ভোরের আলো

ভোরের আলো
বন্ধুরতার দেখা পেলাম পথে
মসৃণতা আসার শুধু বাকি,
থেমে গেলে বাতাস মুচকি হাসে
ক্লান্তি বলে কেন নিচ্ছ ঝুঁকি।

একটু গেলেই মসৃণতার মজা
চলার রসদ সেথায় রাখা আছে,
স্বাদটা পেলে উৎসাহ যায় বেড়ে
উদাস বাউল মনটা তখন নাচে।

পথের মাঝে রাতের আঁধার দেখে
ভয়টা যখন শূন্যে ছড়ায় শাখা,
সামনে যাওয়া বন্ধ করলে ভুলি
প্রভাত আলোর সাজি সামনে রাখা।

খর রোদে কষ্ট যখন বাড়ে
বুঝি সামনে বারিদ আকাশ বুকে,
না এগোলে বনি মস্ত বোকা
পথ চলাটা হয় নাগো আর সুখে।

তাই এখন আর ভবি নাগো বেশি
আসুক দুঃখ ফোটাক কাঁটা পায়ে,
ভোরের আলো ছড়ায় পথে কুসুম
আরাম দিতে পায়ের পাতার ঘায়ে।

তোমার ভালবাসা আমায়

তোমার ভালবাসা আমায়
গেঁয়ো জেনেও তোমার গঙ্গা
টানল আমায় কাছে,
মলিনতা সব শুষে নিল-
আমার আমি নতুন করে বাঁচে।

ক্লান্ত জেনে তোমার বিটপী
বিছিয়েছিল নরম ছায়া,
বিশ্রামেতে উৎসাহ পেল
আমার অন্তর কায়া।

মানসিকতায় বন্দি দেখে
আকাশ মেললে ধরে,
তাইতো আমার মনের পাখি
মুক্তির নেশায় ওড়ে।

আমার বাগের আগাছারা
তোমার ভয়ে দিল যে প্রাণ,
তোমার প্রয়াস ভালবাসা
গড়ল এ–গোলাপ বাগান।

তোমার ভালবাসা আমায়
বদলেই দিল মন্ত্রবলে,
আমার দিঘি সারাবছর
ভরা থাকে প্রেম–জলে।

নতুন প্রভাত

নতুন প্রভাত
এক সমুদ্র আবেগ নিয়ে
আসছে ধেয়ে নয়া সকাল,
আছড়ে পড়ার অপেক্ষাতে
আসীন জীবন এতকাল।

তার তরঙ্গে প্রবল বল–
প্রাচীন আঁধার শুষে নেবে,
জলোচ্ছ্বাসে খড়কুটো পাপ
সাগর তলে ডুবিয়ে দেবে।

বেলাভূমির ক্লেদের মুক্তি
ফিরিয়ে দেবে পুরোনো জেল্লা,
নতুন প্রভাত প্রেমিক স্পর্শ
গড়ে তুলবে স্বপ্নের কেল্লা।

হতাশা সেথা লুকায় মুখ
স্বপ্ন দেখার নেইকো মানা,
আলোর পাখিরা নিত্য ওড়ে
নিয়ে শত সাফল্য ঠিকানা।

সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ভালোবাসা
সেই গড়েতে নিশ্চিন্তে থাকে,
দ্বার রক্ষায় চেতনা জেগে–
হিংসা ঘৃণা বড় দুর্বিপাকে।

মুখোশগুলোর ঢোকা মানা
অবাধ শুদ্ধ আলো–হাওয়া,
গড়ের বাগে সহস্র ফল
মিটিয়ে দেবে সব চাওয়া।

আর কবে তুই

আর কবে তুই
উৎসবেতে উৎসাহ নেই
আগমনি বেসুর,
কাশ দোলে না মন দোলে না
প্রফুল্ল তাই অসুর?
বানের তোড়ে বাঁধ ভেঙেছে
গেছে খুশি ভেসে,
ডাক্তাররা আজ নিগৃহীত
মা আজ তুই কোন দেশে?
অভয়ারা নির্যাতিত
তবুও তুই পাথর,
প্রতিবাদের মন্ত্র শত
পাথর তবু নিথর?
বানভাসিদের আর্তি বুঝি
পৌঁছোয় নি তোর কানে,
নারী–সম্মান লুণ্ঠিত আজ
বুঝিস না কি মানে?
আর কবে তুই ধরবি আয়ুধ
করবি অসুর বিনাশ,
আর কবে তোর ন্যায়–পাখিটা
দেখবে মুক্তির আকাশ?

প্রেমের অংশীদার

প্রেমের অংশীদার
সম্পর্কের অর্থ বুঝতে গিয়ে
অর্থের সঙ্গে সর্ম্পক পাতালে,
তাই আমি ভয় পাই আজ
কেউ আমায় ভালোবাসলে।

চেয়েছিলাম তোমার সঙ্গে
বৃক্ষ–মাটির সম্পর্ক–
লেনদেনহীন গভীরতা,
দেখলাম তুমি শুধুই কষলে অঙ্ক।

চেয়েছিলাম তোমার সঙ্গে
সম্পর্ক সমতল–নদীর
সবুজ হল না দুই পাড়
স্বার্থের জলে ভাসালে দুই তীর।

অঙ্ক কষায় হবে যে আজ কাঁচা
শর্ত স্বার্থ ছলনা নেই যার–
তাকেই খুঁজছি সারাদিনরাত,
সে হবে আমার প্রেমের অংশীদার

স্বার্থ শুধু খুঁজি

স্বার্থ শুধু খুঁজি
মেয়ের কথা ফুলের কথা যাচ্ছি কেন ভুলে?
মায়ের কথা নদীর কথা যাচ্ছি বুঝি ভুলে।
দায়ের কথা সেবার কথা কথার কথা বুঝি?
লক্ষ্য আমার স্থির আছে ঠিক স্বার্থ শুধু খুঁজি
দেওয়া কথা রাখতে ভুলি বন্ধু তবু বলি,
অপছন্দের দৃশ্য দেখে চোখে বাঁধি ঠুলি।
মানবতা ফ্রাইং প্যানে সমব্যথা মুখে–
ব্যবসায়ী মন অর্থ খোঁজে মরুক না কেউ দুঃখে।
অহংকারের কলম আমার দুরন্ত তার গতি–
থামাবে কে থামাবে কে দেবে কে আজ যতি?
দিয়েছি পাশ কত শত তাইতো বুঝি মর্ম,
বেকারত্ব ভিক্ষা করে আমি পরি বর্ম।
অশ্রুজলের কারণ খুঁজতে নেই যে হাতে সময়,
অবাক করা ক্ষোভের বন্যা হল কখন উদয়?

গোলাপ কলি

গোলাপ কলি
গোলাপ বাগে গোলাপ কলি
নিহিত অশেষ সম্ভাবনা,
ফোটার আগে নষ্ট করলে-
আরজিকরের দুর্ঘটনা।

নষ্ট করল গোলাপ কলি
প্রস্ফুটনের আগেই যারা,
তাদের সম্ভাবনার পায়ে
মারছে কুড়ুল যেন তারা।

চোটের ফলে খোঁড়ায় তারা
সবাই তাদের ছোঁড়ে থুতু,
কয়েদখানা আদর করে
রাখছে সেথায় অগ্নিকেতু।

গোলাপ কলি ফুটল না গো
পাপড়ি মেলা হল না তার,
সম্ভাবনার হত্যাকারীর
গর্দান ধরুক সুবিচার।

ভবিষ্যতের গোলাপ ফুল
আলো করে থাক বাগিচায়,
মিষ্টি সুবাসে বাহারি রূপে
মত্ত বায়ু বইবে সেথায়।

যখন ডাকবে

যখন ডাকবে
যখন ডাকবে মুখের কথা মনের কথা এক করে আমি ঠিক চলে আসব তোমার কাছে।
এতে তুমি একা ভালো থাকবে নির্জন সবুজ প্রান্তরে।
তখন ঘাসের শিশির ভিজিয়ে দেবে ভাবাবেগের পায়ের পাতা,
রবির আলো মাখাবে গায়ে কাজের উদ্দীপনা।
গাছের পাতারা বাতাসের সুরে বাজাবে যে একতারা,
রাতের আকাশ আসবে নিকটে।
চাঁদ-তারাদের ভাষা পারবে বুঝতে,
যেদিকে তাকাবে খুঁজে পাবে কবিতার উপাদান।
তুমি কি তখন ঘুমোতে পারবে নিরুদ্বেগে
এই সমাজে জনসমুদ্রে?
বানভাসি মানুষের দুরবস্থা, আরজিকরের
দুর্ঘটনা তোমাকে তো ঘুমোতে দেবে না।
যারা আজ এখনো ঘুমোচ্ছে তারা যদি ওঠে জেগে,
অন্তর দিয়ে ডাকে আমায় তোমার মতন, সূর্য উদয় হবে পুব আকাশে সম্মিলিত শুভবোধের আলো ছড়িয়ে। থাকবে সমাজ সুস্থ।
আমি শুভবোধ।

মানবিক করে দাও

মানবিক করে দাও
ভগবান তুমি দুটো পা দিয়েছ–
সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে,
পেছনে পালাবার জন্যে কি?

ভগবান তুমি শিরদাঁড়া দিয়েছ–
সোজা রেখে হাঁটার জন্যে,
সরীসৃপের মতো হাঁটার জন্যে কি?

ভগবান তুমি হৃদয় দিয়েছ–
সংবেদনশীলতা রাখার জন্যে,
পাথর ভরে রাখার জন্যে কি?

ভগবান তুমি তো মন দিয়েছ–
জাগ্রত রাখার জন্যে, ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্যে নয়।

ভগবান তুমি তো চোখ দিয়েছ–
তোমার সৃষ্টিকে শুদ্ধ দৃষ্টিতে দেখতে,
মন্দ দৃষ্টিতে দেখার জন্যে নয়।

ভগবান তুমি তো মুখ দিয়েছ–
ঠিক সময়ে ঠিক কথা বলতে, কাউকে কটু কথা বলতে নয়।

ভগবান তুমি তো দুটো হাত দিয়েছ–
ভালো কাজের জন্যে, মন্দ কাজের জন্যে নয়।

চারদিকে এই নৃশংসতা রক্তপাত,
খুন–ধর্ষণ দেখিয়ে দিচ্ছে তোমার বানানো মনের কেন্দ্রীয় সফটওয়ার আপডেটেড হয়নি।

এবার তো আপডেট করে একটু মানবিক করে দাও

আমায় জড়িয়ে ধরো

আমায় জড়িয়ে ধরো
আমায় ভালবাসতে এগিয়ে আসে কজনে
আমার গুরুত্ব বোঝেন কত সুজনে?
যা ভালো ঘটেছে ঘটেছে আমার জন্য
যা মন্দ ঘটেছে ঘটেছে তোমার জন্য—
এই ভাবনা কি ভালোবাসা আনে
ভেজা দেশলাই কাঠি জ্বলে ঘর্ষণে?
শাসন ডান্ডা থাকলে আমায় নিয়ে চলতে,
না থাকলে আমার সঙ্গটা এড়িয়ে যে যেতে।
এড়িয়ে চলা এমন ব্যক্তি আছে পরিবারে সমাজে-
মুখের বুলি সর্বস্ব অনীহা সকল কাজে।
এমন অনীহা এসে জীবন কঠিন করে,
যেটা চাই সেটা যেন নীরবেতে দূরে সরে।
কত ফুল ঝরে যায় স্বপ্নের বাগ থেকে,
আমায় জড়িয়ে ধরো দায়িত্ব বলে ডেকে।