল ধুলো ঝড়ে
মনের চোখটা হারিয়ে যায়,
অসৎ ব্যবসা পায় না দেখতে
প্রতিবাদের ভাষা হারায়।

আসল নকল ফারাক কত
ভুলে গেছে মনের আঁখি,
ছলের মোহ বাঁধছে কষে
দুষ্ট হাতে প্রীতির রাখি।

ভাবছি আকাশপাতাল

ভাবছি আকাশপাতাল
বারান্দার টবে বেড়ে উঠছে গাছটা,
নৈমিত্তিক কাজ সূর্য খোঁজা
সবুজ ক্লোরোফিল যে চাই।
তার কোন ক্লান্তি নেই,
আর আমি হাত গুটিয়ে ঘরের ভেতর ভাবছি আকাশপাতাল

দেড় বছরের নাতনি আমার
উঠোনে ছুটছে পড়ছে বারবার
পরক্ষণে খেলছে খেলনা নিয়ে।
লক্ষ্যের পিছে লেগে থাকছে, সাহসী একাগ্র।
আর আমি ফ্যাল ফ্যাল করে দেখছি, ভাবছি আকাশপাতাল

পাহাড় চূড়ার শক্ত বুকে
অসম্ভব প্রাণশক্তি আর লড়াকু মানসিকতা নিয়ে যে-গাছটি বেড়ে উঠছে আর প্রতিদিন একঘেয়েমি কাটাতে মেঘেদের আঁচল ধরে টানছে, সেই গাছটি প্রতিদিন দেখছি আর আমি নিজেকে আলসেমির আগুনে পোড়াচ্ছি, ভাবছি আকাশপাতল

বারান্দার চারাগাছটির কথা, নাতনির কথা আর পাহাড় চূড়ার গাছটির কথা ভাবছি আর ভাবছি আকাশপাতাল। তবুও শিখলাম না কিছু। সময় হাত নেড়ে চলেই গেল। পেলাম না কিছু।

আমার ঝাঁপি

আমার ঝাঁপি
পদ্মপুকুর যাব না আর
দেয় পাহারা সাপেরা আজ,
যতই হাসুক ফোটা পদ্ম
বসে থাকি পাড়ে নিলাজ ।

প্রথম লক্ষ্য মন্ত্র শেখা
সাপগুলোকে বশে আনা,
তাদের ধরে ধরে তখন
ভরব আমার ঝাঁপিখানা।

দেশে দেশে ঘুরে ঘুরে
গুরুর দেখা পেলাম না যে,
ভ্রমণ আমার ব্যর্থ হল
সময় গেল বৃথা কাজে।

আমার ঝাঁপি রইল খালি
পদ্মফুলের বাঁকা হাসি-
বলছে যেন মিছিমিছি
কেন বলো ভালবাসি?

সকল কর্মে কাঁটা থাকে
ভয় দেখানো সাপেরা রয়,
একটু সাহস-ভালোবাসায়
সাপ-কাঁটারা করে যে ভয়।

বুক পকেটে

বুক পকেটে
বুক পকেটে সুখের তুলো রাখা ছিল
আনমনা পথ পেছন পেছন আসছিল
সেই তুলোর টুকরো কখন হারিয়ে গেল।
না বলল পথ, না বলল বাতাস-
শুনি শুধু দীর্ঘশ্বাস।

এবার সেই পকেট দুঃখ-মুদ্রা নিয়ে হাঁটছিল
আনমনা পথ পেছন পেছন আসছিল
সেই মুদ্রা ওজন বাড়াল, পকেট ছিন্ন করল,
পড়ল মাটির বুকে, মুদ্রাদোষে আমি মুদ্রা
কুড়িয়ে নিলাম, পথ বাতাস নির্বাক,
শুনি শুধু দীর্ঘশ্বাস।

অনেক ঠকেছি। পকেটে মুহূর্ত ভরা
হাতটা বুকেতে চাপা সাবধানি পায়ে এগোচ্ছি জীবন পথে-
পথ দেখছে, মুহূর্ত দেখছে, আমি সাবধানি।
বাকি জীবনটা মুহূর্তকে সঙ্গী করে পথ চলা। শ্বাসটা চলছে দীর্ঘশ্বাস নেই।