আর জঙ্গলে যাব না

আর জঙ্গলে যাব না

এমন জঘন্য ঘৃণ্য নৃশংসতা দেখে
ভেবেছিলাম জঙ্গলে যাব,
এ-নগর ছেড়ে বহু দূরে-
যেখানে এমন মানুষের বেশে শয়তান থাকবে না।

ভেবেছিলাম এ-নগরের পথেঘাটে
নির্ভয়ে হেঁটে বেড়াব,
এত কপটতার দূষণে হাঁটা হল কই?
তাই জঙ্গলে যাব-
সেখানে এমন কপটতা থাকবে না।

এখানে নিঃস্বার্থ সেবার আড়ালে
হিংস্র দুর্নীতি মুখোশ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে-
জঙ্গলে গেলে এসব দেখতে হবে না,
পশুরাতো মুখোশ পরে না।

এই নগরের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ
যা ঘটে চলেছে অলিতে গলিতে রাজপথে-
খুলে দিয়েছে আমার চোখ।
দেখছি তাই মানবিক মুখ- মুখোশ নয়,
সত্যের আলোর পথ- সত্যের বেচা-কেনা নয়।
দেখছি এখানে তিলোত্তমাদের শক্তি কত,
নাগরিকদের মাথাগুলো শক্ত করে ধরেই রেখেছে শিরদাঁড়া- বিক্রি হয়নি।

তাই ভাবছি আর জঙ্গলে যাব না,
বাকি জীবনটা এই বাংলায় কাটিয়ে দেব।

হও হুঁশিয়ার

হও হুঁশিয়ার
মূল্যবোধের কৌটো যদি ভরা থাকে,
বিপদ-বেড়াল দৌড়ে আসে নিকটে।
কৌটো শুঁকে আঁচড়ানোটা তারই কাজ-
বুঝে গেছে কারণটা যে
মূল্যবোধই ছোঁড়ে গোলা- প্রতিবাদ।

সবার কৌটো বন্ধ ছিল
শান্তিপ্রিয় মনটা ছিল,
ছোট ছোট অন্যায় দেখে নীরবতা
বানায় তাদের সরীসৃপ।
বুকে হাঁটা সমাজ দেখে
অসুর বাড়ায় বাহুর পেশি,
অহংকারী অসুর চলে বুক ফুলিয়ে।

নির্ভয়ার এক শক্তি ছিল,
একই সঙ্গে খুলে দিল সব কৌটো-
সম্মিলিত মূল্যবোধ যে আকাশ ছোঁয়,
মানুষ যেন খুঁজে পেল শিরদাঁড়াটা।
হও হুঁশিয়ার অসুরব্যাটা।

কেন টানলে সীমা

কেন টানলে সীমা
আগের মতো বাসলে ভালো
এমন ক্ষতি হয়?
শাসন করা সময় এসে
দেখাল বুঝি ভয়।

উঠত ফুটে ফুলের কলি-
হাসি তোমার মুখে,
দেখে আমার ভরত মন-
দিন কাটত সুখে।

আগে তোমার সৃজন দেখে
অবাক হত আঁখি,
আজ অচল শিল্পী হাত
মরল নদী দেখি।

নদীর বুকে বালুকা রাশি
তপ্ত রোদে কাঁদে,
এখন যত ভালোবাসাই-
বন্দি বুঝি ফাঁদে।

আগে যখন বাসতে ভালো-
দৃষ্টি যেন ক্ষমা,
আজ তোমার নাগাল পেতে
কেন টানলে সীমা?

গণ্ডি মানে দূরেই ঠেলা-
মানে তোমার জানা,
আমার দেশ ছেড়ে কোথায়
যাচ্ছ মেলে ডানা?

সাতে-পাঁচে থাকিনা

সাতে-পাঁচে থাকিনা
নদীর তীরে বসে খোঁজো আজ শান্তি?
অসুরের দাপটে শহরে অশান্তি।

কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে লেখো কবিতা?
দেশের কোণে কোণে নারী নির্যাতিতা।

বিপন্ন নয় গো পরিবারের কেউ,
সাগর পাঠাবে না তোমার তটে ঢেউ?

নির্যাতিতারই পাশে দাঁড়ানো চাই
এই মনোভাব কি তোমার মনে পাই?

কাঞ্চনজঙ্ঘা নদী তোমায় টানে
নির্যাতিতা মরে হিংস্র উজানে।

সাতে-পাঁচে থাকিনা ভাবখানা যাক-না
তিলোত্তমারা কি সুবিচার পাবে না?

কেমন করে

কেমন করে
কেমন করে বদলে দিলে
আমার, সবার দেখার চোখ-
কেমন করে টানলে কাছে
জনগণের মানসলোক?

কেমন করে মানচিত্রটা
নতুন রঙে রাঙালে,
ঘুমন্ত সব জনপদকে
কেমন করে জাগালে?

কেমন করে ওঠালে ঢেউ
শুকনো মরা নদীতে?
জনজোয়ার আছড়ে পড়ছে
হরেক গলি-রাজপথে।

কেমন করে ঐক্যের মালা
গাঁথলে তুমি মরণে?
মানবতার মিছিল চলে
তোমার স্মৃতির স্মরণে।

অজুহাতের দেয়াল তুলে
ছড়ায় যারা বিভ্রান্তি-
লক্ষ্যে অচল মিছিল বুঝি
তাদের শিরে সংক্রান্তি?

কথায় কাজে ফারাক যেন
দেয় চিনিয়ে ধূর্তামি,
তোমার জন্যে প্রতিবাদ আজ,
শাস্তি পাবেই আসামি।

তুমি গেলে কোনখানে

তুমি গেলে কোনখানে
কালো মেঘের সাজসজ্জায়
বিদ্যুৎ চালায় তীক্ষ্ম ছুরি,
ওপর থেকে আশার বৃষ্টি
খেলছ এখন লুকোচুরি?

তোমার জন্য প্রার্থনা আজ
অলিগলি আর রাজপথে,
চোখের দৃষ্টি শুকিয়ে গেল-
আসবে কখন কোন রথে?

বৃষ্টি তুমি পাচ্ছ না দেখতে
হৃদয়-মরুর হাহাকার,
ব্যস্ততা দেখাচ্ছ কর্মকাণ্ডে-
নেই আন্তরিক অঙ্গীকার?

মরুভূমির তপ্ত বালুকা
তাকিয়ে রয় আকাশ পানে,
বিচার-তেষ্টা মেটাবে কবে
বৃষ্টি তুমি গেলে কোনখানে?

বালুকণার হৃদয় জুড়ে
অভয়ার কাতর প্রার্থনা,
বিচার-বৃষ্টি সেই প্রার্থনা
পূরণ করতে কি পারো না?

যদি না আস অচিরে তুমি
মরুঝড় দেখাবে কামাল,
বাকি সবুজ বাঁচবে না গো
শক্ত হবে দেওয়া সামাল।