কার কপালে অমৃত

কার কপালে অমৃত
কী দিনকাল এল-
চোরেরা শেখাচ্ছে নীতি
পুলিশ দিচ্ছে চোরকে প্রশ্রয়!
চোর পুলিশের খেলা এখন চলছে অহরহ-
কোনো ময়দান খালি নেই।
চলছে চোর পুলিশের খেলা-
তাদের খেলা দেখে চমকে গেছে কলকাতা ময়দান।
খেলা দেখে মনে হচ্ছে দুজনেই জিতবে – এটি নিতান্ত রেফারির বক্তব্য।
কী দিনকাল এল-
সকল রাস্তা গিলে ফেলেছে জনসমুদ্র!
অসুর আর দেবতারা শুরু করেছে
সেই সমুদ্রমন্থন-
মন্থনের দড়ি এসেছে আরজি কর থেকে।
এই মন্থনে অমৃত উঠে আসবে?
এই যুগে কার কপালে অমৃত,
অসুরের না সুরের?

এসো তুমি ন্যায়

এসো তুমি ন্যায়
কলেজ ছেড়েছি কবে
প্রিয় বন্ধুর ঠিকানা রয়েছে কাছে,
তবু তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।
বাকি সব বন্ধুদেরও আমার মতই অবস্থা।
আন্তরিকতার অভাব আমার, সবার?
বন্ধুটি কি ইচ্ছে করে সামনে আসছে না, না অন্য কিছু?
বর্তমান পরিস্থিতির চাপে পড়ে
হয়তো লুকিয়ে কোথাও বসে আছে,
লজ্জা না ভয় পেয়েছে?
ভাবছি এই এল বুঝি বন্ধুর ফোন।
মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে,
ফোন বাজলে দৌড়ে যাচ্ছি ফোন ধরতে-
দেখি অন্য কেউ।
তোমার জন্য আসন পেতে রেখেছি
অনেক প্রতীক্ষা করেছি,
এবার তো এসো তুমি ন্যায়

আলাদিনের প্রদীপ

আলাদিনের প্রদীপ
হোঁচট খেয়ে পতন হলে
দিয়ো বাড়িয়ে হাত,
চাই না ছোঁড়া প্রদান, চাই
স্নেহ মাখানো ভাত।

গাড়ির লোভ দেখিয়ো না গো
পারলে পাশে হাঁটো,
হাতটা ধরে শর্তহীন
খুশি শুধুই বাঁটো।

স্বার্থ-লোভ বুকেই রেখে
মিত্র হতে এলে-
সম্পর্ক ঘরের কোণে
কাঁদবে দুপা মেলে।

বিপদ এলে দূরেই থাকো
পাশে থাকা কি মানা?
অভিসন্ধি মন্দ হলে
বোঝে কুকুর ছানা।

কুকুর ছানা প্রভুভক্ত
মানটা দিতে শেখো,
আলাদিনের প্রদীপ হবে
হুকুম করে দেখো।

আমার চোখ-কান খোলা

আমার চোখ-কান খোলা
তুমি ইচ্ছে করে তোমার লেখায়
রেখেছ বানান ভুল,
ইচ্ছে করে সঠিক স্থানে দাওনি যথা যতিচিহ্ন।
ভেবেছিলে তোমার ভাবের
হদিস পাবে না কেউ,
ভেবেছিলে জীবন পাতায়
লেখাগুলো থাকবে দুর্বোধ্য।
জানতে তুমি আমি কোনো-রকমে-পাশ-করা ছাত্র,
অপরের ক্লাস নোটস পড়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতাম।
জানতে না ভিন্ন ভিন্ন হাতের লেখা পড়তে ছিলাম পটু,
ভেবেছিলে তোমার মুখের ভাষা পারব না পড়তে-
সেটাই তোমার জীবনের মস্ত ভুল।
শোধরানো কখনও যাবে না।
ভুলে গিয়েছ আমার চোখ-কান খোলা

বেহুলাদের খুঁজে বেড়াচ্ছি

বেহুলাদের খুঁজে বেড়াচ্ছি
তোমাকে তো পাহাড় ভেবেছিলাম-
ঝড়-বৃষ্টি-তুফানের হাত থেকে বাঁচাবে ভেবেছিলাম, ভুল করেছিলাম?
চেয়েছিলাম তুমি আমাদের আকাশ হবে-
সেখানে আমরা মুক্তির আস্বাদ পাব।
তুমি তো দিলে না জোছনার চাঁদ শুকতারা
দিলে না তো স্বপ্নের নক্ষত্রপুঞ্জ।
দিলে শুধু গ্রীষ্মের প্রখর খরা-
আমরা গাছপালারা শুকিয়ে গেলাম।
ভুল কিছু কি চেয়েছিলাম?
দক্ষ মাঝি ভেবে তোমার নৌকোয় উঠে বসি,
ভেবেছিলাম খরস্রোতেও সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।
আবিষ্কার করলাম গন্তব্যটা যেন কত দূরে।
মাঝি ভেবে ভুল কি করেছিলাম?
ভেবেছিলাম আরও, তোমার সদিচ্ছা প্রত্যেকের জন্যে বানিয়ে দেবে সুন্দর ঘর-
যার দেওয়ালে ছিদ্র থাকবে না,
কালনাগিনি ঢুকতে পারবে না।
তবু উলটো ঘটনা ঘটেছিল।

এখন বেহুলাদের খুঁজে বেড়াচ্ছি

আসবে কবে

আসবে কবে
গঙ্গার সব ঢেউ
গোনা আজ শেষ,
আকাশের সব তারা
হয়ে গেছে গোনা।
পথের দূষণ শহরে আজ
হয়ে গেছে মাপা,
স্ট্রীট লাইটের লাক্স
করেছে চোখ অনুভব।
শহরের সব মোড়ও
হয়ে গেছে ঘোরা,
কর্মস্থলে কাজের ধারা
হয়ে গেছে জানা।
কোনটা মুখ আর কোনটা মুখোশ
হয়ে গেছে চেনা,
ধৈর্য নামক মোমবাতিটা জ্বলে জ্বলে
হয়ে গেছে শেষ,
রাতের পর রাত তা দেখে আজ
হয়ে গেছে নিস্প্রভ।
এলে না আজ তবু তুমি-
কোথায় গেলে বিচার?

আসবে কবে সেজেগুজে?

স্বার্থ দেয় পাহারা

স্বার্থ দেয় পাহারা
সব আনন্দের টুটি টিপে
হত্যা করেছে সময়,
নেই কাব্য নেই প্রেম-স্নেহ
স্বার্থ শুধু কথা কয়।

মিষ্টি কথা আচরণ যেন
লুকায় স্বার্থের দাঁত,
লক্ষ্য পূরণ হলেই যেন
চেনায় আসল জাত।

যখন স্বার্থ দেয় পাহারা
চিন্তাধারাটা সংকীর্ণ,
মানবতার মাপকাঠিতে
হয় না কাজ উত্তীর্ণ।

পাহারা সেখানে এত কড়া
প্রেম-স্নেহ ঢোকে নাতো,
অপুষ্টিতে ঝরে যায় শুভ
ভাবনার কলি যত।

ঝরে-যাওয়া কলিতে শুধু
ভুল সিদ্ধান্তের গন্ধ,
সে-গন্ধে আশার নাক জ্বলে
হতাশা ছড়ায় ধন্দ।

ধন্দ-ধুলো উড়িয়ে দিতেই
আসছে বোধের ঝড়,
ভাঙ্গুক-না তা জঞ্জাল ভরা
আমিত্ব নামক গড়।

আসছে দেখো নির্মল বায়ু
প্রেম-স্নেহ নিয়ে সাথে,
স্বার্থ ঝাঁপায় নদীর জলে
সম্পর্ক যে মালা গাঁথে।

আর জঙ্গলে যাব না

আর জঙ্গলে যাব না

এমন জঘন্য ঘৃণ্য নৃশংসতা দেখে
ভেবেছিলাম জঙ্গলে যাব,
এ-নগর ছেড়ে বহু দূরে-
যেখানে এমন মানুষের বেশে শয়তান থাকবে না।

ভেবেছিলাম এ-নগরের পথেঘাটে
নির্ভয়ে হেঁটে বেড়াব,
এত কপটতার দূষণে হাঁটা হল কই?
তাই জঙ্গলে যাব-
সেখানে এমন কপটতা থাকবে না।

এখানে নিঃস্বার্থ সেবার আড়ালে
হিংস্র দুর্নীতি মুখোশ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে-
জঙ্গলে গেলে এসব দেখতে হবে না,
পশুরাতো মুখোশ পরে না।

এই নগরের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ
যা ঘটে চলেছে অলিতে গলিতে রাজপথে-
খুলে দিয়েছে আমার চোখ।
দেখছি তাই মানবিক মুখ- মুখোশ নয়,
সত্যের আলোর পথ- সত্যের বেচা-কেনা নয়।
দেখছি এখানে তিলোত্তমাদের শক্তি কত,
নাগরিকদের মাথাগুলো শক্ত করে ধরেই রেখেছে শিরদাঁড়া- বিক্রি হয়নি।

তাই ভাবছি আর জঙ্গলে যাব না,
বাকি জীবনটা এই বাংলায় কাটিয়ে দেব।

হও হুঁশিয়ার

হও হুঁশিয়ার
মূল্যবোধের কৌটো যদি ভরা থাকে,
বিপদ-বেড়াল দৌড়ে আসে নিকটে।
কৌটো শুঁকে আঁচড়ানোটা তারই কাজ-
বুঝে গেছে কারণটা যে
মূল্যবোধই ছোঁড়ে গোলা- প্রতিবাদ।

সবার কৌটো বন্ধ ছিল
শান্তিপ্রিয় মনটা ছিল,
ছোট ছোট অন্যায় দেখে নীরবতা
বানায় তাদের সরীসৃপ।
বুকে হাঁটা সমাজ দেখে
অসুর বাড়ায় বাহুর পেশি,
অহংকারী অসুর চলে বুক ফুলিয়ে।

নির্ভয়ার এক শক্তি ছিল,
একই সঙ্গে খুলে দিল সব কৌটো-
সম্মিলিত মূল্যবোধ যে আকাশ ছোঁয়,
মানুষ যেন খুঁজে পেল শিরদাঁড়াটা।
হও হুঁশিয়ার অসুরব্যাটা।

কেন টানলে সীমা

কেন টানলে সীমা
আগের মতো বাসলে ভালো
এমন ক্ষতি হয়?
শাসন করা সময় এসে
দেখাল বুঝি ভয়।

উঠত ফুটে ফুলের কলি-
হাসি তোমার মুখে,
দেখে আমার ভরত মন-
দিন কাটত সুখে।

আগে তোমার সৃজন দেখে
অবাক হত আঁখি,
আজ অচল শিল্পী হাত
মরল নদী দেখি।

নদীর বুকে বালুকা রাশি
তপ্ত রোদে কাঁদে,
এখন যত ভালোবাসাই-
বন্দি বুঝি ফাঁদে।

আগে যখন বাসতে ভালো-
দৃষ্টি যেন ক্ষমা,
আজ তোমার নাগাল পেতে
কেন টানলে সীমা?

গণ্ডি মানে দূরেই ঠেলা-
মানে তোমার জানা,
আমার দেশ ছেড়ে কোথায়
যাচ্ছ মেলে ডানা?