খাতার সন্ধান চলছে

খাতার সন্ধান চলছে
ছলনার ছায়াতে কালের পিঠে চেপে
কত-না অভিনয় দেখালে,
মোহ আর মায়ায় বুঝতে পারিনি তা
ছিলে যে পর্দার আড়ালে।

মুখ থেকে বেরোনো মধুমাখা কথারা
হৃদয়ের বচন ছিল না,
অন্যায় বায়না মেটাতে ছুটে গেছি
সিঙ্গাপুর থেকে চায়না।

তোমার প্রয়োজনে এসেছিলে নিকটে
এখন তো পেরেছি বুঝতে,
দানা খাওয়া শেষে উড়ে গেলে কোথায়
আরেক আবাস খুঁজতে?

তুমি আমার কাছে ছিলে তৃষার বারি
খোলা বারান্দার আলোক,
তোমার বদলানো নিমেষে ভেঙে দিল
আমার নিজস্ব ভূলোক।

কাড়লে অন্তর আর স্বপ্ন-খাতা
খাতার সন্ধান চলছে
কোথায় সেই খাতা? খুজতে খুঁজতেই
স্মৃতির পাহাড়ও গলছে।

স্মৃতির বিষণ্ণ দালান

স্মৃতির বিষন্ন দালান
আমি যখন ভালো ছিলাম তোমার চোখে
তুমি যখন ভালো ছিলে আমার চোখে,
উষ্ণ আশ্লেস ফুটিয়ে দিত হৃদয় কলি,
পদ্মের সুবাস ভরাত যে মনের অলিগলি।

তখন একটু ভরসা দিলে
বুকটা যেন উঠত ফুলে,
সাহস নিয়ে ব্রহ্মপুত্র সাঁতার দিয়ে পেরিয়ে যেতাম,
তোমার জন্য মন্দির থেকে পুষ্প এনে দিতাম।

নদীর জলে সময় কখন গেল ভেসে-
কী এক ইঙ্গিত দিয়ে গেল হেসে,
কালের হাওয়ায় কাঁপছে প্রদীপ শিখা-
সম্পর্ক আজ গৌণ হল মুখ্য আকাঙ্ক্ষা।
এবার বুঝি আঁধারের হাত ধরছে চেপে গলা,
তোমার দৃষ্টি নির্বিকার আমার অবহেলা।
তাই হৃদয় পদ্ম শুকিয়ে হল ম্লান-
শুকনো মুখে দন্ডায়মান স্মৃতির বিষণ্ণ দালান

তুই কি আমার বন্ধু হবি

তুই কি আমার বন্ধু হবি
তুই কি আমার বন্ধু হবি?
সিন্দুকে যা আছে আমার
তোকে যে সব দিতেই পারি।
সব আছে নেই অর্থ সম্পদ,
তবুও কি তুই বন্ধু হবি?
তবে গর্ব করে বলতে পারি-
আছে সুখ নামের মুহূর্ত
দুঃখ নামের শিক্ষা,
ইচ্ছে নামক ডানা
কল্পনা নামের পাখি,
স্বপ্নময় নক্ষত্রপুঞ্জ
ভালোবাসা নামক আকাশ,
আর মানবতা-চাষের জমি।
আয়-না তুই হাতটা ধর-
যা আছে সব ভাগ করে নিই
দুহাত ধরে যাই এগিয়ে
শিরদাঁড়াটা সোজা রেখে,
লক্ষ্যের দিকে চোখ রেখে।
দেখ-না বন্ধু পৃথিবীটা
আবার হবে সুন্দর।

কার কপালে অমৃত

কার কপালে অমৃত
কী দিনকাল এল-
চোরেরা শেখাচ্ছে নীতি
পুলিশ দিচ্ছে চোরকে প্রশ্রয়!
চোর পুলিশের খেলা এখন চলছে অহরহ-
কোনো ময়দান খালি নেই।
চলছে চোর পুলিশের খেলা-
তাদের খেলা দেখে চমকে গেছে কলকাতা ময়দান।
খেলা দেখে মনে হচ্ছে দুজনেই জিতবে – এটি নিতান্ত রেফারির বক্তব্য।
কী দিনকাল এল-
সকল রাস্তা গিলে ফেলেছে জনসমুদ্র!
অসুর আর দেবতারা শুরু করেছে
সেই সমুদ্রমন্থন-
মন্থনের দড়ি এসেছে আরজি কর থেকে।
এই মন্থনে অমৃত উঠে আসবে?
এই যুগে কার কপালে অমৃত,
অসুরের না সুরের?

এসো তুমি ন্যায়

এসো তুমি ন্যায়
কলেজ ছেড়েছি কবে
প্রিয় বন্ধুর ঠিকানা রয়েছে কাছে,
তবু তাকে খুঁজে পাচ্ছি না।
বাকি সব বন্ধুদেরও আমার মতই অবস্থা।
আন্তরিকতার অভাব আমার, সবার?
বন্ধুটি কি ইচ্ছে করে সামনে আসছে না, না অন্য কিছু?
বর্তমান পরিস্থিতির চাপে পড়ে
হয়তো লুকিয়ে কোথাও বসে আছে,
লজ্জা না ভয় পেয়েছে?
ভাবছি এই এল বুঝি বন্ধুর ফোন।
মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে,
ফোন বাজলে দৌড়ে যাচ্ছি ফোন ধরতে-
দেখি অন্য কেউ।
তোমার জন্য আসন পেতে রেখেছি
অনেক প্রতীক্ষা করেছি,
এবার তো এসো তুমি ন্যায়

আলাদিনের প্রদীপ

আলাদিনের প্রদীপ
হোঁচট খেয়ে পতন হলে
দিয়ো বাড়িয়ে হাত,
চাই না ছোঁড়া প্রদান, চাই
স্নেহ মাখানো ভাত।

গাড়ির লোভ দেখিয়ো না গো
পারলে পাশে হাঁটো,
হাতটা ধরে শর্তহীন
খুশি শুধুই বাঁটো।

স্বার্থ-লোভ বুকেই রেখে
মিত্র হতে এলে-
সম্পর্ক ঘরের কোণে
কাঁদবে দুপা মেলে।

বিপদ এলে দূরেই থাকো
পাশে থাকা কি মানা?
অভিসন্ধি মন্দ হলে
বোঝে কুকুর ছানা।

কুকুর ছানা প্রভুভক্ত
মানটা দিতে শেখো,
আলাদিনের প্রদীপ হবে
হুকুম করে দেখো।

আমার চোখ-কান খোলা

আমার চোখ-কান খোলা
তুমি ইচ্ছে করে তোমার লেখায়
রেখেছ বানান ভুল,
ইচ্ছে করে সঠিক স্থানে দাওনি যথা যতিচিহ্ন।
ভেবেছিলে তোমার ভাবের
হদিস পাবে না কেউ,
ভেবেছিলে জীবন পাতায়
লেখাগুলো থাকবে দুর্বোধ্য।
জানতে তুমি আমি কোনো-রকমে-পাশ-করা ছাত্র,
অপরের ক্লাস নোটস পড়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতাম।
জানতে না ভিন্ন ভিন্ন হাতের লেখা পড়তে ছিলাম পটু,
ভেবেছিলে তোমার মুখের ভাষা পারব না পড়তে-
সেটাই তোমার জীবনের মস্ত ভুল।
শোধরানো কখনও যাবে না।
ভুলে গিয়েছ আমার চোখ-কান খোলা

বেহুলাদের খুঁজে বেড়াচ্ছি

বেহুলাদের খুঁজে বেড়াচ্ছি
তোমাকে তো পাহাড় ভেবেছিলাম-
ঝড়-বৃষ্টি-তুফানের হাত থেকে বাঁচাবে ভেবেছিলাম, ভুল করেছিলাম?
চেয়েছিলাম তুমি আমাদের আকাশ হবে-
সেখানে আমরা মুক্তির আস্বাদ পাব।
তুমি তো দিলে না জোছনার চাঁদ শুকতারা
দিলে না তো স্বপ্নের নক্ষত্রপুঞ্জ।
দিলে শুধু গ্রীষ্মের প্রখর খরা-
আমরা গাছপালারা শুকিয়ে গেলাম।
ভুল কিছু কি চেয়েছিলাম?
দক্ষ মাঝি ভেবে তোমার নৌকোয় উঠে বসি,
ভেবেছিলাম খরস্রোতেও সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।
আবিষ্কার করলাম গন্তব্যটা যেন কত দূরে।
মাঝি ভেবে ভুল কি করেছিলাম?
ভেবেছিলাম আরও, তোমার সদিচ্ছা প্রত্যেকের জন্যে বানিয়ে দেবে সুন্দর ঘর-
যার দেওয়ালে ছিদ্র থাকবে না,
কালনাগিনি ঢুকতে পারবে না।
তবু উলটো ঘটনা ঘটেছিল।

এখন বেহুলাদের খুঁজে বেড়াচ্ছি

আসবে কবে

আসবে কবে
গঙ্গার সব ঢেউ
গোনা আজ শেষ,
আকাশের সব তারা
হয়ে গেছে গোনা।
পথের দূষণ শহরে আজ
হয়ে গেছে মাপা,
স্ট্রীট লাইটের লাক্স
করেছে চোখ অনুভব।
শহরের সব মোড়ও
হয়ে গেছে ঘোরা,
কর্মস্থলে কাজের ধারা
হয়ে গেছে জানা।
কোনটা মুখ আর কোনটা মুখোশ
হয়ে গেছে চেনা,
ধৈর্য নামক মোমবাতিটা জ্বলে জ্বলে
হয়ে গেছে শেষ,
রাতের পর রাত তা দেখে আজ
হয়ে গেছে নিস্প্রভ।
এলে না আজ তবু তুমি-
কোথায় গেলে বিচার?

আসবে কবে সেজেগুজে?

স্বার্থ দেয় পাহারা

স্বার্থ দেয় পাহারা
সব আনন্দের টুটি টিপে
হত্যা করেছে সময়,
নেই কাব্য নেই প্রেম-স্নেহ
স্বার্থ শুধু কথা কয়।

মিষ্টি কথা আচরণ যেন
লুকায় স্বার্থের দাঁত,
লক্ষ্য পূরণ হলেই যেন
চেনায় আসল জাত।

যখন স্বার্থ দেয় পাহারা
চিন্তাধারাটা সংকীর্ণ,
মানবতার মাপকাঠিতে
হয় না কাজ উত্তীর্ণ।

পাহারা সেখানে এত কড়া
প্রেম-স্নেহ ঢোকে নাতো,
অপুষ্টিতে ঝরে যায় শুভ
ভাবনার কলি যত।

ঝরে-যাওয়া কলিতে শুধু
ভুল সিদ্ধান্তের গন্ধ,
সে-গন্ধে আশার নাক জ্বলে
হতাশা ছড়ায় ধন্দ।

ধন্দ-ধুলো উড়িয়ে দিতেই
আসছে বোধের ঝড়,
ভাঙ্গুক-না তা জঞ্জাল ভরা
আমিত্ব নামক গড়।

আসছে দেখো নির্মল বায়ু
প্রেম-স্নেহ নিয়ে সাথে,
স্বার্থ ঝাঁপায় নদীর জলে
সম্পর্ক যে মালা গাঁথে।