আমার জীবনমরণ

আমার জীবনমরণ
পাশে যদি থাকো তুমি
কেন পটু কাজে?
তোমার বলা কথায়
মনোবীণা বাজে।

কেন যে তোমার ছোঁয়া
শিহরণ তোলে,
চোখের দৃষ্টিতে সব
কেন যাই ভুলে?

তোমাকে দেখলে কেন
বাড়ে হার্টবিট,
মরা গাঙে বান আসে
তুমি কালপ্রিট?

ভ্রমর বসলে ফুলে
ভ্রম করে বসি-
তোমার দু-চোখ দেখি
কাকে আজ দুষি?

তোমার কৃষ্ণবর্ণের
চুলে আঁকা ঢেউ,
দৃষ্টিটা পিছলে যেতে
দেখেছ কি কেউ?

লাল গোলাপ তোমার
ঠোঁটে কেন রাখা?
এই আবহ আমার
বাড়ায় আকাঙ্খা।

তার আগে খেয়ে যায়
কিস সমীরণ,
বোঝো না তুমি আমার
জীবনমরণ?

স্মৃতির চেয়ারে

স্মৃতির চেয়ারে
বয়সের ভারে বাঁকা শিরদাঁড়া
ঝরা বকুলের গন্ধ শুঁকি,
বকুল গাছের তলায় বসলে
প্রেমময় স্মৃতি মারে উঁকি।

বয়সের ভারে বাঁকা দেহ তবু
বসি পরিত্যক্ত নদীঘাটে,
পাশে বসে স্মৃতি শিহরিত দেহ
গোধূলি অরুণ যায় পাটে।

যে–চেনা সাঁকোয় পরিচয় হল
নিকটে গেলে সে ডাকে বুঝি,
হারালে কোথায় কোন ধরা কোণে
ঘুরে ঘুরে তোমায় আজও খুঁজি।

অভিমানের রুমাল ধরে
ছুঁড়লে অভিযোগের বান,
হঠাৎ গেলে কোন দেশেতে
ত্যাগ করে এই অভিযান।

তাইতো এখন অভিমুখ
আমি বদল করেছি,
স্মৃতির চেয়ারে হেলান দিয়ে
কবিতা লিখতে বসেছি।

তছনছ করে দিক

তছনছ করে দিক
পৃথিবী জুড়ে একটা নিম্নচাপ সৃষ্টি হোক
আসুক প্রবল ঘূর্ণিঝড়-
তছনছ করে দিক অযত্নে গজিয়ে ওঠা
সব বেড়া সব ঘর মনের ভেতর।
ভেঙে যাক বেড়া অবাধে ঢুকুক স্নেহ–দয়া–মায়া,
সমূলে নিশ্চিহ্ন হোক অবাঞ্ছিত হিংসা–ঘৃণা–দ্বেষের আস্তানা।
প্রবল বর্ষণ হোক সিক্ত হোক মৃত্তিকার নীরস শরীর,
ভালবাসায় উর্বর হোক মনের পৃথিবী।
এমন উর্বর হোক শুষ্ক মরুতে থাক মরুদ্যানের আধিপত্য,
কঠিন পাহাড় গলে হোক ঝরনার জল,
গজিয়ে উঠুক সবুজ বনভূমি আর সবুজ জনপদ।
সকলের হৃদয় ভরুক ফুল আর ফলে ।

স্বপ্নেরা চিঠি পাঠায়

স্বপ্নেরা চিঠি পাঠায়
স্বপ্নেরা চিঠি পাঠায়
আকাশের ডাকঘরে,
কী বার্তা বহন করে
জানব কেমন করে।
মন-পাখি উড়ে যায়
খোঁজ নিতেই দুবেলা,
ডাকবাক্সের চাবিটা
মেঘ নিয়ে করে খেলা।
মেঘ তুই খেলিস না
দিয়ে দে-না চাবিখানা,
চিঠিগুলো না পেলেই
বিফল জীবনখানা।
দূরে থাকা ডাকবাক্সে
কী-এমন স্বপ্ন ভরা
না দেখলে উচাটন
আমার ধরায় খরা।
এবার তো পাখিটাকে
দিয়ে দে–না স্বপ্ন সব,
পৃথিবীতে আনা হোক
করুক ফল প্রসব।

জীবন জ্যান্ত

জীবন জ্যান্ত

পথিক আমি কাঁধে ঝুলি
হাঁটছি নিত্য গ্রন্থমেলায়,
ভালো পুস্তক পেলে ভরি
সঙ্গী আমার ভ্রমণ খেলায়।

এই পথিকের ক্লান্তি উধাও
পছন্দসই বইটা পেলে-
আদ্যপ্রান্ত পড়ার শেষে
পেটের খিদে উঠে জ্বলে।

যাত্রাপথের দুধারেতে
কতশত বই সজ্জিত,
আগ্রহী থাক চক্ষু আমার
পড়ে ফেলুক সব সৃজিত।

বৃক্ষ নদী পাহাড় মানুষ-
মেলে ধরা বইয়ের পাতা,
তথ্য জানার কায়দা জানলে
ভরে যাবে হাজার খাতা।

এই ভ্রমণে শেখার শিখা
দীপ্তি ছড়াক চতুর্দিকে-
সত্যিকারের জীবন জ্যান্ত,
শিরদাঁড়াটা সোজা রাখে।

আনন্দেতে সবাই ভাসুক

আনন্দেতে সবাই ভাসুক

শিশিরধৌত মন এনো গো
সাথে এনো ভালবাসা,
দ্রাক্ষালতার প্রেমে সরাও
দেওয়ালের নিরাশা।

নম্র রোদের পরশ এনো
শীতে কাঁপা শিশু–বুকে,
সমবেত গীত এনো আজ
সব মানুষের মুখে।

সাথে এনো হাতকড়ি
মৈত্রী যার উপাদান,
দাও পরিয়ে সকল হাতে
লেখো প্রেম–উপাখ্যান।

তোমার সুখে আমার সুখ
সকলকে দাও ভাগ,
আনন্দেতে সবাই ভাসুক
নেই কোনো শ্রেণীভাগ।

শ্রেণীভাগের প্রাচীর ভেঙে
বিপন্নের হাত হাতে,
মানবশৃঙ্খল গড়ে দিয়ো
বলো আছি একসাথে।

মন সুনীল আকাশ

মন সুনীল আকাশ
ষড়যন্ত্রের সাক্ষর করা ইটগুলো বলে
চাই না বেঁচে থাকতে বুকে কালি নিয়ে,
ভেঙে দাও মনের এই দালানকোঠা।

বাইরের সৌন্দর্য চাই না আমাদের,
চাই ভেতরে নদীর মিষ্টি জলধারা-
ভালোবাসা বয়ে যাবে সাগরের দিকে।

চাই অন্তরে প্রেরণা থাক আকাশের মতো,
চাই সেখানে উড়ুক স্বপ্ন-পাখি
উড়াল দিক পাখনা মেলে নিরাশাকে ফেলে।

তাই এই দালানকোঠা ভেঙে দাও,
নতুন করে গড়ে তোলো নতুন ইট দিয়ে-
মাখানো থাকবে শান্তি, ভালোবাসা
দয়া-মায়া আর সদর্থক শব্দ এবং উপলব্ধির নির্যাস।
তারপরে ।

সমস্বরে বলব

সমস্বরে বলব

আর কত যুদ্ধ-লড়াই-বিবাদ
আর কত ক্ষমতার দম্ভ প্রদর্শন,
আর কত রক্তপাত খুনজখম ধর্ষণ
আর কত হবে নারী নির্যাতন
আর কত চেতনার অবক্ষয়?
দেখতে দেখতে দৃষ্টি কমজোরি
শুনতে শুনতে কানে বধিরতা,
আঘাত আঘাতে হাতে-কলমে কম্পন-
লিখতে অক্ষম তাই বিশেষ শব্দগুচ্ছ,
স্নায়ুরা দুর্বল তাই স্বরযন্ত্র বলতে পারে কই সেই শব্দগুচ্ছ?

আমার সবার মন আজ উৎকর্ণ সেই বিশেষ শব্দগুচ্ছ শুনতে,
দেহের প্রতিটি লোমকূপ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের শিরা-উপশিরা
আজ জেগে আছে সেই বিশেষ শব্দগুচ্ছ শুনতে,
সেটি হল ‘এই পৃথিবী কত সুন্দর’।

কবে দেখব, শুনব, লিখব, সমস্বরে বলব
‘এই পৃথিবী কত সুন্দর’?

ভালবাসবে কি না

ভালবাসবে কি না

তোমায় নিয়ে সুখে-আনন্দে ভালোবাসায় থাকব বলে,
তোমার মনের বাগিচায় ফুলগাছের গোড়ায়
কত-না দিয়েছি সার আর জল।
তবু পারিনি ফোটাতে তোমার আবেগের ফুল।

তোমার জন্য আমার নদীপাড়ে বানিয়েছি ঘাট–
তুমি এসে এখন ও বসলে না।
অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছি,
তোমার মনের নাগাল পেলাম তবু কই?

তুমি তো জানো আনন্দ যেন পাহাড়ি বাংলোর ছাদ
নরম রোদ মাখতে চায়,
হঠাৎ তখন বিষাদের মেঘ এসে বাধা দেয়।

তুমি তো জানো সুখ যেন পদ্মপাতায় জলের ফোঁটা-স্ফটিক
যে আকাশটাকে ধরে রাখতে জানে –
নিমেষে দুঃখের ঢেউ এসে তবু ফেলে দেয়।

তুমি তো জানো ভালোবাসা যেন জিওল মাছ,
জলে রাখলে বেঁচে থাকবে।
তুমি জানো ভালোবাসার জলে বিষাদ দুঃখ দ্রবীভূত হয়,
নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে।

এখন ঠিক করে নাও আমায় ভালবাসবে কি না,
দুজনের পৃথিবীটাকে সুন্দর করে তুলবে কি না।

একমুঠো আলো

একমুঠো আলো
যতই শহর আলো ঝলমল
মনের গতিটা যায় থেমে,
অস্থিরতার পরিবেশ দেখে
তার শরীরটা যায় ঘেমে।

এই পরিবেশ এমন আলোয়
এই যাত্রার নেই মানে,
অবক্ষয়ের আকর্ষণটা
নব উদ্যমে যেন টানে।

সেই উদ্যমে ছেদ দিতে পারে
একমুঠো আলো পবিত্র-
দেখিয়ে দেবেই আলোর পথটা
আঁধার হারাবে চরিত্র।

ঘন আঁধারকে হত্যা করতে
অস্ত্র শানায় প্রতিবাদ,
ধ্বনিত হোক-না আকাশে বাতাসে
শুভ চেতনার অনুবাদ।

এই ধ্বনি শুনে সব অন্যায়
নির্বাসনের ধরবেই পথ,
একমুঠো আলো আসে ওই দেখো
চেপে ন্যায়ের আলো-রথ।