শব্দপ্রয়োগ

শব্দপ্রয়োগ

বুকে জমা কথা বলে
হালকা করে শব্দ,
প্রতিবাদের শব্দে আবার
সব শাসক কি জব্দ?

প্রেমের রাগের সুখের প্রকাশ-
শব্দ দরকার জানি,
দুঃখের কথা না বললে যে
মনের কষ্ট মানি।

রাজসভাতে নিস্তব্ধতায়
কুরুবংশের ধ্বংস,
অহংকারী মুখের ভাষায়
ধ্বংস হল কংস।

শব্দপ্রয়োগ সঠিক হলে
মন ছুঁয়ে যায় ভাষা,
উদ্দীপনা জীবন ভরে
জাগিয়ে রাখে আশা।

আশা জাগলে জীবন বাঁচে
বিবেক জাগলে মানব,
শব্দপ্রয়োগ বেঠিক হলে
জেগে ওঠে দানব।

অনুরোধ রেখো

অনুরোধ রেখো
সোনা রোদ্দুর অম্বর থেকে
মূল্যবোধটা একটু এনো,
তার অভাবেই অসার আচার
সারা দিনরাত মারছি ধেনো।

রুপোলি জোছনা চাঁদ থেকে এনো
শিশু কপালের সুশ্রী টিপ-
কপালে পরলে আমার ভেতরে
ঢোকে যেন এক শিশুর চিপ।

ওগো কালো মেঘ এনো ধারাপাত
মুছে যাবে যত কলুষ মনে,
মনের পশুটা ফিরে যাবে জানি
নিজের আবাসে গভীর বনে।

তারারা এবার পাহারায় বোসো
জেগে থাক শুধু প্রহরী আঁখি,
অশুভ শত্রু ঢুকতে না পায়
প্রেম-প্রীতি মনে বাঁধুক রাখি।

তোমরা আমার অনুরোধ রেখো
কালিমা যাক-না অন্য গ্রহে,
এই পৃথিবীতে ফিরে আসি যেন
বারে বারে তার প্রেমের মোহে।

সে-ঝড়

সে-ঝড়
৯ ই আগস্ট রাতে এক নৃশংস ঘটনা ঘটে এই শহরে,
প্রাণ-রক্ষা-করা হাসপাতালের হাত ধর্ষণ-খুনের রক্তে রাঙা।
তা দেখে সে-রাতে মানবতা-নৈতিকতা চোখে ফেট্টি বেঁধেছিল?
রাতের আঁধার আর বাতাস কি কেঁদেছিল?
জানি কেঁদেছিল সেই নির্যাতিতা,
কেঁদেছিল তার পরিবার।
স্তম্ভিত মহানগরী হারিয়েছিল ভাষা।
জানি সারা শহর নেমেছে পথে
তুমুল ঝড়ের সঙ্গী হতে,
সে-ঝড় এনেছে হরেক স্তরে প্রতিবাদ,
সে-ঝড় বুঝিয়ে দিয়েছে নারীরা কী কী পারে!
সে-ঝড় চিনিয়ে দিয়েছে কার চোখে সত্যিকারের জল, কার চোখে কুম্ভীরাশ্রু-
চিনিয়ে দিয়েছে কারা ঝড়ে ভয় পায়
কারা আছে নির্যাতিতার পাশে,
কারা ঝড়ে পড়া আম কুড়োয়!
আমার প্রার্থনা নির্যাতিতা সুবিচার পাক
মানবতা নৈতিকতা চোখের ফেট্টি খুলুক,
এ-শহর আবার সুন্দর হোক।

ভুলের দেয়াল

ভুলের দেয়াল

কাজের ডাকটা আসে যখন
সাড়া দেওয়াই কাজ,
হোক-না ভ্রান্তি প্রথম প্রথম
খুব স্বাভাবিক লাজ।

লজ্জা রঙে রঞ্জিত যে
কাজের প্রথম ধাপ,
প্রশিক্ষণে রং খোয়া যায়
চেনায় নিজের মাপ।

ধাপে ধাপে শেখার পাল্লা
বাড়ায় যখন ভার,
কাজের দখল আসে ধীরে
বিশ্বাস খোলে দ্বার।

আত্মবিশ্বাস বাইরে বেরোয়
ভুলের মাত্রা কম,
বিশ্লেষণে ভুলটা শেখায়
বক্ষ বাড়ায় দম।

বর্ধিত দম বুকের মাঝে
ঠিক পদক্ষেপ ধীর,
ভুলের দেয়াল টপকালে যে
সফলতার ক্ষীর।

উড়ছে অরাজক প্রহর

উড়ছে অরাজক প্রহর
আকাশে বাতাসে অস্থিরতা
উড়ছে অরাজক প্রহর,
অনুশাসন হারিয়ে গেছে
ফুঁসছে গ্রাম ফুঁসছে শহর।

ছাঁকার পরে মিথ্যে-ময়লা
অবশেষরূপে পড়ে থাকে,
সত্যবাদিতার মিহি দানা
মিশে গেছে নর্দমার পাঁকে।

বংশ বিস্তারে স্বার্থপরতা
আগাছাকে হারিয়ে দিয়েছে,
মনের উঠোনে সমব্যথা
বেদম হয়ে মরে গিয়েছে।

মুখ-মুখোশে যায় না চেনা
সত্য গোপন দারুণ কলা,
ভরসার হাতে মিথ্যা-ধুলো
চোরের মায়ের বড় গলা।

নির্বাসিত মনের বিশ্বাস
ফিরিয়ে এনেই প্রতিবাদ-
খুলতে পারে সত্যের দুর্গ
দিতেই পারে মুক্তির স্বাদ।

আমি ডুবসাঁতার

 

আমি ডুবসাঁতার

জলের ওপরে পৃথিবীর দৃষ্টি ধোঁকা খেল,
আমি এগিয়ে চলি জল ভেদ করে
একবুক নিশ্বাস ভরে,
সকলের চোখে বিস্ময়ের ধুলো ছুঁড়ে
উঠলাম দিঘির ওপারে।
বুক ভরা শ্বাস শুধু নয় আমি, আমি- আত্মবিশ্বাসের তেজ,
মাছের মতো কাটি সাঁতার নাড়িয়ে নাড়িয়ে লেজ।
ঝুঁকি নিয়ে অভিযানে আমার বড়ই নেশা-
জলের তল ও আমায় দেখায় যেন ঠিক দিশা।
লক্ষ্যে যখন যাই গো পৌঁছে সফল অভিযানটা,
ধোঁকা খাওয়া চোখগুলো যে মেটায় তাদের তেষ্টা।
আমি ডুবসাঁতার, আত্মবিশ্বাস রক্ত প্রবাহে- কারণ কুশলতার।

শ্রদ্ধা-ভক্তি-ভালোবাসা

শ্রদ্ধা-ভক্তি-ভালোবাসা
হিংসা ঘৃণা রক্তে মিশলে
শ্বাসপ্রশ্বাস ও দূষণ ছড়ায়,
বাতাসে তার মাত্রা বাড়ে
মানব দেহের রক্ত গড়ায়।

শ্রদ্ধা-ভক্তি-ভালোবাসা
রক্তে যদি একবার মেশে,
সকল দূষণ নির্বাসনে
সম্প্রীতির রাজ প্রতি দেশে।

ছাতার মতো শাসন হলে
রৌদ্র বৃষ্টির ভাঙে দন্ত,
ছাতার দণ্ড দম্ভ মাখলে
উদভ্রান্ত হয় সব সিদ্ধান্ত।

স্বার্থ নামক ছানি যদি
কবজা করে দেখার আঁখি,
বিচারবুদ্ধি যায় হারিয়ে
গায় না তখন পোষা পাখি।

হিংসা-ঘৃণা-দম্ভ-স্বার্থের
জারিজুরি করতে বিনাশ-
শ্রদ্ধা-ভক্তি-ভালোবাসা
হৃদয়েতে হোক-না প্রকাশ।

কর্তিত হবে ডানা

কর্তিত হবে ডানা
প্রখর রৌদ্রে শুকিয়ে যাওয়া
বাগিচায় নেই ফুল,
ঝরে গেছে তারা নেই কোনো বাস
নীরস মনের মূল।

মন খারাপের এই পরিবেশ
ছিন্ন করেছে তার,
হৃদয়ের বীণা বাজায় না গান
বন্ধ সুরের দ্বার।

জীবনের সুর হারায় যখন
আশার নদীতে চর-
সেখানে নিরাশা ধীরে ধীরে এসে
বানায় নিজের ঘর।

ভুলে যায় সব নদী ছিল সেথা
জনপদে ছিল আশা,
পাণ্ডবগণে কে পাঠাল বনে
কারা ওলটাল পাশা?

একদিন হবে যুদ্ধ ঘোষণা
পরিণাম কী তা জানা,
কৌরবদের বিনাশ হবেই
কর্তিত হবে ডানা

দৃষ্টির বিস্তার

দৃষ্টির বিস্তার
বললাম তোমাকে দৃষ্টির বিস্তার বাড়াতে
বাড়ালে সেই- কিন্তু নাবাচক দিকে,
সে-দৃষ্টি ভালো কিছু খুঁজে পায় না
খুঁজে আনে নর্দমার পাঁক।
পাঁক ঘাঁটতে ঘাঁটতে দুহাত সুদক্ষ,
দক্ষতায় অক্ষরেখা বদলালে তুমি –
কাজের প্রবাহ রাজপথ ছাড়ে
আর অন্ধগলির অন্ধকারে রাজ্য গড়ে।
সে-রাজ্যে ফুলের চাষ বন্ধ
ঘৃণার চাষে উদ্যম বেশি,
বাতাস বয়ে বেড়ায় দুর্গন্ধের বাষ্প।
আকাশে ঘুরে বেড়ায় কালো মেঘ
সে-মেঘ বৃষ্টি দেয় না-
মাঝে মাঝে ইস্পাত-বল্লম ছোঁড়ে,
শোনা যায় পাশব হুংকার।
কুচকুচে কালো মেঘ ভেদ করে
আলো ঢোকে না সে-রাজ্যে।
ঋতুচক্রের ঘুর্ণন বন্ধ
শরতের আগমন নেই
মায়ের পুজো হয় না,
আসুরিক শক্তি পুজো পায়।
এখনো সময় আছে দৃষ্টির অভিমুখ ঘোরাও
তোমার স্বাভাবিক অক্ষরেখায় ফিরে এসো,
দৃষ্টির বিস্তার বাড়াও প্রশস্ত রাজপথে। পথের দুদিকে ফুলের সৌন্দর্য থাক।

পাশে থাকা বন্ধু

পাশে থাকা বন্ধু
বন্ধু দিবস পালন করলে মান্যতা পায় মিত্র,
বন্ধু সফল দেখে বুকের পরশ্রীকাতর চিত্র?

মিত্রতাতে ভালোবাসা যদি কেন বা ঈর্ষা দূষণ?
সভ্যতার মোড়কে বন্ধুত্ব করছে কী অন্বেষণ?

শুদ্ধ বন্ধুত্বের অট্টালিকা গড়তে চাওয়া মানে-
শর্তহীন ভালোবাসা থাকে তারই ভিতের স্থানে।

মজবুত ভিতের ওপর স্থায়ী বিশুদ্ধ মিত্রতা,
দেয়ানেয়া সব স্বার্থহীন থাকে না কোন ক্ষুদ্রতা।

ঈর্ষা নামক ক্ষুদ্রতা ঢুকে কাটে বন্ধুর আশ্লেষ,
তারপরে শুধু পড়ে থাকে পরিচিতি অবশেষ।

প্রকৃত মিত্রতাতে স্বচ্ছতা রয় কাচের মতন,
নেই তবু ভঙ্গুরতা, নয় তা যে অচলায়তন।

যে বা যারা পরশ্রীকাতর আসল বন্ধু নয় গো তারা-
বিপৎকালে হারিয়ে যাবে নিমেষেতে পাড়াছাড়া।

ভিত গড়াও বন্ধু বাছাই হোক-না তাই সযত্নে,
সকল সময় পাশে থাকা বন্ধু আসুক জীবনে।