শেষ সলতেটা

শেষ সলতেটা
নির্মূল করে সবুজ বর্ণ
তোদের দিয়েছি ধরণী,
পরিবেশে শুধু দাঁড়িয়ে রয়েছে
হাজার হাজার অরণী।

যেখানে সেখানে পরিবেশে আজ
হিংসা আঁকছে চিত্র,
শ্রদ্ধা ভক্তি ভালোবাসা বনে-
নাইরে মনের মিত্র।

শিক্ষার পায়ে কুড়ুল মেরেছি
হাঁটতে যে তার কষ্ট,
এই মন্থর গতির শিক্ষা
করবে জীবন নষ্ট।

পরিবেশ এত বিষাক্ত আজ
বিষিয়ে দেবেই মনন,
সোজা শিরদাঁড়া উধাও এখন
সৎ সাহসের হনন?

শৈশব তোদের ভবিষ্যৎ নিয়ে
ছিনিমিনি খেলা খেলেছি,
ব্যর্থ প্রদীপে শেষ সলতেটা
আশার তেলেই জ্বেলেছি।

আমি ঘটনার প্রহর

আমি ঘটনার প্রহর

আমি ধর্ষণ-খুন ঘটনার প্রহর
আমি মহিলা ডাক্তার পড়ুয়াকে শিকার হতে দেখেছি,
আমার সাথে দেখেছে সরকারি হাসপাতালের রাত।
আমি দেখেছি এই ঘটনার আড়ালে কত কিছু ঘটে যেতে।
এই ঘটনা ঘটেনি কোনো কুখ্যাত গলিতে,
ঘটেছে বিখ্যাত সরকারি হাসপাতালে।
পড়ুয়ার পরিবার নিঃস্ব হল-
সব স্বপ্ন ফুল হয়ে ফুটল না
অকালে কুঁড়ি ঝরে পড়ল,
ছিঁড়ে গেল হাসপাতালের নিরাপত্তার পর্দা,
ছিঁড়ে গেল যত্রতত্র টাঙানো অজানা পর্দা।
কাম্য ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করবে।
নিয়ন্ত্রণ থাকলে কি এই ঘটনা ঘটত?
ঘটল ঠিক উলটো-
ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে হাসপাতালকে।
চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলতা একে বলে?
রোগীদের সেবায় নিবেদিত প্রাণের এই পরিণতি ?
আমি ঘটনার প্রহর লজ্জিত,
তোমরা কি লজ্জা পাও না?

লোভের মোহে

লোভের মোহে
সপ্রতিভ আঁধারের স্রোত
প্রবাহিত সাঁকোর-তলে,
সাঁঝের সাঁকো আলো ঝলমল
যায় বোঝা কী আছে জলে?

অপ্রতিভ দৃষ্টি মুগ্ধ
সাঁকোয় চড়ে ভাবে মনে,
মাতাল করা এত সুবাস
ছাড়ছে কি জল ক্ষণেক্ষণে?

এমন ভিড়ে চিড়ে চ্যাপটা
সাঁকোর নজর জলে পড়ে,
জলের মাঝে নড়ে উঠে
কী যেন কী ইঙ্গিত করে।

সাঁকো জলের মন্দ আঁতাত
কেউ পারে কি আগে ধরতে?
অপেক্ষাতে কুমির কখন
মানুষগুলো পারবে মারতে?

সে-আঁতাতে ভাঙে সাঁকো
উল্লসিত জলের কুমির,
লোভের মোহে বিপন্নদের
সকল স্বপ্ন হল চৌচির।

এমনতরো বিচিত্রতায়

এমনতরো বিচিত্রতায়
পাকা আমটি মিষ্টি লাগে
কাঁচা তেঁতুল টক,
কোকিল কালো কাক ও কালো
সাদা কেন বক?

সবুজ পাতার জবা গাছে
ফোটে পুষ্প লাল,
বর্ণ যেমন হোক না বধূর
লজ্জা রাঙায় গাল।

রাগলে চোখে আগুন ঝরে
দুঃখে নোনা জল,
প্রিয়ার চোখের দিঘি দেখে
পাই না খুঁজে তল।

বাবার স্নেহে হল বড়
তারা যমজ ভাই,
একজন ভাইয়ের অর্থে লিপ্সা
অন্যজনের নাই।

এমনতরো বিচিত্রতায়
এই প্রকৃতির সায়,
সুখ ও দুঃখ চিত্র আঁকে
জীবনখানার গায়।

উঠবে হাতে কাছি

উঠবে হাতে কাছি
ধরার আকর্ষণ উপেক্ষা করে
হৃদয় গেল কোন গ্রহেতে?
মনটা করল পাতাল প্রবেশ-
কী কাজ হবে এই দেহেতে?

মৃত্যুর চোখে ধুলো ছড়িয়ে
আমরা তবুও বেঁচে আছি,
জগন্নাথ দেব তুষ্ট হবেন
যদি না টানি রথের কাছি?

টানার জন্য যোগ্যতাহীন
হৃদয় এবং মনটা বুঝি-
বর্তমানে নেই পৃথিবীতে
বলো কোথায় তাদের খুঁজি?

আবেদন হয়নি সঠিক
যায়নি পাওয়া অনুমতি?
শুদ্ধ চিত্ত শুদ্ধ মন ছাড়া
দেবে না দেব সম্মতি?

ফিরুক শুদ্ধ চিত্ত মনন
মানবতা মনের মাঝে,
উঠবে হাতে কাছি তখন
মাতব আবার নিজ কাজে।

সভ্যতা ভব্যতার সখ্যতা

সভ্যতা ভব্যতার সখ্যতা
শখের চিমনি ধোঁয়া ছাড়ে
চাকা যে উড়োয় ধুলো,
অসভ্যতা বিদায় দিতেই
দিচ্ছে বাতাস কুলোর।

গড়ানো চাকা উঁচু চিমনি
দেয় ছড়িয়ে সভ্যতা,
ধোঁয়া-ধুলোর তিলক পরে
মানুষ ভাবে যোগ্যতা।

শ্রেষ্ঠ প্রাণীর যোগ্যতাতেই
অবাসযোগ্য এই ভুবন,
বাসযোগ্য করার উদ্দেশ্যে
চাঁদে চলে কত অভিযান।

তালুবন্দি ভবের ভাবনা
হারিয়ে গেছে কংক্রিট বনে,
সভ্যতা এগোয় চক্র বাসে-
ভব্যতা পিছোয় সংগোপনে।

সভ্যতা ভব্যতার সখ্যতা হোক
আগামীদিন তাকিয়ে থাক,
চক্র বাসে দুজন চাপুক
উধাও হোক ধরার দুর্বিপাক।

সাহস জাহাজ

সাহস জাহাজ

এত ভয়ের ঠান্ডা এখানে
হাত পা বুঝি তুষার,
সাহস জাহাজ চলবে কি
সেটাই শুধু দেখার!

তুষারে ফাঁসা জাহাজ যেন
হরিণ বাঘের মুখে-
চলার শক্তি হারিয়ে গেছে
মুখটা কাতর দুখে।

কাতর মুখে আনত চোখে
অপেক্ষা কেন কে জানে?
আগুন জ্বালা মনোভাবটা
গেছে বুঝি নির্বাসনে?

সে-মনোভাব আসুক ফিরে
চোখে জ্বালাক অনল,
শিরদাঁড়াটা রাখুক সোজা
সাহসের দাবানল।

দাবানলের আগুন তেজে
বরফ হোক-না পানি,
চলুক জাহাজ সাহসিক
ভয়ের শুরু ফোঁপানি।

মুখের চোখের মনের ভাষা

মুখের চোখের মনের ভাষা
অক্ষরের কাঁধে চেপে যে-ভাষা সামনে আসে
সে-ভাষা সবার চেনা কত আপনার,
তবু কেন কবিতা দুর্বোধ্য?

মুখের কথার ভাষা যখন বেরিয়ে আসে
সে-ভাষা সবার চেনা,
তবু কেন সে-মুখ লাগে অচেনা?

কিছু কিছু আঁখির অক্ষর পড়া বড়ই সহজ,
সে-ভাষা নীরব তবু সকলেই বোঝে,
কারণ মনের দরজা তাদের অবারিত দিনে রাতে সাঁঝে।

কিছু কিছু চোখের ভাষা বোঝা বড় কঠিন-
অণুবীক্ষণ যন্ত্রও পড়তে পারে না,
কারণ রুদ্ধ দোরের ওপারে লুকিয়ে থাকে আরেক মানুষ বড়ই অচেনা।

মুখের চোখের মনের ভাষা একে অপরকে বলছে কাছে আয় হাত মেলাই-
তা দেখে বিশ্বাসযোগ্যতা নামক প্রজাপতি বলছে এবার বাগানে উড়ে বেড়াই।

কারোর তৃপ্তি

কারোর তৃপ্তি
পাখি ওড়ে আকাশটাতে উড়ালে তার তৃপ্তি,
খাঁচার মধ্যে থাকলে বসে আসবে কি সেই প্রাপ্তি?
খিদেয় জ্বলা উদর ফোলা রুটি দেখে চাঁদে,
তেমন তৃপ্তি আসে না যে মনটা শুধু কাঁদে।
রুটি পেলে খিদে মিটলে আসল তৃপ্তি আসে,
স্বর্গীয় সুখ হার মানে তায় মুখটা মৃদু হাসে।
খুঁত ধরাটা কারোর তৃপ্তি না করলে মুড মন্দ,
সারাটা দিন গুমোট মেঘলা থাকে না তার ছন্দ।
কেউ বা আবার তৃপ্তি খোঁজে গুণকীর্তন করে,
আরেক জনে তাতেই যেন জ্বলে পুড়ে মরে।
বইয়ের সাথে মিত্রতাতে কারোর কাটে সুখে,
সঙ্গ ছেড়ে যায় না বন্ধু বিরক্তি নেই মুখে।
সোজা পথে হাঁটার তৃপ্তি দামি কারোর কাছে,
কারোর তৃপ্তি মাংস ভাতে কারোর ভাতে মাছে।
কারোর তৃপ্তি সৃজন কাজে কারোর ধ্বংস কর্মে,
কেউ বা খোঁজে ভ্রমণে সুখ কেউ বা খোঁজে ধর্মে।
যে-সব তৃপ্তি মূল্যবোধে বড়ই আঘাত হানে,
তেমন তৃপ্তি হোক-না উধাও জীবন খুঁজুক মানে।

শূন্য আমার আবাসন

শূন্য আমার আবাসন
আজ সকালের বৃষ্টিপাতে
ভিজেই গেল মনাঞ্চল,
ভিজেই গেল আবেগগুলো-
কেমন যেন আজ চঞ্চল।

চঞ্চলতার তুলি চলে
তোমার রাখা ছবিতে,
আবছা রেখা স্পষ্ট হলে
তুমি এলে ভঙ্গিতে।

ইতিহাসের পাতায় রাখা
প্রেমের হলুদ পাতাটা
পড়ুক খসে, প্রেম-মানচিত্রে
ওঠে জেগে রাস্তাটা।

চেনা রাস্তা চেনা ভঙ্গি
বুকে আঁকে কাহিনি,
দৃশ্যপটে রঙিন তুমি
মনোলোভা মোহিনী।

ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি ছিল
ছিল একটি আতপত্র,
সিক্ত হল দুটি মাথা
বৃষ্টি যেন প্রেমপত্র।

প্রেমের চিঠি ছিঁড়ে হঠাৎ
কেড়ে নিলে সিংহাসন,
স্মৃতি নামক আসবাবেও
শূন্য আমার আবাসন